নগরজুড়ে পরিবেশ দূষণের মাত্রা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে প্রশাসনিক নীরবতা। প্রতিদিনের যাতায়াতে নগরবাসীকে যেন ঘ্রাস করছে ময়লার গন্ধে ভরা বিষাক্ত বাতাস। সর্বশেষ এমনই ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে চট্টগ্রামের সাগরিকা বেসিক শিল্প নগর এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে, সি মার্ক ও রিল্যাক্স কারখানার মাঝামাঝি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে শিল্পবর্জ্য—যা পচে গিয়ে এখন রীতিমতো দুর্গন্ধের রাজত্ব কায়েম করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খোলা জায়গায় পড়ে থাকা বর্জ্য থেকে নিঃসৃত গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে পথচারীদের। আশপাশের বাসিন্দারা বলছেন, শিশুদের অসুস্থতা বাড়ছে, শ্বাসকষ্টে ভুগছে বয়স্করা। অথচ বর্জ্যের উৎসস্থল থাকা দুটি কারখানা পুরো বিষয়টি যেন উপেক্ষা করে চলেছে।
অভিযোগের তীর সরাসরি কারখানাগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কন্ট্রাক্টর মোশাররফের দিকে। স্থানীয়রা বলছেন, মোশাররফ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বর্জ্য রাখছেন যেখানে খুশি। আরও বিস্ময়কর তথ্য—এই অনিয়ম চালাতে তিনি নাকি নিয়মিত সহযোগিতা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ওয়ার্ডভিত্তিক পরিচ্ছন্ন কর্মীদের।
মোশাররফ অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক ফোনালাপে তিনি দাবি করেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কয়েকদিনের জন্য বর্জ্য রেখেছি, পরে সরিয়ে নেব।”
কিন্তু ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মোশাররফ যখন নাম করেন চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার হারুনের, তখন বিষয়টি নতুন মোড় নেয়। এই যেন কেঁচো খুজতে সাপের সন্ধান পাওয়ার মতই। মোশাররফ বলেন, “হারুন আমার কাছে নিয়মিত টাকা দাবি করতেন। টাকা না দেয়ায় এখন আমার বিরুদ্ধে এসব করছে।”
হারুন অবশ্য মোশাররফের অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমি এসবের কিছুই জানি না।”
ঘটনার প্রেক্ষিতে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আই. ইউ. এ. চৌধুরীও জানিয়েছেন, হারুনের বিরুদ্ধে অতীতেও এমন অভিযোগ এসেছে। তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
তবে সাধারণ মানুষ এসব প্রশাসনিক কথার মারপ্যাঁচে না গিয়ে চায় বাস্তব সমাধান। তাদের একটাই দাবি—পরিবেশ হোক দূষণমুক্ত, শিশুরা হোক সুস্থ, বাতাস হোক স্বচ্ছ।
চিকিৎসকরা বলছেন, এমন দূষণ দীর্ঘমেয়াদে মানুষের ফুসফুস, শ্বাসযন্ত্র ও দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
এআরই/বাংলাধারা