২৩ অক্টোবর ২০২৫

৩৭৬ কোটি ঋণ পরিশোধ এস এ গ্রুপের, পাসপোর্ট ফিরে পেলেন চেয়াম্যান

sa-group

চট্টগ্রামের অধিকাংশ ঋণ খেলাপির কারণে যেখানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকে, সেখানে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক সাহাবুদ্দীন আলমের মালিকাধীন এস এ গ্রুপ একে একে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি তালিকা থেকে বের হয়ে আসছে। গত সাড়ে তিন বছরের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে প্রায় ৩৭৬ কোটি ঋণ পরিশোধ করেন। তাই বিচারক উনার দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা বাতিল ও ৪৫ দিনের জন্য পাসপোর্ট ফেরতের আদেশ দেন।

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত, এসএ গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক সাহাবুদ্দীন আলমের মালিকাধীন এসএ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসএ অয়েল রিফাইনারী লিমিটেড, শামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেড, সাউথ ইস্টার্ন অয়েল রিফাইনারী লিমিটেড, শ্যারিজা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, কামাল ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, এসএ পাল্প অ্যান্ড পেপার, লায়লা ফুড প্রডাক্টসসহ আরো কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এসএ গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১২০০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা নেন। কিন্তু সময় মতো সাতটি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ না পাওনা, বিকল্প জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি, বিভিন্ন সংস্থার হয়রানি ও অসহযোগিতা, পুনর্গঠন করা ঋণ পরিশোধের স্বার্থে ব্যাংকগুলো পুনরায় অর্থায়ন না করা, আন্তর্জাতিক বাজারের সয়াবিন ও পাম তেলের দামের উটা-নামা, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি, প্রযুক্তির পরিবর্তন, অসম প্রতিয়োগিতা ইত্যাদি কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। আর ওয়াখিং ক্যাপিটালের অভাবে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যাংক বহিভূক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকা ঋণগুলো খেলাপি হয়ে যায়। যা পবর্বতীতে সুদাসলে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হয়েছিল।

গত এক দশক নিয়ে আটা, ময়দা, তেল, লবণ, পানি ও পেপার মিলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে লাভের অংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিশোধ করতে থাকেন। গত সাড়ে তিন বছরের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে প্রায় ৩৭০ কোটি ঋণ পরিশোধ করেন। এরমধ্যে সাইথ-ইস্ট ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ব্যাংক আল ফালাহ্, আইডিএলসি এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট পিএলসি’র (এসএ অয়েল রিফাইনারি) ঋণ পুুরোপুরি পরিশোধ করেন। এরমধ্যে পাঁচটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুুরোপুরি পরিশোধ করেন। যা দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য অন্যান্য এক উদাহারণ।

এছাড়া ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়মিতকরণ করেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ ঋণ খেলাপির ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করে দেশে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। অথচ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দীন আলমের মালিকাধীন এসএ গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি তালিকা থেকে আসছে। এরমধ্যে অধিকাংশ ঋণ নিয়মিত করেন। আর নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছেন। আমাদের উচিত তাকে সহযোগিতা করা। যা দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য অন্যান্য এক উদাহারণ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারি রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামের বড় ব্যবসায়ী এসএ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাবুদ্দিন আলম গত ২০২১ সাল থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছেন। এমন কি এ সময়ে ছয়টির মতো প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ করেছেন। সুতরাং উনি ভালো একজন ব্যবসায়ী আদালতের কাছে মনে হয়েছে। তাই বিচারক উনার দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা বাতিল ও ৪৫ দিনের জন্য পাসপোর্ট ফেরতের আদেশ দেন। কারণ উনার চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএ গ্রুপের কর্ণধার ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন আলম বলেন, আমাদের ৩৬ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা আছে। আমরা ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভোজ্যতেলের বাজারের অন্যতম শীর্ষ একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। পরে ব্যবসায়িক ও নন ব্যবসায়িক কিছু কারণে আমরা পিছিয়ে যায়। এরমধ্যে শুধু মাত্র আমরা সাতটি প্রতিষ্ঠানে সময় মতো গ্যাস সংযোগ না পাওয়া কারণে সবকিছু থাকার পর ব্যবসা করতে পারি নাই। এতে আমার মূলধন আটকে যায়। পরে আমরা দেশিয় উৎস থেকে কাচাঁমাল সংগ্রহ করে অনেক কষ্ট করে ব্যবসা পরিচালনা করে গত চার বছরের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছি। শুধু চলতি বছরের ৮০ কোটি পরিশোধ করছি।

‘আমাদের লক্ষ্য ব্যবসা করা, তাই আমরা কষ্ট হরেও ঋণ পরিশোধ করব। আমাদের মনোযোগ পুরোপুরি ব্যবসা করা। এখন সরকার আমাদের পেপার মিল, রিফাইনারিতে গ্যাস সংযোগ এবং ব্যাংকগুলো নতুন ভাবে ওয়াকিং ক্যাপিটাল সাপোর্ট দেয়, তাহলে আমরা আরো পাঁচ হাজার নতুন মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারব। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের শত কোটি টাকা রাজস্ব দিতে পারব। এছাড়া বর্তমান পরর্বতী পরিস্থিতি অনেক প্রতিষ্ঠান ভোগ্যপণ্য আমদানি কমিয়েছে বা ব্যবসা থকে ছিড়কে পড়তে পারে। এর প্রভাব বাজারের পড়ছে। এ মুহূর্থে আমাদেও সুযোগ দেওয়া হোক। তাই আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই।’

আরও পড়ুন