২৩ অক্টোবর ২০২৫

ধ্বংসস্তূপে পরিণত সিএমবি সড়ক: জনদুর্ভোগের শেষ কোথায়?

চট্টগ্রামের সিএমবি এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা যেন অভিভাবকহীন অবহেলিত এক বাস্তবতা। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত, প্রতিদিন দুর্ঘটনা—তবুও চুপ প্রশাসন।

চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ এক সংযোগস্থল সিএমবি এলাকার সড়কটি যেন আর সড়ক নয়—ধ্বংসস্তূপ। খানা-খন্দে ভরা, ধুলা-বালি ও পানির জোয়ারে আক্রান্ত এই সড়ক যেন রোজ নীরবে গিলছে দুর্ঘটনা, কষ্ট আর যন্ত্রণা। এই সড়কে প্রতিদিন চলাচল করে লক্ষাধিক মানুষ, যার অধিকাংশই দিনমজুর, দোকানি, শিক্ষার্থী, গৃহবধূ কিংবা রিকশাচালক। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে এই সড়ক এখন পরিণত হয়েছে জনভোগান্তির প্রতীক হিসেবে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, “এখানে গত ১৭ বছর ধরে কোনো সংস্কারের কাজ হয় নাই। প্রতিদিন ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। গতকাল এক ছোট বাচ্চা রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলে। আমি নিজেই টাকা দিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠাইছি।”

দুর্ঘটনার ফাঁদে প্রতিনিয়ত

এই সড়কের খানা-খন্দগুলো যেন দুর্ঘটনার ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এখানে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। ছোট থেকে বড় যানবাহনের জন্য এই রাস্তা চলাচলযোগ্য তো নয়ই, বরং প্রতিনিয়ত যান্ত্রিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাস্তায় চাকা পড়লেই থেমে যাচ্ছে গাড়ি, খুলে পড়ছে পার্টস, খরচ হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

এক কাভার্ড ভ্যান চালক ‘বাংলাধারা’কে বলেন, “এই রোডে চলাচল করা খুবই কষ্টের। প্রতিদিন গাড়ির পার্টস নষ্ট হয়। এই গর্তগুলা পার হইতেই গাড়ি থেমে যায়। জনগণের ভোগান্তি তো আছেই।”

রাস্তার পাশে আরেক ‘সমস্যা’র নাম ফুটপাথ দখল

সিএমবি এলাকার এই দুরবস্থার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ফুটপাথ দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট। সাধারণ মানুষের চলাচলের জায়গা ফুটপাথে এখন কাপড়, ফল, জুতা কিংবা চা-সিগারেটের দোকান। এ কারণে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, আর যানবাহন চালকদের পোহাতে হচ্ছে অতিরিক্ত ঝুঁকি।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক দিন ধরে এই রাস্তাটা খারাপ। কেউ দেখে না, কেউ করে না। সিটি কর্পোরেশন না দেখছে, না কিছু করছে।”

ধুলাবালি ও জমে থাকা পানিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি

শুষ্ক মৌসুমে এই রাস্তায় ধুলোর ঝড়, বর্ষায় পানি জমে গিয়ে পথই চেনা যায় না। এই পানি জমে তৈরি করছে মশার অভয়ারণ্য। এতে এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু, চর্মরোগ, ফুসফুসের রোগ, সর্দি-কাশিসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

গাড়ির অবৈধ পার্কিং, ময়লার স্তূপ – নৈরাজ্য সর্বত্র

এই সড়কে আরও একটি বড় সমস্যা হলো অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও যত্রতত্র ময়লা ফেলা। রাস্তার পাশেই ফেলে রাখা হচ্ছে আবর্জনা। এর ফলে পরিবেশ যেমন নোংরা হচ্ছে, তেমনি দুর্গন্ধ ও মশার প্রকোপে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।

প্রশাসনের অবস্থান কী?

এই সমস্ত সমস্যা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান:

“এটি আমাদের ডেভেলপ করার ট্রায়াল হয়েছে, কিছু স্ট্রাকচারাল চেইঞ্জ করার কাজ চলমান। রাস্তার সংস্কার তো এখন আমাদের রুটিন কাজের মধ্যে পড়ে। তবে বর্ষার সময় বিটুমিনের কাজ করা যায় না, তাই আমরা ইঞ্জিনিয়ারদের বলেছি, বড় গর্তগুলো আপাতত কংক্রিট দিয়ে ভরাট করতে।”

ফুটপাথ দখল নিয়ে তিনি জানান:

“ফুটপাথ উচ্ছেদ অভিযান আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।”

এলাকাবাসীর প্রশ্ন—সমাধান কবে?

অভিযোগ আছে, বারবার জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সড়ক সংস্কার, ফুটপাথ উচ্ছেদ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ময়লার নিয়ন্ত্রণ—সবই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন—প্রতিদিন যেখানে লাখো মানুষ এই দুর্ভোগে পড়ছে, সেই সড়ক ঠিক করতে কেন এত দেরি?

চট্টগ্রামের সিএমবি সড়ক যেন এক প্রতীক—উন্নয়নশীল শহরের অন্ধকার দিক, যেখানে উন্নয়নের গল্পের ছায়ায় চাপা পড়ে থাকে জনজীবনের বাস্তব কষ্ট। প্রশাসনের গাফিলতি আর দুর্নীতির ছায়া যদি এখানেও কাজ করে, তবে প্রশ্ন থাকে—এই সড়ক আর কখনো ‘সড়ক’ হয়ে উঠবে তো?

বাংলাধারা/এফইএমএফ

আরও পড়ুন