আটা আর ময়দার সাথে ডালডা আর পাম ওয়েল মিশিয়ে সামান্য পরিমাণে ঘি এর ফ্লেভার এবং রং মিশিয়ে বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদন করে বিক্রি করা হচ্ছে আনোয়ারার হাটবাজারে। এসব খাদ্য বিভিন্ন বেকারীর নাম দিয়ে কৌটাজাত করা হচ্ছে। নেই মেয়াদ ঊর্ত্তীনের তারিখ ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ।
সাধারণ মানুষের সকালের চায়ের চুমুকে এসব বেকারীর তৈরীকৃত বিস্কুট চানাচুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর তৈরি এসব ভেজাল খাবারগুলো এখন সয়লাব হয়ে পড়েছে হাট-বাজার।
আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ,বটতলী, চাতরী, পরৈকোড়া, বারখাইন, হাইলধর আনোয়ারা সদরসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পাঁচটির অধিক নিম্নমানের খাদ্য তৈরির কারখানা স্থাপিত হয়েছে।এসব কারখানায় গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগই শিশু শ্রমিক।তবে প্রশাসনের নজর এড়াতে অনেক কারখানায় দিনের বেলা বাহির থেকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে শ্রমিকেরা পণ্য উৎপাদন করতে দেখা যায়।কোনো কোনো কারখানা দিনের বেলা বন্ধ থাকে,শুধু রাতের বেলা বেশি শ্রমিক লাগিয়ে কাজ চালায়।এসব কারখানার চকচকে মোড়কজাত পণ্য দেখে সাধারণ মানুষের বোঝার কোনো সাধ্য নেই কোনটা আসল কোনটা না নকল।
কিছু মোড়কে বিএসটিআই’র লোগো (মনোগ্রাম) ও পণ্যের গুণগানসমৃদ্ধ স্টিকার ছাপিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে ক্রেতাদের।বিএসটিআই সূত্রে জানায় যায়,চট্টগ্রাম অফিস থেকে আনোয়ারা উপজেলায় তেমন কোনো বেকারি খাদ্য তৈরির কারখানার অনুমোদন নেই।আনোয়ারায় যেসব কারখানা চলছে বেশিরভাগই অনুমোদনহীন।এ ছাড়া আসল ব্র্যান্ডগুলোর কাছাকাছি নামে অন্য কারখানাগুলো তাদের পণ্য বাজারজাত করছে।এসব খাবারের লেবেল, কৌটা, সুগন্ধ দেখে সাধারণ মানুষের আসল–নকল পার্থক্য বোঝা কঠিন।অন্যদিকে নানান জাতের খোলা বিস্কুট বাজারে একক আধিপত্য হিসেবে কাজ করছে উৎপাদকরা।আসল বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে বেকারি করার তাদের কোনো চিন্তা নেই বললেই চলে।প্রশাসনের নজর কম থাকায় এখন আনোয়ারার প্রতিটি জায়গায় খোলামেলা বাজারেও বিক্রি করতে দেখা যায়।আর এসব দোকানিদের বেকারী থেকে কিনতে হয় কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্ত বিক্রি হয় ১৪০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানান,ভেজাল বিস্কুট বা অপরিচ্ছন্ন বেকারীতে তৈরীকৃত খাদ্য খাওয়ার পরে মানুষের শরীরে জন্ডিস,বদ হজম ও গ্যাস্ট্রিক,আলসারের মতো কঠিন রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।তাছাড়া এসব খাদ্যে গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক।
ভেজাল খাদ্য তৈরি করেন এমন একজন কারিগর বলেন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে ছোট্ট কারাখানা বসিয়ে ভেজাল খাদ্য বানানো হয়।সাধারণত প্রতিটি খাদ্যে মিশ্রণে ময়দার সাথে বিভিন্ন পাউডার এবং পরিমাণে রং ব্যবহার করা হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা জানান, ভালো মানের প্রতি কেজি বিস্কিটের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।কিন্তু এগুলো কেজিপ্রতি ১৪০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব খাদ্য পাইকারি দরে আমরা খুচরা বিক্রেতারা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কিনি।বেশি লাভ হওয়ায় ভালো মানের কোম্পানির খাদের চেয়েও এগুলো বিক্রিতেই বেশি উৎসাহ ব্যবসায়ীদের।
এ ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আকতার বলেন,আনোয়ারায় যত ধরনের খাদ্য উৎপাদন বেকারী কারখানার খবর পাবো আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিব। আমরা কিছুদিন আগে দুটি বেকারিকে জরিমানা করেছি।এখন বাজারের খোলা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যদি কোনো খাদ্য বিক্রি হয় সেগুলো অভিযান পরিচালনা করে যাবো।
আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হুছাইন বলেন,আমরা ক্রমান্বয়ে বিএসটিআই এর সহযোগিতায় অভিযান করবো।আমারা অভিযানের পক্ষে।













