২৩ অক্টোবর ২০২৫

হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে সদ্যোজাত সন্তানকে দত্তক দিলেন মা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় এক হতদরিদ্র মা আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে সদ্যোজাত সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিনিময়ে হাসপাতালের চিকিৎসা বিল পরিশোধ ও কিছু নগদ টাকা গ্রহণ করেছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণফুলীর কলেজ বাজার এলাকার সাউথ চট্টগ্রাম হাসপাতালে।

জানা গেছে, শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে আনোয়ারা উপজেলার খিলপাড়া গ্রামের জয়া দাশ (৩৮) একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য ও সংসার ভাঙনের পর তিনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ অবস্থায় চাকরিও হারান জয়া। পরে প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে সাউথ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সন্তান জন্মের পর জয়া ও তার পরিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান, তাদের পক্ষে চিকিৎসা বিল পরিশোধ সম্ভব নয়। তখন এক নার্সের মাধ্যমে একটি নিঃসন্তান দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং ওই দম্পতির কাছে নবজাতককে দত্তক দেওয়া হয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দত্তকপ্রাপ্ত দম্পতি হাসপাতালের বিল বাবদ ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং জয়ার হাতে ৫ হাজার টাকা দেন। তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি সাদা কাগজে লিখিত একটি মুচলেকা ছাড়া কোনো আইনি কাঠামোর আওতায় হয়নি।

জয়ার বাবা পরিমল দাশ বলেন, “মেয়ে ডিভোর্সের পর অসহায় অবস্থায় আছে, আগের সংসারে একটি সন্তান রয়েছে। আমি কৃষিকাজ করি, সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমরা বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তিনি আরও জানান, “যাদের কাছে দত্তক দেওয়া হয়েছে, তারা হাটহাজারী এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। নার্সের মাধ্যমেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল।”

এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, নবজাতক হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলেও তাকে দত্তক দেওয়া হয়েছে মুসলিম পরিবারে, যা পরবর্তীতে আইনি জটিলতার কারণ হতে পারে।

সাউথ হাসপাতালের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, “এটি দুই পরিবারের ব্যক্তিগত সমঝোতা। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা নেই।” তবে নার্স জড়িত কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

ঘটনার বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জেবুননেসা বলেন, “বিষয়টি জানার পরপরই একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। তারা জানিয়েছে, আর্থিক দুরবস্থার কারণেই পরিবারের সম্মতিতে শিশুটি দত্তক দেওয়া হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াটি অবশ্যই আইনি হওয়া উচিত ছিল।”

এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ওসির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি থানায় জানানোর পরও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন জানান, “বাংলাদেশে মুসলিমদের জন্য দত্তক নেওয়ার আইনগত বিধান নেই, তবে অভিভাবকত্ব নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেটিও ‘গার্ডিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট, ১৮৯০’ এর আওতায় পারিবারিক আদালতের অনুমতির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়।”

তিনি বলেন, “শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে এবং ধর্মীয় ও সামাজিক বিবেচনায় এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ জরুরি।”

এআরই/বাংলাধারা

আরও পড়ুন