আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন-ক্ষণ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়নি। তবে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে দলটির মধ্যে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে। ফলে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এতে করে প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের হিমশিম খেতে হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা নিজ নিজ এলাকায় চালাচ্ছেন গণসংযোগ, সভা-সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি। অনেকেই দলের হাইকমান্ডের নজরে আসতে নানা সুপারিশ সংগ্রহেও ব্যস্ত সময় পার করছেন। একেকটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে দেখা দিচ্ছে বিভাজন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে একক প্রার্থী। ফলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে।
চট্টগ্রাম-৮(বোয়ালখালী ও মহানগরীর একাংশ)
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা ও মহানগরের চান্দগাঁও থানা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসন। এ আসনটি শহর ও গ্রামের মিশ্রভিত্তিক হওয়ায় এখানে মহানগর বিএনপির রাজনীতিরও সরাসরি প্রভাব রয়েছে। একসময় এই আসনে বিএনপির জাঁদরেল প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকতেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম. মোরশেদ খান।
তবে এবার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। দুজনই ইতোমধ্যে মাঠে বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। এলাকায় গণসংযোগ, রাজনৈতিক সভা ও সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ফলে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত কাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
চট্টগ্রাম-১২(পটিয়া)
চট্টগ্রামের পটিয়া নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১২ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন একাধিক প্রভাবশালী নেতা। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম , দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমেদ।
পটিয়া বিএনপির রাজনীতিতে গাজী শাহজাহান জুয়েল ও এনামুল হক এনামের রয়েছে পৃথক বলয় ও অনুসারী। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে এই দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। অতীতে একাধিকবার তাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কার ঝুলিতে যায়—তা নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অন্যদিকে সৈয়দ সাদাত আহমেদও কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে মনোনয়নের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)
দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলাপ নিয়ে চট্টগ্রান ১৩ আসন। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন একাধিক পরিচিত মুখ। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম আবারও মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি এলাকায় এখনো তার রাজনৈতিক ভিত্তি ধরে রেখেছেন।
এছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম. মামুন মিয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ আলী আব্বাস এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, তিনি দলের প্রয়োজনে আনোদালন সঙংগ্রামে মাঠে ছিলেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ)
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে চারজনের নাম নিয়ে আলোচনা চলছে দলীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় পরিবার পরিকল্পনা সম্পাদক প্রফেসর মহসিন জিল্লুর করিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মিজানুল হক, সাবেক ছাত্রদল নেতা এম এ হাশেম রাজু এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার।
প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলের মনোনয়ন পেতে।
চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া)
এ আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অন্তত চারজন নেতা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন, মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন এবং সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল হোসেন।
প্রত্যাশী এসব নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীরও শক্ত অবস্থান রয়েছে। দলটির মহানগরীর সাবেক আমীর শাহজাহান চৌধুরী এই আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে একাধিক পরিচিত মুখ। সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা। পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচিতি এবং সাংগঠনিক সম্পৃক্ততায় তিনি দলীয় মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার হিসেবে বিবেচিত।
এছাড়াও এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ তথ্যনুযায়ী , দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংসদীয় আসন সমূহে মোট ভোটার সংখ্যা ২৬ লাখ ৩২ হজার ৪শ ৩৫জন।
এআরই/বাংলাধারা