২৪ অক্টোবর ২০২৫

কক্সবাজারে শেষ হলো বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল, নাচগানে মুগ্ধ পর্যটক

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচারদ্বীপ সমুদ্রসৈকত-লাগোয়া পরিবেশবান্ধব ইকোট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান মারমেইড বিচ রিসোর্টে বুধবার থেকে রিসোর্টের আঙিনায় শুরু হয় তিন দিনব্যাপী বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারী) শেষ দিনে উৎসব ছিল বেশ জমজমাট। পরিবেশিত হয় হালের জনপ্রিয় ডিজে এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীদের নৃত্য ও বাউল গান। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুগ্ধ হন পর্যটকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক রক সিটির বার্নিং ম্যান প্রজেক্টের আদলে মারমেইড বিচ রিসোর্টের এ আয়োজন সাজানো হয়। উৎসবের কিউরেটর হিসেবে যুক্ত ছিলেন খ্যাতিমান জাপানি ফেস্টিভ্যাল আর্কিটেক্ট এবং লাইটিং ডিজাইনার জিরো এন্দো। ডিজে পরিবেশন করেন যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জাপান থেকে আসা শিল্পীরা।

গতকাল রাত ১১টা। মারমেইড বিচ রিসোর্টের পশ্চিম পাশের সৈকতঘেঁষা বালুচরে স্থাপিত ডিম আকৃতির ‘এগ প্লানেট’ মঞ্চে ডিজে পরিবেশন করছিলেন থাইল্যান্ড থেকে আসা তরুণী শিল্পী নিপাংকু। দুই শতাধিক তরুণ-তরুণী ডিজের তালে নাচে ব্যস্ত। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সমুদ্রের পানিতে ভাসমান ১১টি ডিঙি নৌকার সমন্বয়ে শুরু হয় দৃষ্টিনন্দন বোট শো। বালুচরে চলে—ফায়ার শো। আতশবাজির সঙ্গে ডিজে ফায়ার শো এবং বোট শো মিলে ভিন্ন রকমের আমেজ তৈরি হয় উৎসবে। এর আগে একই মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক শ পর্যটক সানসেট ও মুন পার্টি উপভোগ করেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের জন্য রিসোর্টের আঙিনায় সাজানো হয় পৃথক পাঁচটি মঞ্চ। রিসোর্টের পশ্চিম পাশের খোলা মাঠে নির্মিত কাঁকড়া মঞ্চে সন্ধ্যায় চলে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের বোতলনৃত্য, মারমাদের জুমনৃত্য, রাখাইনদের ছাতানৃত্য ও ম্রোদের বাঁশনৃত্য। রাত ৯টা থেকে একই মঞ্চে শুরু হয় ডিজে পার্টি। পশ্চিম পাশে সমুদ্রের পানিতে নির্মিত ‘মিস্টিক বাউল’ মঞ্চে চলে বাউল ও লালন শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনা। রিসোর্টের দক্ষিণ পাশে ক্র্যাব ড্রিমার, কসমিক টার্টল ও বিগ ব্যাঙ নামে আরও তিনটি পৃথক মঞ্চে রাত তিনটা পর্যন্ত চলে ডিজের সঙ্গে নাচানাচি, আড্ডা ও রকমারি খাবারের আয়োজন। গভীর রাত পর্যন্ত জাপান, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১১টি দেশ থেকে ভ্রমণে আসা শতাধিক পর্যটক ফেস্টিভ্যাল উপভোগ করেন। বিদেশি শিল্পীরা ডিজে পরিবেশনের পাশাপাশি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সংগীত উপভোগ করেন।

‘এগ প্লানেট’ মঞ্চের ডিজে পরিবেশন করেন থাইল্যান্ড থেকে আসা শিল্পী নিপাংকু ও  স্পেনের তরুণ শিল্পী পাসলু বাস।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কাঁকড়া মঞ্চে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের রাখাইন, ম্রো, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, পাংখোয়া সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন নৃত্য–গান উপভোগ করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি  বলেন, ‘ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিয়ে এই ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। বাংলাদেশে যত গোষ্ঠী আছে সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ। এই বহুত্ব জাতীয়তাবাদী চিন্তাটা আমরা বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে চাই। বিদেশিদের কাছে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই—বাংলাদেশ কেবল মুসলমানদের না, হিন্দুদের না, বৌদ্ধদের না, সবার।’

আরও পড়ুন