মানুষের জীবন কখনো সরলরেখায় চলে না। কখনো তা আঁকাবাঁকা, কখনো ছায়াঘেরা, কখনো ঝলমলে আলোকিত। আর এই জীবনের পথেই কিছু মানুষ আবির্ভূত হন আলোর বাহক হয়ে। যাঁদের চোখে থাকে উপলব্ধির দীপ্তি, হৃদয়ে থাকে সেবার অঙ্গীকার। ঠিক তেমনই একজন মানুষ হচ্ছেন অ্যাস্ট্রোলজার কামরুল হাসান। তাঁর পরিচয় কেবল একটি পেশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি একজন পরামর্শদাতা, মানবিক জ্যোতিষ, একজন অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন শ্রোতা এবং সত্যিকার অর্থে একজন “মন বোঝা মানুষ”। জ্যোতিষশাস্ত্রের ছায়ায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের গভীর অর্থ যেখানে আকাশের নক্ষত্র আর মানুষের অন্তরের অন্ধকার এক সুতোয় বাঁধা।
ছোট ছেলেটির চোখে ছিল আকাশ দেখার সাহস:
১৯৮৮ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি, পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের জুজাইন এলাকায় জন্ম হয় কামরুল হাসানের। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরে তাঁর জন্ম, যেখানে স্বপ্ন দেখার চেয়ে বাস্তবতা মোকাবিলাই ছিল প্রতিদিনের প্রেরণা।
শৈশবেই হারিয়েছেন পিতাকে। কৈশোরে দেখেছেন পরিবারের চোখের জল। কিন্তু কোনোদিন দমে যাননি। বরং প্রতিটি সংকটকেই তিনি দেখেছেন জীবন অনুধাবনের একটি ধাপ হিসেবে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় তাঁর আত্মপ্রবঞ্চনা জীবনের গহীনে কি আছে, মানুষের হাসির আড়ালে কি চাপা কান্না?
প্রথম থেকেই তাঁর ছিল অন্তর্জ্ঞানের প্রতি টান। সাধারণ খেলাধুলার বদলে তিনি মগ্ন থাকতেন আকাশ দেখতে, মানুষের হাতে রেখা খুঁজতে, মুখের ভাষা পড়তে। এ যেন এক শিশু জ্যোতিষীর জন্ম, সে জানত না কী নাম তার জ্ঞানের, কিন্তু অনুভব করত মানুষকে বোঝার এক রহস্যময় দরজা তার কাছে খুলে যাচ্ছে।
জ্ঞানসাধনায় পথচলা:
বিদ্যালয়জীবন শুরু করেন কামরাঙ্গীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কদমতলীতে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক শিক্ষা গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর সত্যিকারের ভালোবাসা ছিল জ্যোতিষচর্চার প্রতি।
এই ভালোবাসাকে বিজ্ঞানসম্মত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভর্তি হন “Bangladesh Institute of Astrology”-তে। সেখান থেকে অর্জন করেন “Diploma in Astrology Science” ডিগ্রি।
এখানেই শেষ নয়। তিনি ক্রমাগত নিজেকে বিকশিত করেছেন ভারত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, ইউরোপসহ নানা দেশের জ্যোতিষ দর্শন, সংখ্যাতত্ত্ব ও হস্তরেখাবিদ্যার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে।
জ্যোতিষচর্চা মানে মানবসেবা:
আজকের দিনে অনেকেই জ্যোতিষকে কেবল ভাগ্য গণনার যন্ত্র হিসেবে দেখেন। কিন্তু কামরুল হাসান দেখেন একে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। তাঁর কাছে জ্যোতিষ মানে ভাঙা মনকে জোড়া দেওয়া, অন্ধকারে পথ খোঁজা, দুঃসময়ে কাউকে বলার মতো একজন মানুষ হয়ে ওঠা।
তাঁর ভাষায়: “আমি কাউকে ভয় দেখিয়ে কিছু বলি না। আমি চাই মানুষ শক্ত হোক। আমি শুধু তাকে তার ভেতরের আলোটা চিনিয়ে দিই। সেই আলোয় সে নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।”
কত মা তাঁর সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কান্না করেছেন তাঁর সামনে, কত তরুণ তার ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ হয়ে এসেছেন, কত সংসার ভেঙে যাওয়ার পথে এসে ফিরে গিয়েছে তাঁর কথায় এই অসংখ্য গল্পের ভেতর কামরুল হাসান হয়ে উঠেছেন বিশ্বাসের প্রতীক।
সম্মান ও স্বীকৃতির গল্প:
জ্যোতিষশাস্ত্রে তাঁর অবদানের জন্য দেশে-বিদেশে তিনি পেয়েছেন বহু সম্মাননা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
World Astrology Society থেকে সম্মানজনক Jyotish Gyan Ratna উপাধি ,World Astrology Association এর Life Time Membership, আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোলজি সংস্থার Gold Medal Award এসব পুরস্কার শুধু কাগুজে পদক নয়, বরং প্রমাণ করে বাংলাদেশের মাটিতেও জ্যোতিষশাস্ত্রের এমন একজন সাধক রয়েছেন যাঁর চিন্তা, দর্শন ও চর্চা আন্তর্জাতিক মানের। এছাড়াল দেশ-বিদেশে অনলাইন/অফলাইনে মিলছে তাঁর পরামর্শ
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তাঁর শরণাপন্ন হন। অনেকে ফিরে যান শান্তির আশ্বাস নিয়ে। কেউ বলেন, “আমার জীবনটা বুঝি আজ নতুন করে শুরু হলো।”
এক স্বপ্নের মানুষ: ভবিষ্যতের নির্মাতা:
কামরুল হাসানের জীবনকাহিনি আমাদের শেখায় ,সত্যিকারের আলোকিত মানুষ হতে গেলে প্রয়োজন অন্তরদৃষ্টি, মনন, সহানুভূতি আর অদম্য সাধনা। তাঁর ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বাংলাদেশে জ্যোতিষশাস্ত্রকে গবেষণাভিত্তিক শিক্ষায় রূপান্তর করা। তিনি চান, যেন মানুষ ভয় নয় ভরসা নিয়ে জ্যোতিষীর কাছে আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, জ্যোতিষ হতে পারে এক নতুন জীবন গড়ার হাতিয়ার।
শেষ কথায় এক আরাধনার গল্প:
কামরুল হাসান শুধু একজন জ্যোতিষী নন। তিনি সময়ের পাঠক, আত্মার ভাষ্যকার, অন্ধকারে পথ দেখানো এক দীপ্ত চরণচিহ্ন।
যখন মানুষ ভেঙে পড়ে, তিনি তখন বলেন:
“এই জীবনে কোনো গ্রহ এমন নেই, যেটা তোমার ভাগ্যকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তুমি চাইলে তুমি পারো। আমি শুধু তোমাকে সেই ‘তুমি’টার দিকে নিয়ে যাবো।” এটাই কামরুল হাসান। এক মানবিক তারকা, যিনি নিজের আলোয় জ্বালিয়ে দেন আরও অসংখ্য প্রাণ।