২৩ অক্টোবর ২০২৫

বায়েজিদে পুলিশের পাহারায় অবৈধ ভবন নির্মাণ

প্রশাসনের একপক্ষ বলছে নোটিশ গেছে, অন্যপক্ষ বলছে মিথ্যা কথা!

চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন বর্মা কলোনি। সাধারণ মানুষের বসবাসের এলাকা হলেও সেখানে এখন চলছে আইনের তোয়াক্কা না করে ভবন নির্মাণের মহোৎসব। সরকারি অনুমোদন, নকশা বা ছাড়পত্র ছাড়াই সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে তিন তলা ভবন—যার পেছনে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মোহাম্মদ ইউসুফ।

অভিযোগ, ইউসুফ অবৈধভাবে রিফিউজি জায়গা দখল করে এই ভবন নির্মাণ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা এই বেআইনি নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করলেও থামেনি নির্মাণ কাজ। উল্টো এরপর থেকেই এলাকায় শুরু হয়েছে সন্ত্রাসী তৎপরতা। তবে বাংলাধারার হাতে আসা তথ্য চিত্রে দেখা যায় পুলিশি পাহারায় চলছে ভবন নির্মাণের কাজ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের একাংশ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ইউসুফ ও তার ভগ্নিপতি আরজু। একজন এলাকাবাসী বলেন, “যার পেছনে প্রভাবশালী পরিবার, তাদের জন্য আইন ভিন্ন। আমরা বললেই হয় মানববন্ধনের পর হুমকি আসে, আর কাজ চলে আরও জোরে।”

প্রশাসনের ভিন্নমত

বাংলাধারা’র হাতে থাকা তথ্যচিত্রে দেখা গেছে—দিনে ও রাতে, দুই সময়েই ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এই বিষয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের এক নিরাপত্তা প্রহরীর সংশ্লিষ্টতার খবর পায় বাংলাধারা। অথচ সেই নিরাপত্তাকর্মী রহিম বলেন, “আপনারা ভুল তথ্য দিচ্ছেন। সেখানে এখন কোনো নির্মাণ কাজ চলছে না।”  তবে বাস্তব চিত্র রহিমের বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করছে।

ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, “এই ভবন নির্মাণ অবৈধ। আমরা পুলিশকে কাজ বন্ধের জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। যদি কাজ না থামে, তাহলে আমরা আরও জোরালো পদক্ষেপ নেব।”

কিন্তু বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বাংলাধারাকে বলেন, “আমাদের কাছে কোনো নোটিশ আসেনি। ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ওই কর্মকর্তা মিথ্যা বলছেন।”

পুলিশ কি নিরপেক্ষ?

পুলিশি পাহারার বিষয়ে জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার ওসি বলেন, “এটা পুলিশের ভবন না, পাবলিকের। আমরা পাহারা দিচ্ছি না।” অথচ ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে—সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে।

এলাকাবাসীর দাবি, ইউসুফের পরিবারের কিছু সদস্য প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে থাকায় তিনি এ কাজ করতে পারছেন অনায়াসে। “আমরা শুধু চাই, এখানে আইনের শাসন থাকুক। প্রশাসন নিজেই যদি অপরাধে জড়িত থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?” —বলেন এক ভুক্তভোগী।

ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় বলছে—অবৈধ ভবনের কোনো বৈধতা নেই, নোটিশও গেছে। পুলিশ বলছে—নোটিশই আসেনি। প্রভাবশালীর দখলে থাকা জমিতে আইনের তোয়াক্কা না করে চলছে নির্মাণ। প্রশাসনের একেকটি সংস্থার পরস্পর বিরোধী অবস্থানই প্রমাণ করে—এই ঘটনায় সত্য চাপা পড়ে আছে ক্ষমতার ছায়ায়। সাধারণ মানুষ আজও জানতে চায়, অবৈধ ও দুর্নীতির এই অপকর্মের শেষ কোথায়?

আরও পড়ুন