চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে গরুর ক্ষুরা ও পক্স রোগের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার খামারিসহ সাধারণ কৃষকেরা। হঠাৎ করে আশংকাজনক হারে গরুর এ রোগ দেখা দেওয়ায় উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ, জৈষ্টপুরা, আমুচিয়া, আহলা করলডেঙ্গা, শাকপুরা ও পশ্চিম গোমদন্ডীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু খামারি ও বিভিন্ন কৃষকের প্রায় শতাধিক গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কোনো কোনো গ্রামে কিছু গরুর মৃত্যুও হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে খামারি ও কৃষকদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
খরণদ্বীপ এলাকার খামারি সুজন পাল বলেন, ষাঁড় ও গাভী মিলিয়ে তার খামারে ১৩টি গরু ছিল । এর মধ্যে গত ৫ দিন পূর্বে ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়ে একটি ষাঁড় গরু মারা গেছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা হবে। এছাড়া কোরবানি ঈদের ৩ দিন পূর্বে ৭৫ হাজার টাকা দামের ১ টি বকনা মারা যায় এ রোগে। এখনো ১ টি বাছুর অসুস্থ এবং তার চিকিৎসা চলছে। সংক্রমণ এড়াতে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা সেতু ভূষণ দাশ যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সাথে সবসময় যোগাযোগ করে চিকিৎসা করছি।
উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, তাদের পোষা গরুর গায়ে গোলাকৃতি পক্স ( লাম্পি স্ক্রিন) দেখা দিয়ে গরুর সারা গায়ে ক্ষত হয়ে ঘা হচ্ছে। এতে শংকায় রয়েছেন তারা।
শ্রীপুর, আমুচিয়া ও করলডেঙ্গা গ্রামের কয়েকজন কৃষকরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে এই রোগ দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকেরা। চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে সকল খামারী ও কৃষককের গরু আক্রান্ত হয়েছে তারা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে জানান কৃষকরা। এ কারণে অনেক খামারী ও সাধারণ মানুষ ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত বড় বড় গরু স্বল্প মুল্যে মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেও জানান অনেকেই।
উপজেলার প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১ হাজার ৭৫৭টি গরুর খামার রয়েছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ বলেন, প্রতিবছর কোরবানি ঈদের পর গরুর ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। কোরবানি উপলক্ষে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে বেশী গরু আসে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গরু স্থানান্তরিত হাওয়ার কারণে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। লাম্পি স্ক্রিনে আক্রান্ত হয়ে বড় গরুর চেয়ে বেশির ভাগ বাছুর মারা যাচ্ছে। গবাদিপশুর এফএমডি ও লাম্পি রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা সরবরাহ জরুরি।
তিনি বলেন, আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা সেবা প্রদান ও সুস্থ গরুতে টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে অফিসের সকলে মাঠে দিনরাত কাজ করছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাসে প্রায় ২/৩ হাজার গরু-ছাগলের বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। খামারীসহ সাধারণ মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করাসহ মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে। পশু চিকিৎসায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য উঠান বৈঠক করা হয়েছে। তার পরও এসব সাধারণ কৃষক ও খামারীরা অনেকে প্রাণী সম্পদ অফিসে ডাক্তারের কাছে আসে না। স্থানীয় গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে পশু চিকিৎসা করান। এ জন্য ভুল চিকিৎসায় অনেক গরু মারা যায়।
তিনি বলেন, বোয়ালখালীতে ৩ বছর ধরে প্রাণী সম্পদ হাসপাতালের মূল চিকিৎসক ভেটেরিনারি সার্জন এর পদ শুন্য রয়েছে। ফলে একসাথে একাধিক রোগাক্রান্ত পশু হাসপাতালে আসায় জনবল সংকটের কারণে প্রশাসনিক কাজও চিকিৎসার কাজ এক সাথে করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানান, দেশে দিন দিন গরু ছাগল, হাঁস মুরগী লালন পালন ও খামারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরি সেবা ঘোষণাপূর্বক হাসপাতালে ২৪ ঘন্টার জন্য অন্তত ৩ জন ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগ করা হলে খামারিরা উপকৃত হবে বলে মনে করেন অনেকেই ।
দেবাশীষ ব