২৩ অক্টোবর ২০২৫

পার্বত্য অঞ্চলে টাওয়ারে নাশকতা, নিরাপত্তাকর্মী অপহরণ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রবির নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। দুর্বৃত্তদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করার লক্ষ্যে এসব মোবাইল অপারেটর টাওয়ারে হামলা চালায়। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে ফেলা হয় ফাইবার। যার ফলে বিশাল এলাকা জুড়ে বন্ধ রয়েছে নেটওয়ার্ক সংযোগ।

জানা যায়, গত তিন মাসে একাধিক স্থানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপতৎপরতায় অর্ধশতাধিক টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এমনকি অপহরণের শিকার হয়েছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীও ।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, লক্ষীছড়ি, পানছড়ি, দিঘীনালা, মানিকছড়ি, নানিয়ারচর, রাউজান, ফটিকছড়ি ও বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা। এখানে মোট ৫১টি মোবাইল টাওয়ার নাশকতার শিকার হয়েছে। এ ধরনের কার্যকলাপের নেপথ্যে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্য রয়েছে।

নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় জরুরি সেবা ব্যাহত হচ্ছে, পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র খাগড়াছড়িতেই ৩২টি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি সচল করা গেলেও ২৫টি এখনো বন্ধ রয়েছে। পার্বত্য তিন জেলার ২৬টি টাওয়ারও সন্ত্রাসীদের হাতে নাশকতার শিকার হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ফাইবার সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হলেও, তা আবার কেটে ফেলা হচ্ছে।

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা, অপরাধীদের দাপট
খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ইতোমধ্যে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী অপহৃত হয়েছেন। অপরিচিত নম্বর থেকে রবির কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। টাওয়ার পুনরুদ্ধারের কাজেও কোনো অগ্রগতি নেই, কারণ ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপরাধীদের প্রতিহত করতে পারছে না।

রবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ধরনের অব্যাহত নাশকতায় প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ইডটকোর নিরাপত্তা দল এবং প্রশাসন যৌথভাবে সমস্যার সমাধানে কাজ করলেও এখনো কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

মোবাইল টাওয়ার বন্ধ থাকায় পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষ করে ইনসুলিন, অক্সিজেন এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা: ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

কোম্পানিটি বলছে, এ ধরনের কার্যকলাপে ‘চাঁদাবাজির উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রবি বলেছে, গত তিন মাসে বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা রবির মোবাইল টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ফাইবার কেবল কেটে ফেলেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় অর্ধশত টাওয়ার।
“এমনকি অপরাধী চক্র কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীকে অপহরণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে টাওয়ারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না টাওয়ার কোম্পানি ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেড।”
রবি বলছে, বিদ্যুৎ সংযোগ কিংবা ফাইবার কেটে ফেলার ঘটনাগুলো ঘটেছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, লক্ষ্মীছড়ি, পানিছড়ি, দিঘীনালা, মানিকছড়ি, নানিয়ার চড়, রাওজান, ফটিকছড়ি, বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়।
“প্রায় তিন মাস ধরে চলতে থাকা এ ধরনের কার্যকলাপের পেছনে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্য রয়েছে। খাগড়াছড়িতেই ৩২টি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সাতটি সচল করা সম্ভব হয়েছে।

“এছাড়া পার্বত্য তিন জেলার সরকারি সংস্থা বিটিসিএলের অন্তত ২৬টি টাওয়ারের ফাইবার কেটে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। কোথাও কোথাও দেখা গেছে, ফাইবারগুলো ঠিক করার ওই দিনই তা আবার কেটে দেওয়া হয়েছে।”

রবি বলছে, মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা। সেখানে পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে পার্বত্য তিন জেলা।

নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান না হলে স্থানীয়রা আরও বড় সংকটের মুখে পড়বে এবং অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

এএস/বাংলাধারা

আরও পড়ুন