চোখে আনন্দের ঝিলিক, মুখে প্রশান্তির হাসি , এভাবেই শতাধিক হতদরিদ্র পরিবার বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) গরুর গোশত হাতে পেলো। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিতকরীর উদ্যোগে এই আয়োজনটি যেন বহুদিনের না-পাওয়ার যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছিলো।
তারেক হোসেন, মায়ানী ইউনিয়নের এক তরুণ, যার ১৪ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর সংসারের বোঝা কাঁধে নিতে হয়েছে। এখনো তার উপার্জনের সামর্থ্য হয়নি। মা, দুই বোন আর নানিকে নিয়ে চলছে তার সংগ্রামের জীবন। তারেক বললেন, ‘আমরা কখনো কোরবানি দিতে পারি না। আশপাশের মানুষ যা দেয়, সেটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আজ হিতকরী আমাদের শুধু গরুর গোশতই দেয়নি, দিয়েছে মসলা, আলু আর পেয়াজও। এতদিন পর ভালো কিছু রান্না খেতে পারব এটাই সবচেয়ে আনন্দের।’
শুধু তারেক নন, খৈইয়াছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা দিনমজুরের স্ত্রী বিবি জহুরার জন্যও এই আয়োজন এক আশীর্বাদ। তিনি বলেন, ‘গরুর গোশত কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হয়। এতদিন পর সন্তানদের নিয়ে ভালো খাবার খেতে পারবো, এটা ভাবতেই মন ভালো লাগছে।’
রিকশাচালক মো. দুলালও এসেছিলেন পরিবারের জন্য এক প্যাকেট গোশত নিতে। তিনি বললেন, ‘গত বছরও এই সংগঠন থেকে গরুর গোশত পেয়েছিলাম। এবারও দিলো। গরিব মানুষের জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া।’
হিতকরীর এই উদ্যোগে অসংখ্য পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। আবুতোরাব বাজারে সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে ভোর থেকে শতাধিক পরিবারকে হাতে হাতে গরুর গোশত, মসলা, আলু, ও পেয়াজ তুলে দেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
গোশত বিতরণ উপ-কমিটির আহ্বায়ক মামুন নজরুল বলেন, ‘২৭ রমজানের আগের রাতে অনেকেই ভালো কিছু রান্না করেন, কিন্তু সমাজে এমন অনেকে আছেন, যারা কোরবানির গোশত তো দূরের কথা, কিনে খেতেও পারেন না। তাই আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় কিছু পরিবারকে ভালো খাবারের আনন্দ দিতে চেয়েছি।’ তিনি আরও জানান, সংগঠনের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় গত বছরের মতো এবারও এই কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
২০০১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হওয়া হিতকরী সংগঠনটি সমাজসেবামূলক নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আসছে। শিক্ষার্থীদের পাঠগৃহ পরিচালনা, সুবিধাবঞ্চিতদের ইফতার বিতরণ, করোনাকালে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, মানসিক রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, স্কুলের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কার প্রদানসহ নানামুখী সামাজিক কার্যক্রমে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে সংগঠনটি। বর্তমানে দেশ-বিদেশে প্রায় ৩০০ সদস্যের সক্রিয় অংশগ্রহণে হিতকরী সমাজ বিনির্মাণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
এই উদ্যোগ শুধু একটি সাময়িক আয়োজন নয়, বরং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজের অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে হিতকরীর মতো সংগঠনগুলো প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
এআরই/বাংলাধারা