চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে জুলধা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের ৬১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিলেও তিন ইউনিয়নে ১৮৩ জন সাবেক ছাত্রনেতাদের পদ-পদবি ঝুঁলিয়ে রেখেছেন নেতারা। যাদের একমাত্র রাজনৈতিক পরিচয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। অথবা নিজেদের নামের আগে ‘সংগঠক’ ছাড়া নেই কোন বিশেষণ। এমন প্রায় দুই শতাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কর্ণফুলীতে পদবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
কর্ণফুলীর তিন ইউনিয়ন চরলক্ষ্যা, শিকলবাহা ও বড়উঠান যুবলীগের কমিটি ঝুঁলিয়ে রেখে দলের ভেতরে বাহিরে গ্রুপিং বাড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর সম্মেলন করে চরপাথরঘাটা ও জুলধা ইউনিয়নে কমিটি দিলেও এখনো কমিটি পায়নি তিন ইউনিয়ন যুবলীগ।
যুবলীগের পদ প্রত্যাশী এসব ছাত্রনেতারা জানান, ইউনিয়নে ইউনিয়নে সম্মেলন হয়েছে এক বছরেরও অধিক সময় হলো। কিন্তু দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা আর কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ইচ্ছায় তিন ইউনিয়ন পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তৃণমূলের। সংগঠনে স্থান না পাওয়ায় নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় বিহীন থাকতে হচ্ছে ১৮৩ জন সাবেক ছাত্রনেতাদের। ফলে, বিমর্ষ আর হতাশ হয়ে অনেকেই রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন।
কর্ণফুলীর যুবলীগের একাধিক সংগঠক জানান, কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা, শিকলবাহা ও বড়উঠান ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে তা উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেরাও জানেন না। কারণ বিষয়টি তাদের হাতে নেই। তারাও বর্তমানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। ফলে সম্ভাবনাময় অনেক সাবেক ছাত্রনেতাই যুবলীগে পদ পদবি পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার তিন ইউনিয়নে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা হতে লড়বেন মোট ৫৭ জন প্রার্থী। এতে তিন ইউনিয়নে তিন সভাপতি পদ পেতে চান ২৬ জন, সম্পাদক হতে ৩১ জন এবং উভয় পদে ৬ জন প্রার্থী জীবনবৃতান্ত জমা দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে পদ পাবেন ১৮৩ জন। পদপ্রত্যাশীরা পদে আসতে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে সিভি জমা দিয়েছেন বহু আগেই। মিছিল, মিটিং আর সম্মেলনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে নেতাদের দৃষ্টি কেড়েছেন। কিন্তু কমিটি নেই।
তথ্য বলছে, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন যুবলীগে সম্ভাব্য সভাপতি পদে প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-মনজুরুল হক, মো. ওমর ফারুক বিজয়, মো. সাইদুল ইসলাম, এ.এম বাহা উদ্দিন, মো. লোকমান হাকিম, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন মুন্না, মো. হাসান মুরাদ ও মো. সেকান্দর মির্জা। সম্পাদক পদে রয়েছেন-মো. জাহাঙ্গীর আলম জাবেদ, মো. জাকারিয়া, মো. সালা উদ্দিন টিপু, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. তসলিম, মো. আলমগীর আলম, মো. মহসিন। এছাড়াও মো সেকান্দর মির্জা, মো. ওমর ফারুক বিজয়, মো. হাসান মুরাদ ও মনজুরুল হক সম্পাদক পদেও প্রার্থী হয়েছেন।
শিকলবাহা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদে আগ্রহী হয়েছেন-মোহাম্মদ আলমগীর কবির, মোহাম্মদ আবদুল আলিম, মো. ওয়াহিদ আদনান মুন্না, সেলিম উদ্দিন সানী, মোহাম্মদ ইদ্রিছ হোসেন, মো. আব্দুর রহিম লোকমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ রফিক ও এম.এ রহিম। সম্পাদক পদে আগ্রহী-নুরুল হুদা সোহেল, আবদুল করিম মঞ্জু, মো. জসিম, মো. আমিন, আবদুল খালেক জুয়েল, আজগর টিপু, মো. শফি তালুকদার, মো. লোকমান হাকিম, মো. মোক্তার হোসেন, মুমিন তালুকদার। এছাড়াও সেলিম উদ্দিন সানী ও এম.এ রহিম সম্পাদক পদেও প্রার্থী হয়েছেন।
বড়উঠান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন-বাহাদুর খান, মুহাম্মদ মহি উদ্দিন, শেখ মো. আব্দুল হান্নান, মুহাম্মদ আলমগীর, মুহাম্মদ ইলিয়াছ মেম্বার, মো. আব্দুর রহিম চৌধুরী, মো. মহিউদ্দিন রানা ও মো. আনিছ উদ্দিন। সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন-ইনামুল হোসেন, মো. পারভেজ ইসলাম টিটু, আবদুল করিম, মুহাম্মদ ফোরকান, মুহাম্মদ আজগর আলী, মুহাম্মদ খোরশেদ উল্লাহ চৌধুরী, মুহাম্মদ সাজ্জাদ খান সুমন ও মো. শাহাদাত হোসাইন রিটন। এসব নেতাদের পরিচয় এখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সভা-সমাবেশে তাদের পরিচয় সাবেক ছাত্র হিসেবে। পদ প্রত্যাশী কিন্তু পদ বিহীন অবস্থায়।
শিকলবাহার সাবেক ছাত্রনেতা আলমগীর কবির বলেন,’তিন ইউনিয়নে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের পদ-পদবি নেই। এখনকার রাজনীতি তেলবাজি আর টাকা থাকলে সহজ। কিন্তু হাইব্রিডরা সুখে থাকলেও যারা দলের দুর্দিনে রাজপথে ছিলেন, তাঁদের দিন কাটছে কষ্টে। অনেকে অভিমানে নিজেদের ছাত্ররাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এসব কারণে।’
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। আমার সামনে সাধারণ সম্পাদক বসা রয়েছেন। উনার সাথে কথা বলতে পারেন বলে মুঠোফোনে কথা কৌশলে এড়িয়ে যান।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরীকে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গত বছরের অক্টোবরে তিনি জানিয়েছিলেন, আনোয়ারায় প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশের পরেই বাকি তিন ইউনিয়নে যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করবেন। কিন্তু গত ৬ মাসেও কোন কমিটির মুখ দেখেনি বড়উঠান, শিকলবাহা ও চরলক্ষ্যা যুবলীগ।
ওদিকে, সম্মেলন হওয়ার পরও তিন ইউনিয়নে কেন কমিটি হচ্ছে না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম জহুর বলেন, ‘আমরা কর্ণফুলীর বাকি তিন ইউনিয়নে কমিটি দিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এখন এ ব্যাপারে আপনারা উপজেলা যুবলীগের সাথে যোগাযোগ করেন। এখন কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার তাঁদের কাছে। আমাদের কাছে নেই।’













