২৫ অক্টোবর ২০২৫

চসিক কাউন্সিলর শফির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ, আটক ৩

দিনে দুপুরে অন্যের জমি দখলে চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দলবল নিয়ে আতুরার ডিপো শাহ আমানত সোসাইটিতে নিজ হাতে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের জমির উপর নির্মিত দেয়াল ভেঙে ফেলেন চসিক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম শফি। এসময় কর্মরত নির্মাণ  শ্রমিককে মারধর করা হয়।

দুই সপ্তাহে আগে একই জমির ( ৬০ গন্ডা) ডানপাশের সীমানা দেয়ালের একটি অংশ ভেঙে  দেন কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম এর লোকজন। এই ঘটনায় গত ৩০ মে ভুক্তভোগী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল হাসান নগরের বায়েজিদ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রেজাউল। ডায়েরিতে জামাল উদ্দিন, মোরশেদ, নুর নবী,আলাউদ্দিন নামের চার ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছিলো। সাধারণ ডায়েরির দুই সপ্তাহ পরে ঘটনাস্থলে হাজির হন স্বয়ং কাউন্সিলর শফি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ক্রয় করা জমিতে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় কাউন্সিলর সশরীরে এসে দেয়াল ভেঙ্গে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলকে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে।

কাউন্সিলর শফির নেতৃত্বে দেয়াল ভাঙার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ মোঃ লেদু,  ফরহাদ, রুবিন নামের তিনজনকে আটক করে। আটক হওয়া  মোঃ লেদু এলাকার মৃত  সিদ্দিক মেম্বারের ছেলে। এছাড়া ফরহাদ স্থানীয়  ফোরকান আহমেদের ছেলে। অন্যজন আবদুলের ছেলে রুবিন। এদের প্রত্যেকেই স্থানীয় কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামের অনুসারী বলে জানা গেছে।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সিনহা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,  ‘ ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তিনজনকে আটক করা হয়েছে।  দোষীদের ছাড় দেয়া হবে না। ‘

প্রতিবেদকের হাতে আসা ভিডিও চিত্রে কাউন্সিলর শফির নিজ হাতে দেয়াল ভাঙার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ঘটনাস্থলে নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে  ধস্তাধস্তিও ধরা পড়ে ভিডিওতে। কাউন্সিলর শফিকে বলতে শোনা যায় ‘ ভিডিও করলে করুক ‘।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেউ এলাকায় বাড়ি করতে গেলে কিংবা জমি ক্রয় করলে সেখানেই ডুকে পড়েন তিনি। ভূমিদস্যুতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের আতন্ক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, ‘ আমি ও আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার দুজন মিলে শাহ আমানত সোসাইটিতে  ষাট গন্ডা জমি ক্রয় করি ছয় সাত বছর আগে। খালি জায়গায় কেয়ারটেকার থাকতো।  কখনো কোন ঝামেলা হয় নি। হঠাৎ করে কাউন্সিলরের লোকজন পাশ্ববর্তী প্লটের  সীমানা দেয়াল ভাঙা শুরু করে। জমি দখলের পাঁয়তারা বুঝতে পারায় আমি আইনের আশ্রয় নেবার পর আজ কাউন্সিলর নিজে এসে নির্মাণধীন দেয়াল ভেঙে দিচ্ছে। একজন জনপ্রতিনিধি এভাবে দখলবাজি করলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?  ‘

সুত্রমতে, আতুরারডিপোর আশপাশে কেউ কোন জমি ক্রয় করলে সেখানে ঝামেলা সৃস্টি করে কাউন্সিলরের অনুসারীরা। জমি বাঁচাতে টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করতে হয় ভূমি মালিকদের। সমঝোতা না করলে জমি দখল করে নেয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক।

সংশ্লিষ্টদের মতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনেক জনপ্রতিনিধি এলাকায় মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং প্রতিষ্ঠা, পাহাড় কাটা, জায়গা জমি দখল ও চাঁদাবাজিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এরআগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আলোচিত কাউন্সিলর জহুরুল আলম ওরফে জসিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তিনি উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

গত বছরের ২৬ জানুয়ারি আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শনে গেলে কাউন্সিলর জহুরুল ও তাঁর সহযোগীদের মারমুখী আচরণের শিকার হন বেলার প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে পরিদর্শনে যাওয়া  বেলার একটি প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ঢিল ছোঁড়া ও হুমকি দেওয়ার মামলায় অভিযোগপত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরুল আলমকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো।  মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়।

এদিকে, দেয়াল ভেঙে ফেলার সময় ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া ব্যক্তিদের ছাড়িয়ে নিতে বায়েজিদ থানায় হাজির হন কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম। অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেন নি। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়েও তার দেখা মেলে নি।

আরও পড়ুন