সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যহত করতে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন দেয়ার অপচেষ্টা করেছিল বিএনপি। কিন্তু স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় তাদের সে অপচেষ্টা সফল হয়নি। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এরআগে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের একটি আবাসিক ভবন থেকে মন্দিরে আগুন লাগানোর ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ রামু উপজেলা বিএনপির নেতা আব্দুল ইয়াসির শাহজাহানকে আটক করা হয়। তাকে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
গ্রেফতারকৃত শাহজাহান রামুর ফতেকাখুল ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল করিম সওদাগরের ছেলে। তার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
শাহজাহানের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে মন্দিরে আগুন লাগানোর অপচেষ্টা করে তারা। মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর হীনচেষ্টা করা হয়। এ ধরনের অপতৎপরতা এবং নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকার, দেশ এবং জাতীকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু জেলা পুলিশ এ নাশকতাকারী দুর্বৃত্তকে শনাক্ত করে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরে শাহজাহানের দেয়া তথ্য মতে ব্যবহৃত মোবাইল সীমকার্ডটি জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, ঘটনার দিন রাতে শাহজাহান একটি নাম্বার থেকে রামু ফায়ার সার্ভিসকে ঈদগড় বাজারে আগুন লাগার মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফোন করেন। এর কিছুক্ষণ পর একই নাম্বার থেকে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ না করলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছেনা জানান। বিদ্যুৎ অফিস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এ সময়কে কাজে লাগিয়ে মন্দিরে আগুন লাগানোর অপচেষ্টা করেন শাহজাহান।প্রাথমিকভাবে শাহজাহান পুলিশকে জানিয়েছে ছেঁড়া কাপড় নিয়ে আগুন লাগান তিনি। এসময় তার সাথে আরো কয়েকজন ছিলেন।
কিন্তু মন্দিরের অভ্যন্তরে থাকা ভান্তে (ধর্মীয় গুরু) আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের খবর দিলে লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। যারফলে বড়ধরণের নাশকতার হাত থেকে শতবছরের পুরোনো মন্দিরটি রক্ষা পায়।
এ ঘটনায় সম্ভাব্য সব তথ্য উপাত্ত্য পর্যালোচনা ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে শাহজাহানকে শনাক্ত করার পর চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, শাহজাহান শুধু মন্দির পোড়ানোর নয় গেল ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির চালানো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানেও ঝটিকা হালায়ও জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
তিনি বলেন, নাশকতাকারী যে-ই হোক কেউ পার পাবে না। বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার সাথে কারা কারা জড়িত সে তথ্য বের করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শাকিল আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কল) মো: মিজানুর রহমানসহ গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মোহাম্মদ জুবায়ের, কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহের দেওয়ানসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি দিনগত রাত আড়াইটার দিকে রামুর চেরাংঘাটায় রাখাইন সম্প্রদায়ের এ বড় ক্যাং বৌদ্ধ বিহারের আগুন লাগায় দুর্বৃত্তরা।













