বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিতে কক্সবাজারের ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ‘ঈদগাঁও’ এবং ‘পোকখালী’তে বসানো হয়ে দুটি রবার ড্যাম। উজান থেকে আসা পানি জমিয়ে সেচের চাহিদা মেটানোই এর মূললক্ষ্য। কিন্তু গত শীত মৌসুম হতে চলতি সময় পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আশানুরূপ পানি নামেনি নদীতে। ফলে, কুয়াশা ও পাহাড় ঘেমে আসা স্বল্প পানি জমেছে ঈদগাঁও রাবার ড্যামের উপরাংশে। কিন্তু রাবার ড্যাম ফুলানো থাকলেও শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে পোকখালী রাবারড্যাম অংশের নদী।
এতে প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে এ রাবারড্যাম অংশের হাজারের অধিক হেক্টর বোরো চাষের জমি ফেটে চৌচির হয়ে উঠছে। ফলে, কাজে আসছে না রাবার ড্যাম। থোর আসার পথে থাকা চাষ স্বাভাবিক রাখতে কলসি ভরে পানি ছিটাচ্ছে চাষীরা। পানির এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সময় মতো থোর বের হবে কিনা এ নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। এ সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধে সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভোগান্তিতে পড়া কৃষকগণ।
কৃষকদের দাবি, পোকখালী রাবার ড্যাম নির্ভর চাষীদের পানি সংকটের ‘কারণ’ ঈদগাঁও রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি। তাদের অংশে জমা পানি সম-বন্ঠন করা হলে পোকখালী ও চৌফলদন্ডী বিলের তেরশ হেক্টর জমির চাষাবাদ ক্ষতির মুখে পড়তো না।
সূত্রমতে, উজান থেকে পানি কম আসায় ‘ঈদগাঁও’ রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি পানি ছাড়ছে না। ফলে ‘পোকখালী’ রাবার ড্যাম ফুলানো হলেও পানি শূণ্য। এ অবস্থায় উপজেলার পোকখালী, চৌফলদন্ডি ও জালালাবাদ ইউনিয়নে এক হাজার ২৮৪ হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ করা বোরো ধান ও শীতকালীন সবজি ক্ষেত শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।
পোকখালীর নাইক্যংদিয়া এলাকার (৬নং ওয়ার্ড) কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, দু’লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পাঁচ একর জমিতে বোরো চাষ করেছি। আশা ছিল সুন্দর মতো চাষ করে ঋণ পরিশোধের পর পুরো বছর সুন্দর ভাবে সংসার চলবে। কিন্তু দেরিতে রাবার ড্যাম ফুলানোর ফলের পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি না আমরা। কলসি করে পানি সেচের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। এ অবস্থা পানির অভাবে ফসল নষ্ট হলে নিঃস্ব হয়ে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকবে না।
পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ও পোকখালী রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, চাষের সুবিধার্থে ঈদগাঁও নদীতে দুটি রাবার ড্যাম বসানো হলেও ঈদগাঁও রাবার ড্যাম থেকে পানি না ছাড়লে নিচে পানি আসে না। ঈদগাঁও রাবারড্যামে পানি জমা থাকলেও সম-বন্ঠন না হওয়ায় পানির অভাবে পোকখালী-চৌফলদন্ডী বিলের ফসলি মাঠ শুকিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষকরা। গত রাতে অল্প পানি ছেড়েছিল, তা শুকনো খালই খেয়ে ফেলেছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ঋণ নিয়ে চাষ করা কৃষকরা পথে বসবে। সংকট সমাধানে চেষ্টা করে বার বার ব্যর্থ হয়েছি। দ্রুত পানি না পেলে পুরো চাষবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আরমান উদ্দিন মেম্বার জানান, গত কয়েকমাস ধরে বৃষ্টি নেই। নদীর উপরি ভাগে সেলু মেশিনে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন সচল থাকায়, পানি অপচয় হচ্ছে। তাই আমাদের অংশেও পানি সংকট রয়েছে। ফলে, নিচের দিকে পানি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মতে আমরা যতটুকু সম্ভব পানি ছেড়েছি গতকাল। এরচেয়ে বেশি পানি ছাড়লে আমাদের পাম্প বসিয়ে জমিতে পানি দিতে হবে।
ঈদগাঁও উপজেলা (চলতি দায়িত্ব) কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, ঈদগাঁওতে বিপুল পরিমাণ বোরো চাষ হয়েছে। কিন্তু রাবার ড্যামে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পোকখালী এলাকার প্রায় কয়েকশ হেক্টরের বেশি জমির চাষ প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। সংকট কাটানো সম্ভব না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, ঈদগাঁও-পোকখালী রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে পানি যা আছে, সিদ্ধান্ত হয়েছে সমবন্ঠনের। সেভাবে কাজ না হলে ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।