২৩ অক্টোবর ২০২৫

সাগরিকায় বর্জ্যের আড়ালে পরিবেশ ধ্বংসের নোংরা খেলা, অধরা ‘ময়লা ডন’ মোশাররফ

সাগরিকা শিল্প এলাকার পরিবেশ দূষণ ও জনদুর্ভোগ নিয়ে বাংলাধারার বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের তিনদিন পার হলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন আলোচিত কন্ট্রাক্টর মোশাররফ। একদিকে পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি, অন্যদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষের নিরবতা—সব মিলিয়ে যেন মোশাররফ হয়ে উঠেছেন ‘ময়লা বাণিজ্যের’ একচ্ছত্র অধিপতি !নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে এখনও প্রকাশ্যে বর্জ্য ফেলে রাখছেন এই ব্যক্তি।

গতকাল শুক্রবার(৩০ মে) রাত ৮টার দিকে সরেজমিনে সাগরিকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি কারখানার বর্জ্য এবার ফুটপাতে নয়—রেখা হয়েছে গাড়ির ভেতর। কিন্তু জায়গাটা সেই পুরনো, সি মার্ক ও রিলেক্স কারখানার মধ্যবর্তী স্থান। টানা বৃষ্টিতে এসব বর্জ্য পচে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দিনদিন এলাকার বাতাসই হয়ে উঠছে বিষাক্ত।

বর্জ্যের পেছনে কোটি টাকার খেলা!

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বিডি ফুডস, এপেক্স ও সি মার্ক কারখানার বর্জ্য অপসারণের দায়িত্বে থাকা কন্ট্রাক্টরদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কে এই বর্জ্য কিনে থাকেন মোশাররফ। পরে সেগুলো দিনের পর দিন জমিয়ে রেখে পাচার করেন কক্সবাজারে।

মোশাররফের সাবেক ঘনিষ্ঠ ওয়াসিম নামে একজন ফোনে জানান, “প্রতিমাসে মোশাররফ এরশাদ, সেলিম মেম্বার ও মহসিনকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দিয়ে থাকেন। আগে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করলেও সরকার পরিবর্তনের পর সেজে গেছেন বিএনপি নেতা!”

ওয়াসিম আরও দাবি করেন, এসব অনিয়মের কথা স্বীকার করায় মোশাররফ তাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

মোশাররফের পেছনে যাদের ‘পেশিশক্তি’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে—তারা হলেন বিডি ফুডসের এরশাদ, এপেক্সের সেলিম মেম্বার ও সি মার্কের মহসিন। অভিযোগের বিষয়ে কথা বললে তারা সরাসরি অস্বীকার করেন।

তাদের ভাষ্য, “মোশাররফ আমাদের কাছ থেকে সামান্য টাকা দিয়ে বর্জ্য নিয়ে যায়। পরে সে কি করে, তা আমাদের জানা নেই।”

পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশন যা বলছে

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, শিল্পবর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ দিনের পর দিন চলছে এসব অনিয়ম। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুক্তাদির হাসান বলেন, “আমরা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা প্রধান কর্মকর্তা আই. ইউ. এ. চৌধুরী জানান,“সেই জায়গায় দায়িত্বরত কর্মকর্তার অনিয়মের কারণেই এমন হচ্ছে। আমরা শিগগিরই একজন নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে ব্যবস্থা নেব।”

এক সময় আওয়ামী লীগ নেতা, এখন বিএনপি পরিচয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বর্জ্য বাণিজ্য। অভিযোগ আছে, ময়লার আড়ালে চলছে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি। রাজনৈতিক পরিচয় বদল করেও অনিয়মের থামা নেই। প্রশ্ন উঠেছে—এই মোশাররফ কি আইনের ঊর্ধ্বে? জনগণের ভাষ্য, দল পাল্টালেও ধরণ পাল্টায়নি। মোশাররফ যেন অনিয়মের ডন!”

আরও পড়ুন