২৩ অক্টোবর ২০২৫

সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত দুইজন ডাকাত নাকি জামায়াত ক্যাডার!

খালি হয়ে যায় অস্ত্রের ম্যাগজিন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়ায় দুইজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। গুলিবিদ্ধ হয় আরও পাঁচজন। এর মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। দলীয় পদবি না থাকলেও নিহত দুজনই এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর ‘নেতা’ হিসেবে পরিচিত। ঘটনার সময় অস্ত্রধারীরা প্রায় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এতে অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১০টার দিকে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা ১ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত দুজন ছাড়াও গুলিবিদ্ধ পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে অবশ্য তাদের চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

গণপিটুনিতে নিহত দুজন হলেন—নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেহ। জামায়াত ক্যাডার হিসেবে পরিচিত দুজনেরই বয়স প্রায় ৩৫ বছর হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, নিহত নেজামের লাশের পাশে পড়ে থাকা ব্যবহৃত রিভলবারটির পুরো ম্যাগাজিন খালি হয়ে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকে এলাকায় নেজাম ও তার সহযোগীরা ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পরপরই কাঞ্চনা এলাকা নেজাম উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। মধ্যম কাঞ্চনা যায় রিফাতের হাতে। অন্যদিকে এওচিয়া এলাকা ভাগ করে নেন আবু তাহের আদাইয়া, জাহেদ ও ফরহাদ। এদের সকলেই ‘জামায়াত ক্যাডার’ হলেও নিজেদের মধ্যেও গত কয়েক মাস ধরে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় তারাবি নামাজের পর রাত ৯টার দিকে অন্তত ২০ জন অস্ত্রধারী সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় জামায়াত নেতা নেজাম উদ্দিন এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় যান। মোট নয়টি সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ও একটি মোটরসাইকেলে করে তারা সেখানে যান। গাড়িগুলো থেকে নেমে হেঁটে অস্ত্রধারীদের দলটি কাছের একটি জায়গায় অবস্থান নেয়। এলাকাবাসী তাদের তৎপরতা টের পাওয়ার পর স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকে ‘ডাকাত আসছে ডাকাত আসছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয় বারবার। এর একপর্যায়ে স্থানীয় এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে নেজাম ও তার সহযোগীদের ঘিরে ফেলে। এ সময় নেজামের সহযোগীরা জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এভাবে প্রায় আধঘন্টা ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সময় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। এ সময় পুরো ছনখোলা এলাকায় অবর্ণনীয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপরও অবস্থা বেগতিক দেখে নেজাম ও তার সহযোগীরা অদূরে রাখা তাদের গাড়িগুলোর দিকে এগোতে থাকে।

এর মধ্যেই আরও শক্তি সঞ্চয় করে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ এলাকাবাসী লাঠিসোটা ও দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে নেজাম ও তার সহযোগী আবু সালেহসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। ক্ষুব্ধ জনতার মারধরে নেজাম ও আবু সালেহ ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় আরও অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হলেও ইকবাল ও ওবায়দুল হক নামের দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এছাড়া আহত আরও যে তিনজনের নাম জানা গেছে, তারা হলেন আব্বাস উদ্দিন, মামুনুর রশিদ ও নাসির উদ্দিন। তাদের কারও বুকে, কারও হাতে আবার কারও পায়েও গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে তাদের পাঁচলাইশ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ জনতার রোষ এড়িয়ে নেজামের সহযোগী সন্ত্রাসী জামশেদসহ অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

ঘটনার অনেক পরে সেনাবাহিনীর স্থানীয় একটি টিম ও সাতকানিয়া থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায় বলে জানা গেছে। আরও পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস ছাড়াও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা নেজাম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে নেজাম ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে কাঞ্চনা, এওচিয়া, চরতী, আমিলাইশসহ আশেপাশের এলাকাবাসী অতিষ্ট ছিল। তারা চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী হওয়ায় পুলিশও তাদের সমীহ করে চলতো বলে অনেকের অভিযোগ।

এ এস/ বাংলাধারা

আরও পড়ুন