যেখানে একই জায়গায় বসে দেখা যায় লালিমাভ সূর্যোদয় আর রঙিন সূর্যাস্ত, সেখানে না গেলে কি চলে? এমন মনকাড়া দৃশ্য আর পাখির কলতানে ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির নাম সন্দ্বীপ। চট্টগ্রামের এই উপকূলীয় দ্বীপটি এখন পর্যটনের সম্ভাবনাময় এক স্বর্গভূমি হয়ে উঠছে।
পশ্চিমে শান্ত মেঘনার বুক জুড়ে রূপালি ইলিশের লাফালাফি, পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেলের উত্তাল ঢেউ আর দুরন্ত বাতাস – প্রকৃতি যেন নিজ হাতে এঁকেছে এই দ্বীপের সৌন্দর্য। বিস্তীর্ণ ৪১ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতজুড়ে ঢেউয়ের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠছে পর্যটন সম্ভাবনা। গুপ্তছড়া ঘাটের কাছে রয়েছে একটি মনোরম ম্যানগ্রোভ বন, যেখানে রয়েছে পাখিদের রাজ্য বক, চিল, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, বালিহাঁস, টিয়া, ঘুঘু—সবাই দল বেঁধে মাছ শিকার করে, জেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
সন্দ্বীপের রহমতপুর পুরাতন স্টিমার ঘাট এলাকা হয়ে উঠতে পারে প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্যতম গন্তব্য। এখানে দাঁড়িয়ে একনজরে দেখা যায় মেঘনার নীল জলরাশি, মাছ ধরার দৃশ্য আর আকাশের বুকে সন্ধ্যার আগে রঙধনুর মিতালি। এসবের টানে পর্যটকরা বারবার ছুটে আসছেন।
কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, এখানে রয়েছে দেশীয় মাছ, হাঁস-মুরগি, দুধ, দই, খেজুর রস, শাকসবজি আর নানা কৃষিপণ্যের সমাহার। মাঝ দরিয়ার সবুজ বেষ্টনী প্রকৃতির এক অপূর্ব মূর্তি হয়ে ধরা দেয় দর্শনার্থীদের চোখে।
ভ্রমণপথও এখন বেশ সহজ। চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়কপথে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট, সেখান থেকে স্পিড বোটে মাত্র কয়েক মিনিটেই পা রাখা যায় দ্বীপে। এমনকি ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় এখন মোটরসাইকেল বা গাড়ি নিয়েও যাওয়া সম্ভব।
তবে বাধা রয়ে গেছে কিছু। নেই সরকারি পর্যটন হোটেল-মোটেল, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ট্যুরিস্ট পুলিশের দেখা মেলে না, অবকাঠামোগত সুবিধাও সীমিত।
স্থানীয়রা বলছেন, পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে সন্দ্বীপ হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। একই আশা জানালেন সন্দ্বীপের রাজনৈতিক নেতারাও। তারা বলেন, ‘‘সন্দ্বীপকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করার আশ্বাস দেন। এখন এখানে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, ব্লক বেড়িবাঁধ সবই দৃশ্যমান উন্নয়নের পথে। পর্যটনে গতি আনতে আর বাধা নেই।’’
সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, পর্যাপ্ত আবাসন, রেস্টহাউজ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা গেলে সন্দ্বীপ হয়ে উঠবে বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য। আর এতে কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনি বদলে যাবে দ্বীপবাসীর অর্থনৈতিক ভাগ্যও।
সন্দ্বীপকে ঘিরে সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। এখনই সময় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেওয়ার।
এআরই/বাংলাধারা