থোকায় থোকায় ঝুলছে বাহারি রঙের আম। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও সুস্বাদু। তাই, চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। দেশীয় প্রজাতির আমের তুলনায় ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয় এসব আম। ফলে সাফল্য পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাগানবাজার ইউনিয়নে পাহাড়ের বুকে ইদ্রিস মিয়া সহ পাঁচজন মিলে গড়ে তোলেন ‘স্বপ্নের মাঞ্জিল এগ্রো’। দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগে অনাবাদি প্রায় ১৭ একর জায়গায় তাদের মিশ্র এই আমের বাগান।
বাগানে আমেরিকান পামেলার, রেড আইভেরি, রেড এম্পেরর, বনানা ম্যাংগো, কাটিমন, কিউজাই, রেড লেডি, আপেল ম্যাংগো, মিয়াজাকি বা কেসিংটন প্রাইড, আরটুইটু, থাই চিয়াংমাই, কিং অব চাকাপাত, বারি-৪ ও থাই বারোমাসি আমসহ বিদেশি ২৫ জাতের প্রায় আঠারোশত আমগাছ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে দেশীয় জাতের আমও। আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত কীটনাশকবিহীন অর্গানিক এসব আমের বাজারে বেশ কদর রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাছে ঝুলছে নানা রঙের বিভিন্ন প্রজাতির আম। কাঁচা-পাকা আমে ভরে আছে বাগান। কীট-পতঙ্গ থেকে সুরক্ষা ও নিরাপদ আম উৎপাদনের চেষ্টায় বাগানে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্রুটব্যাগ। বাগানে রয়েছে বেশ কয়েক প্রজাতির আম। ফলনও হয়েছে ভালো। বাগান পরিচর্যায় প্রতিদিন কাজ করেন ২০ জন শ্রমিক। এতে সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান।
উদ্যোক্তা ইদ্রিস মিয়া আশা করছেন, আমের মৌসুম শেষ হলে এই আমগুলো পাকবে এবং বাজারজাতের মাধ্যমে আনুমানিক ১০ লাখ টাকা লাভবান হবেন।তিনি বলেন, ‘‘বিদেশি আমের চারা বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেছি। তবে এটির চাষাবাদে বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। দেশীয় আমের মতোই চাষাবাদ করা যায়।’’তিনি আরও বলেন, ‘‘আম্রপালি, বারি-৪ সহ অন্যান্য দেশি আমের ফলন ভালো। কেজি প্রতি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে বিদেশি রেড ম্যাংগোর দাম বেশ কয়েক গুণ বেশি।
এই কারণে বিদেশি আমের আবাদ বাড়াতে কাজ করেছি, সফলও হয়েছি। চলতি মৌসুমে অন্তত ৮ লাখ টাকার বিদেশি আম বিক্রির আশা করছি। প্রতি কেজি মিয়াজাকি আম বিক্রি হয় ৯০০ টাকায়, রেড আইভেরি ৭০০ টাকা, রেড এম্পেরর বা চাকাপাত ৯০০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান আরটুইটু বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়, হ্যানিভিউর দাম কেজি ৬০০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি আম স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না। অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়।’’
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘‘কৃষকেরা ফলন বেশি হওয়ায় বারি উদ্ভাবিত আম্রপালি, রাংগুয়াই, বারি-৪ আমের উৎপাদন বেশি করেন। তবে দাম বেশি হওয়ায় সচেতন কৃষকেরা এখন বিদেশি আম উৎপাদনে ঝুঁকেছেন। এবার পুরো উপজেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করছি এ বছর ২,৮৭০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।’’