২৬ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামে বর্ষবিদায়ের রঙিন বিকেল, সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাসে স্বাগত ১৪৩২

চৈত্রের শেষ বিকেলে চট্টগ্রামের সিআরবি শিরীষতলায় নেমেছিল উৎসবের আমেজ। বাতাসে ধুলোর মৃদু উড়ান, গাছে গাছে ঝিরঝিরে পাতার শব্দ আর মানুষের মুখে ছিল বর্ষবিদায়ের আনন্দের ছোঁয়া। নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের আয়োজনে বসেছিল এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা—যেখানে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে সবাই অপেক্ষা করছিল নতুন সূর্যোদয়ের।

সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই বিকেল চারটা থেকে শুরু হয়ে এই আয়োজন চলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। অংশ নেয় চট্টগ্রামের ৫৪টি সাংস্কৃতিক সংগঠন। আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য আর দলীয় পরিবেশনায় মুখর ছিল পুরো আয়োজনস্থল। কেউ গেয়েছেন নতুনের আহ্বান, কেউবা কবিতায় বলেছেন বিদায়ের কথা। চৈত্র সংক্রান্তির এই বিকেল যেন হয়ে উঠেছিল এক আবেগঘন মিলনমেলা।

এদিনের আয়োজনে সঞ্চালনা করেন সেলিম ভূঁইয়া ও আরিফা আফরিন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের খ্যাতনামা সংগঠনগুলোর শিল্পীরা। নুপুর নিক্কন একাডেমী, নৃত্যরঙ একাডেমী, শহীদ মিলন সংগীত বিদ্যালয়, কায়াশ্রম, আরোহী সংঙ্গীত অঙ্গনসহ আরও অনেকে তাদের পরিবেশনায় মাতিয়ে রাখে দর্শকদের।

নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সদস্য হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, “এই দিনটা শুধু বর্ষবিদায় নয়, এটি নিজেকে নতুন করে পাওয়ার শপথ নেওয়ার সময়।” আগামীকাল পহেলা বৈশাখের ভোরে শুরু হবে নববর্ষ ১৪৩২ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। আয়োজনে থাকছে কাবাডি খেলা, যা শহরজীবনে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ। সঙ্গে গান, কবিতা ও নৃত্যের নানা পরিবেশনা।

তবে পুরো আয়োজনের মাঝখানে ঘটে যায় এক অপ্রীতিকর ঘটনা। আয়োজনে টাঙানো কিছু ব্যানার নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। স্বাধীন বাংলার প্রথম দৈনিক ‘আজাদী’-এর পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি ব্যানারগুলোর মধ্যে কিছুতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পুরনো ছবি থাকায় দর্শনার্থীদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত কয়েকজন সেই ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দেন। ঘটনার পরপরই আয়োজকরা ব্যানারগুলো সরিয়ে নেয়।

আয়োজকদের একজন বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে তুলে ধরা, কোনো রাজনৈতিক বার্তা নয়।” তবে উপস্থিত এক সাংবাদিকের মন্তব্য, “শিল্প-সংস্কৃতির মঞ্চে এমন রাজনৈতিক উপাদান দর্শকদের আবেগে আঘাত হানতে পারে। ব্যানার ছেঁড়া অবশ্যই অনুচিত, তবে এমন বিতর্ক এড়ানো যেত।”

দিন শেষে, আলো-আবেগ আর গানের মূর্ছনায় বিদায়ী বিকেলটি শান্তভাবেই শেষ হয়। নতুন সূর্যকে বরণ করার প্রস্তুতিতে চট্টগ্রাম যেন তৈরি হয়ে আছে প্রাণভরে।

এআরই/বাংলাধারা

আরও পড়ুন