আজ (৩ ফেব্রুয়ারি) মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথি, বিদ্যাদেবী সরস্বতী পূজা। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এই উৎসব জ্ঞান, বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উদযাপন করা হয়। শিক্ষার্থীরা এই দিনে বিশেষভাবে দেবীর কৃপা লাভের আশায় পুজো অর্চনা করে থাকেন।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে প্রতিমা স্থাপনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে, যা আজ সোমবার রাত পর্যন্ত চলবে। হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে ভোরবেলা সরস্বতী দেবীকে দুধ, দই, মধু, ঘি, চন্দন ও কপূর দিয়ে স্নান করানো হয়। এরপর ভক্তরা চরণামৃত গ্রহণ করেন।
সকাল ৯টার দিকে শুরু হয় বাণী অর্চনা, যেখানে পুরোহিতরা ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে…’ মন্ত্র পাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানান। পূজার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বই, খাতা ও দোয়াত-কলম দেবীর চরণে অ捡র্পণ করে এবং পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করে। তাদের বিশ্বাস, দেবী সরস্বতীর কৃপায় তারা বিদ্যা ও জ্ঞানের পথে আলোকিত হবে।
সরস্বতী পূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের রীতি। প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন, তবে আধুনিক রূপে সরস্বতী পূজার প্রচলন ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে হয়ে আসছে। তখন পাঠশালাগুলোতে প্রতি শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করা হতো।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ দিনব্যাপী নানা আয়োজন করেছে। পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে সরস্বতী পূজার মহোৎসব উদযাপিত হচ্ছে।
বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে পূজাকে ঘিরে ব্যাপক আনন্দ-উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। পূজার পাশাপাশি তারা সাজসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।
সরস্বতী পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এই উৎসবে অংশ নেয়, যা সামাজিক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।