২৩ অক্টোবর ২০২৫

মাদকের বড় চালান-অস্ত্রসহ আটক ৪

কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার রঙ্গীখালির গহীন পাহাড় ও বড় হাবিবপাড়া এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে মাদকের বড় চালানসহ ৪ জনকে আটক করেছে র‍্যাব। এসময় ৩ লাখ ১৪ হাজার পিস ইয়াবা, দু’কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস), দুটি ওয়ান শুটার গান, ৪ রাউন্ড কার্তুজ এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে।

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) ভোররাতে পৃথক এ অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী।

আটককৃতরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ওয়াব্রাং সুইচপাড়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে রফিক আহাম্মেদ প্রকাশ বার্মাইয়া রফিক (৪০) তার একান্ত সহযোগী একই ইউনিয়নের মৌলভী বাজার এলাকার নুর আলমের ছেলে ফরিদ আলম (২৮) এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড -বড় হাবিবপাড়ার মৃত অলিচাঁনের দুই ছেলে সৈয়দুর রহমান (৪৯) ও আজিজুর রহমান (৪৪)।

এ নিয়ে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন জানান, গোপন সংবাদে খবর আসে টেকনাফের হ্নীলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বার্মাইয়া রফিকের মাদক সিন্ডিকেট পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে বড় একটি মাদকের চালান ঢুকে রঙ্গীখালীর গহীন পাহাড়ী আস্তানায় জড়ো করা হয়েছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল ওই স্থানে অভিযান চালায়।

র‌্যাবের অভিযানের বিষয়টি বুঝতে পেরে মাদক চোরাকারবারীরা দিক-বিদিক দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ইয়াবার গডফাদার নবী হোসেনের সহযোগী রফিক আহাম্মেদ প্রকাশ বার্মাইয়া রফিক এবং তার একান্ত সহযোগী ফরিদ আলমকে আটক করতে সক্ষম হয়। সেখান থেকে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত অবস্থা থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার পিস ইয়াবা, দু’কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, দুটি ওয়ান শুটার গান এবং চার রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা সমন্বিতভাবে মিয়ানমার থেকে মাদক চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, বার্মাইয়া রফিক ছোটবেলায় তার বাবা-মায়ের সাথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর টেকনাফের হ্নীলার ৩নং ওয়ার্ডের ওয়াব্রাং সুইচপাড়া এলাকায় বাস শুরু করে। প্রথমে নাফনদীতে মাছ ধরে এবং এর আড়ালে স্থানীয় ও মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে মাদক ব্যবসার ভয়ংকর একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। তার চাহিদা মতো মাদক ব্যবসায়ীরা চালান প্রথমে নবী হোসেনের মাধ্যমে নাফনদী পার করে দেয় এবং সেখান থেকে রফিক তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাছ ধরার বোটে করে বাংলাদেশে এনে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে তাদের আস্তানায় মজুদ করে। পরে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নির্ধারিত এজেন্টদের কাছে সুবিধাজনক সময়ে সরবরাহ করতো।

মাদকের টাকা লেনদেনের বিষয়ে রফিক জানায়, তার নেতৃত্বে সিকদারপাড়া এলাকার আইয়াজ এবং নাকফুরা এলাকার সলিম ও জুনায়েদের কাছে মাদকের দিয়ে রফিক তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করতো। মাদকের টাকা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয়কর্মীদের মাধ্যমে টেকনাফস্থ কতিপয় হুন্ডী ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠানো হতো। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা টেকনাফস্থ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ’র বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করতো সেই টাকা। পরবর্তীতে এই টাকা ডলারে রুপান্তর করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার’সহ বিভিন্ন দেশে প্রেরণ হতো- যা পরে বিভিন্ন হাত বদল হয়ে মিয়ানমারের মাদক ব্যাবসায়ীদের হাতে পৌঁছাতো।

বার্মাইয়া রফিক মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাদক আনা কারবারিদের যোগাযোগ স্থাপন ও মূল সমন্বয়কারী হিসেবেও ভূমিকা পালন করতো। রেকর্ডপত্র যাচাই করে তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদকসহ ৩টি মামলা রয়েছে।

অপরদিকে, একইদিনে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজারের টেকনাফের সদর ইউনিয়নের হাবিবপাড়া এলাকার জনৈক সৈয়দুর রহমানের বসত ঘরে মাদক মজুদের খবরে অভিযান চালানো হয়। র‌্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে কৌশলে পালানোর চেষ্টাকালে সৈয়দুর রহমান (৪৯) এবং আজিজুর রহমান (৪৪)কে আটক করা হয়। পরে, তাদের বসত ঘর তল্লাশী করে ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তিন সহোদর দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পথে মিয়ানমার থেকে মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে এনে বিক্রি করছে। কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ফেনসিডিল সংগ্রহপূর্বক নদী পথে মহেশখালী হয়ে টেকনাফ নিয়ে আসে। এখান থেকে জেলা বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ এবং মিয়ানমারেও পাচার করতো। গোয়েন্দা তথ্যে তাদের আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব।

উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, আইস, ফেনসিডিল এবং আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা করে সোপর্দ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন