কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পরিচালিত ইউনিসেফের শিক্ষা কার্যক্রম অর্থসংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু।
সোমবার (২ জুন) ইউনিসেফের কক্সবাজার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কর্মকর্তা এঞ্জেলা কার্নে। তিনি বলেন, জুন মাসের শেষ নাগাদ শিক্ষা কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকবে, তবে পরবর্তীতে এটি চালু হবে কিনা তা নির্ভর করছে নতুন তহবিল পাওয়ার ওপর।
বর্তমানে ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে ৪ হাজার ৫০০টিরও বেশি লার্নিং সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। কার্নে জানান, অর্থ না থাকায় পাঠ্যবই সরবরাহ বন্ধের চিন্তাও করা হচ্ছে। পুরনো বইগুলো পুনর্ব্যবহার করে নতুন শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষে গ্রেড ১ ও ২-এর আওতাভুক্ত বাংলাদেশি স্থানীয় শিক্ষকরা চাকরিতে থাকবেন না। এতে চাকরি হারাবেন প্রায় ১ হাজার ১৭৯ জন শিক্ষক। পরবর্তীতে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন মূলত রোহিঙ্গা শিক্ষকরা। পাশাপাশি, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও সামাজিক শিক্ষা বাদ দিয়ে কেবল বার্মিজ ভাষা, গণিত, জীবন দক্ষতা ও সামাজিক মানসিকতা বিষয়গুলো পড়ানো হবে।
শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের খবরে স্থানীয় শিক্ষকরা উখিয়ায় আন্দোলনে নেমেছেন। তারা সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। আন্দোলনকারী সাফফাত ফারদিন চৌধুরী বলেন, “হোস্ট এরিয়া উখিয়া মগের মুল্লুক নয়, যে-যখন যা খুশি সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের চাকরি অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হলে আমরা কঠোর অবস্থান নেব।”
এ বিষয়ে ইউনিসেফ কর্মকর্তা কার্নে বলেন, “এটা কোনো বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নয়, পুরোপুরি অর্থসংকটের কারণে নেওয়া হয়েছে। আমাদের ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক কাজ করছেন, কেবল গ্রেড ১ ও ২-এ পরিবর্তন আসবে।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়া সরকারের নীতির বিরুদ্ধে। তাছাড়া, স্থানীয়দের কর্মসংস্থানে এটি একটি বড় ভূমিকা রাখছিল। আমরা ইউনিসেফ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি জানিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা কার্যক্রমে ইংরেজি বাদ দেওয়াটাও আমাদের নীতির পরিপন্থী। আমরা চাই রোহিঙ্গারা ইংরেজি শিখুক।”
রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী টিকে অং মাইয়েং বলেন, “লার্নিং সেন্টার বন্ধ হলে রোহিঙ্গা শিশুদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এসব কেন্দ্রই তাদের সুরক্ষা বলয় হিসেবে কাজ করে।”
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর চেয়ারম্যান মাস্টার মো. জোবায়ের বলেন, “রোহিঙ্গা শিশুরা বিশ্বের সবচেয়ে অসহায়। তাদের কাছে শিক্ষা বিলাসিতা নয়, এটি জীবনের আশা ও নিরাপত্তার প্রতীক।”
তিনি বলেন, “যে খবর আমরা শুনছি, তা আমাদের গভীরভাবে মর্মাহত করেছে।”
এআরই/বাংলাধারা