৩০ অক্টোবর ২০২৫

সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে জাহাজের সিটে বসা নিয়ে যাত্রীদের মারামারি

পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি বার আউলিয়া ও এলসিটি কাজল সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রিবহন করেছে। ফলে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাটে যাবার পথে অতিরিক্ত যাত্রীদের সিটে বসা নিয়ে যাত্রীদের মাঝে দফায় দফায় মারামারি ঘটনা ঘটেছে।

রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ৩টার দিকে এমভি বার আউলিয়া ও এলসিটি কাজল সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার পর জাহাজের ভেতর এ ঘটনা ঘটেছে। এ পথে চলাচলরত অপর জাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকায় সেই জাহাজের যাত্রী আনতে গিয়ে এ পরিস্থিতি ঘটে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

এমভি বার আউলিয়ার যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম জানান, এমভি বার আউলিয়াতে ১২০০ জন ধারণ ক্ষমতা থাকলেও এতে তোলা হয় দু’হাজারের অধিক যাত্রী। ফলে শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু বসার সিট না পেয়ে নিচের ফ্লোর ও চলাচলের সিঁড়িতে, জাহাজের বিভিন্ন সাইটে দাঁড়িয়ে ছিলো। যে যেখানে জায়গা পায় সেখানে বসে পড়ে। জাহাজের কোন অংশই খালি ছিলনা। অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। কিন্তু তাদের দাঁড়ানো ছাড়া কোন উপায়ও ছিল না। যাত্রীরা কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট সিটের টিকিট কেনার পরও জাহাজে গিয়ে তারা সিটে বসতে পারেনি। তাদের কেনা সিটে বসে আসেন অন্য যাত্রী।

অপরযাত্রী আরিফুল ইসলাম জানান, অনেক যাত্রী জাহাজে ওঠার পর বসার ব্যবস্থা করতে জাহাজে টাকা দিয়ে প্লাস্টিকের চেয়ার আনিয়েছে। প্লাস্টিকের চেয়ার গুলোতে বসতে ২০০-৩০০ টাকা করে নিয়েছে জাহাজের কর্মীরা। জাহাজের একটি সিট দু’জনের মাঝে বিক্রি হওয়ায় সিটে বসা নিয়ে জাহাজের যাত্রীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। পর্যটকরা একটু দাঁড়িয়ে ছবি তুলবে বা হাটাহাটি করবে সে সুযোগও পায়নি।

যাত্রী মুমিন সাহরিয়ার বলেন, শনিবার এমভী বার আউলিয়া করে সেন্টমার্টিন যাই। রবিবারে টেকনাফে ফেরার জন্য বিজনেস ক্লাসের তিনটি টিকিট কেনা হয়। কিন্তু জাহাজের ভেতর প্রবেশ করে দেখি আমার সিটে অন্য লোক বসা। এ সিট তিনটি আমাদের কেনা বলার পর তারা জানায়, সিটগুলোর বিপরীতে তারাও টিকেট কেটেছে। এ নিয়ে ওই যাত্রীরা আমাদের উপর চড়াও হয়। এপর্যায়ে ৪-৫ জন মিলে আমাকে আঘাত করে। এ ঘটনায় জাহাজ কতৃপক্ষের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারি এগিয়ে আসেনি। আধা ঘন্টা তাদের রোষানলে পড়েছিলাম। এভাবে হয়রানি’র শিকার হলে পর্যটকরা পরবর্তী সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া বন্ধ করবেন।

এল সি টি কাজলের যাত্রী হামিদুর রহমান বলেন, জাহাজ কর্তৃপক্ষ আমার কাছ থেকে টিকিটের টাকা নেয়ার পরও সিটে বসতে দেয়নি। এ নিয়ে অভিযোগ করার পরও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরে একই সিটের ডাবল যাত্রী হওয়ায় আমাদের মাঝে বাকবিতন্ডা লাগে। জাহাজের কর্মীরা জাহাজের ভেতর প্লাস্টিকের চেয়ারগুলো বসার জন্য বিক্রি করেছে। জাহাজে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়াতে আমরা এমন নাজেহাল পরিস্থির মধ্যে পড়েছি। জাহাজের কোন অংশ খালি ছিলনা। একটু দাঁড়ানো বা বসার জায়গাও পাইনি। প্রায় আড়াইঘন্টা সময় জাহাজে যে কষ্ট সহ্য করতে হলো তা বলার মতো নয়।

এমভি বার আউলিয়ার পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, কর্ণফুলি জাহাজটি যান্ত্রিক সম্যসায় পড়ায় সেন্টমার্টিন যেতে পারেনি। তাই দ্বীপে থাকা পর্যটকদের বার আউলিয়া জাহাজে করে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে, সিটে বসা নিয়ে ঝগড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কল রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, প্রশাসনের কাছে এখনো খবর আসেনি। অন্য জাহাজের যাত্রি আরেক জাহাজে নিয়ে আসলে কর্তৃপক্ষেরই তা সমন্বয় করার কথা। আর অতিরিক্ত যাত্রীতো বহন মোটেও উচিত নয়। আমরা খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন