চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন ঘিরে বিশাল বাজেট ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন থাকলেও অবহেলার শিকার হয়েছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ২,৪০০ পুলিশ সদস্য। দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেও তারা পাননি এক বোতল পানিও, ছিল না কোনো খাবারের ব্যবস্থাও।
সূত্র জানায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনা হয়েছিল আধুনিক ৪০টি আর্চওয়ে। কিন্তু যাদের ঘামে এই অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন হয়েছে, তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল না ন্যূনতম ব্যবস্থা। পরে পুলিশ বিভাগ নিজেদের উদ্যোগে কিছু সদস্যের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করে।
এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমাবর্তন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী জানান, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না এবং তা ওপেনিং ডে পর্যালোচনায় আলোচনা করা হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়েও দুঃখ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। তীব্র গরম, পানি সংকট ও অপর্যাপ্ত ফ্যানের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। পরিবহন সংকট এতটাই প্রকট ছিল যে, কেউ ফিরে গেছেন ট্রাকে করে, কেউবা অ্যাম্বুলেন্সে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এনামুল হক তাসনীম জানান, “ফেরার সময় হাজারো শিক্ষার্থী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে।”
একজন অভিভাবক লিখেছেন, “১৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। ট্রেনের ধাক্কায় সে অসুস্থ হয়ে যায়, কিন্তু কোনো গাড়িতেই উঠতে পারিনি।”
মমতাহীনা খানম নামে এক শিক্ষার্থী জানান, “প্যান্ডেলে বসার ভালো ব্যবস্থা ছিল না, ফ্যান ছিল না, পানি ছিল না, এমনকি সাউন্ডও বোঝা যাচ্ছিল না। তাহলে এত কষ্ট করে এসে বসার মানে কী?”
অব্যবস্থাপনার ছাপ, তবুও গর্বিত শিক্ষার্থীরা
সব অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মাঝেও নিজের ডিগ্রি নিয়ে গর্বিত শিক্ষার্থীরা। সামিয়া আক্তার বলেন, “গাউন ও টুপি পরে যখন বাবামায়ের সামনে দাঁড়ালাম, তাঁদের চোখের গর্ব সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।”
মাহমুদুল হাসান বলেন, “এই ডিগ্রি আমার একার নয়, পুরো পরিবারের। এই স্মৃতি আজীবনের।”
বড় বাজেট, প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবস্থাপনা
২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ডিগ্রি পাওয়া ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ৪২ জন পিএইচডি, ৩৩ জন এমফিল ও ২২ হাজার ৫২২ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল নির্মাণেই খরচ হয়েছে ৩ কোটি টাকা।
এআরই/পিএন/বাংলাধারা
তথ্য সূত্র- ঢাকা পোস্ট