২৩ অক্টোবর ২০২৫

চসিকের রাজস্ব বিভাগে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষায় পদোন্নতির অভিযোগ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি অফিস আদেশে মোট ৮ কর্মকর্তার বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে। এসব আদেশে অন্তত পাঁচজন comparatively নবীন কর্মকর্তা ‘ভারপ্রাপ্ত উপ–কর কর্মকর্তা’ পদে পদায়িত হয়েছেন, যাদের জ্যেষ্ঠতা তালিকায় অবস্থান পিছনের দিকে। জ্যেষ্ঠদের উপেক্ষা করে এমন পদায়নে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে অসন্তোষ ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

চসিকের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পদোন্নতির নিয়ম ও জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় না এনে কিছু কর্মকর্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উচ্চতর দায়িত্বে বসানো হয়েছে। ফলে বছরের পর বছর ধরে কর্মরত ও অপেক্ষমাণ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন।

দুই অফিস আদেশ, আটজন বদলি
২৭ মে ও ৩ জুন, সাত দিনের ব্যবধানে জারি হওয়া দুটি অফিস আদেশে বদলি বা পদায়নের আওতায় আনা হয় আটজন কর্মকর্তাকে।
এই আটজনের মধ্যে চারজন কর আদায়কারী, তিনজন উপ-কর কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবং একজন অনুমতিপত্র পরিদর্শক।
নতুন আদেশে পাঁচজন কর আদায়কারী ও অনুমতিপত্র পরিদর্শককে এক ধাপ ওপরের পদে (ভারপ্রাপ্ত উপ-কর কর্মকর্তা) পদায়ন করা হয়। বাকি তিনজনকে স্ব পদে বদলি করা হয়।
বিষয়টি ঘিরে অভিযোগ উঠেছে—পদোন্নতি যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও একাধিক নবীন কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠদের উপরে বসানো হয়েছে।

যাঁরা হয়েছেন পদায়িত
২৭ মে অফিস আদেশ বদলি/পদায়ন করাদের মধ্যে রাজস্ব সার্কেল–১ এর কর আদায়কারী (নাসিরাবাদ ৩য় অংশ) মো. সাখাওয়াত হোসেনকে একই সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত উপকর কর্মকর্তা (কর) পদে পদায়ন করা হয়। চসিকে তাকে স্থায়ী করা হয় ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর। চসিক জ্যেষ্ঠতার তালিকায় তার অবস্থান ১২৪ তম।

এছাড়া রাজস্ব সার্কেল–২ এর কর আদায়কারী (জয়নগর ২য় অংশ) রমিজুল হাছানকে একই সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত উপকর কর্মকর্তা (কর) পদে পদায়ন করা হয়। চসিকে তাকে স্থায়ী করা হয় ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় তার অবস্থান ১৪৩ তম। রাজস্ব সার্কেল–৩ এর কর আদায়কারী (পশ্চিম বাকলিয়া চতুর্থ অংশ) দিদারুল আলমকে রাজস্ব সার্কেল–৭ এর ভারপ্রাপ্ত উপকর কর্মকর্তা (কর) পদে পদায়ন করা হয়। চসিকে তাকে স্থায়ী করা হয় ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় তার অবস্থান ৩৭ তম। রাজস্ব সার্কেল–৮ এর কর আদায়কারী (দক্ষিণ হালিশহর তৃতীয় অংশ) মাহাবুবুল আলমকে রাজস্ব সার্কেল–২ এর ভারপ্রাপ্ত উপ–কর কর্মকর্তা (কর) পদে পদায়ন করা হয়। চসিকে তাকে স্থায়ী করা হয় ১৯৯৯ সালের ২০ জুলাই। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় তার অবস্থান ২৩।

বিধিমালা কী বলছে?
চসিকের চাকরি বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী, উপ–কর কর্মকর্তা পদে পদায়নের জন্য কর আদায়কারী, ওয়ারেন্ট অফিসার, বাজার পরিদর্শক কিংবা অনুমতিপত্র পরিদর্শক পদে কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যাঁদের পদায়ন করা হয়েছে—তাঁদের মধ্যে মো. সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাছান মাত্র এক বছর চাকরি করেছেন। অন্যদিকে মাহবুবুল আলম চাকরি করছেন ২৫ বছর, দিদারুল ও জাফর প্রায় ৬ বছর ৭ মাস।
অর্থাৎ নিয়ম অনুসারে কয়েকজন একেবারেই যোগ্য নন, অথচ তারাও পদে বসেছেন।

প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার ব্যাখ্যা

জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি মেয়রকে দেখিয়ে দেন। বলেন মেয়রের আদেশে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো পদোন্নতি না। এটা হচ্ছে স্ববেতনে অতিরিক্ত দায়িত্ব। অন্য কারো পদোন্নতি হলে তাদের স্ব পদে চলে যেতে হবে। তাই কারো বঞ্চিত হওয়ার কথা না। এছাড়াও প্রতিবেদকের কর্মরত প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।,

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন “নিয়ম তো নিয়মই। জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্স—সবকিছুর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আসা উচিত। এক বছর চাকরি করে কেউ কিভাবে উচ্চপদে যায়?”

ভবিষ্যতে কী প্রভাব পড়তে পারে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে নিয়ম উপেক্ষা করে পদায়ন চালু থাকলে তা প্রতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও মনোবলে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এতে কর্মক্ষেত্রে অসন্তোষ, গ্রুপিং এবং অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে।
চসিকের অভ্যন্তরেও অনেকে মনে করছেন, “টার্গেট পূরণ” বা “পছন্দের লোক” পদায়নের সংস্কৃতি দীর্ঘমেয়াদে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশাসন গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

প্রশ্নবিদ্ধ স্বচ্ছতা
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগে সাম্প্রতিক রদবদলে জ্যেষ্ঠতার প্রশ্নে অসন্তোষ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
নিয়ম থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ হয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
পদায়নকে ‘পদোন্নতি নয়, দায়িত্ব’ হিসেবে ব্যাখ্যা দিলেও আদতে বিষয়টি নিয়োগ ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্নে বড়সড় বার্তা দিচ্ছে—বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন