চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ নারায়নহাট টু মির্জারহাট বাজার সড়কে উন্নয়নকাজে চরম গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ESB Ltd- Famantech (jv)–এর বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের জানুয়ারীতে টেন্ডার সম্পন্ন হলেও ওয়ার্ক অর্ডারের পায় এপ্রিলে। ওয়ার্ক অর্ডারের চার মাস পর জুলাই মাসে এসে সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু শুরুতেই একযোগে চারটি কালভার্ট খনন করে সড়কটি পুরোপুরি অচল করে দেওয়া হয়—তাও কোনো বিকল্প পথ না রেখেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অপরিকল্পিত খননের ফলে চলাচলের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। বর্ষার সামান্য বৃষ্টিতেই খনন করা স্থানগুলো কাদা-পানিতে ভরে যায়। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে নারায়নহাট ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, নারায়নহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, নারায়নহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়নহাট উচ্চ বিদ্যালয়, মদিলা মাদ্রাসা সহ একাধিক প্রাথমিক ও নূরানী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
হাঁপানিয়া, উত্তর সুন্দরপুর, বাজারটিলা, সাপমারা সহ ১নং ও ২নং ওয়ার্ডের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এই সড়কের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কাজের ধীরগতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেই সড়ক এখন তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, “চার মাস বসে থাকার পর এখন কাজ শুরু করেছে, তাও একসাথে চারটা কালভার্ট খুঁড়ে রেখেছে। চলার কোনো রাস্তা রাখেনি। স্কুলগামী বাচ্চারা হাঁটতে পারে না, রোগী নিয়ে বের হওয়াও কষ্টকর।”
অন্য এক বাসিন্দা বলেন, “এই রাস্তায় এখন অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা, রিকশাও ঢুকতে পারে না। বৃষ্টি হলে কোমরসমান কাদা জমে যায়।”
এদিকে দুর্ভোগের শিকার শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।নারায়নহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “প্রতিদিন স্কুলে যেতে গিয়ে কাদায় পড়ে জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় জুতা হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়। একদিন কাদায় পড়ে গিয়ে জখমও হয়েছি। এমন অবস্থায় পড়াশোনায় মন বসে না।”
একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র শাকিল হোসেন বলেন, “হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পা কাদায় আটকে যায়। স্কুলে পৌঁছাতে ১৫ মিনিটের পথ এখন লাগছে প্রায় এক ঘণ্টা। বিশেষ করে আমাদের মেয়ে সহ-পাঠীরা খুব বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। ”
এলাকার ষাটোর্ধ বয়সী একটি বৃদ্ধ বলেন, “এই বয়সে কাদা মাড়িয়ে হাঁটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। হাঁটতে গিয়েই পড়ে গিয়ে হাত কেটেছি, লুঙ্গিতে কাদা লেগেছে। এখন আর বাড়ি থেকে বের হই না। রাস্তা ঠিক না হলে আমাদের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।”
সূত্র জানায়, সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার বরাদ্দ হয়েছে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান ESB Ltd- Famantech (jv)–এর মালিক আরিফুল আরিফ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আরিফুল আরিফ বলেন, “আবহাওয়া ও কিছু কারিগরি জটিলতার কারণে আমরা নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে ইতোমধ্যে শ্রমিক ও উপকরণসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
তবে একযোগে চারটি কালভার্ট খননের যৌক্তিকতা ও বিকল্প সড়ক না থাকার বিষয়ে তিনি কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
উপজেলা প্রধান প্রকৌশলী (এলজিইডি) তন্ময় নাথ বলেন, “আমাদের সাথে সমন্বয় না করে কালভার্ট নির্মাণের জন্য রাস্তা কাটা হয়েছে। এতে টানা বর্ষণে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটা স্থানের পাশ দিয়ে চলাচলের বিকল্প রাস্তা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। বিকল্প রাস্তা করে না দিলে তখন আমরা প্রয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
এলাকাবাসীর দাবি, ঠিকাদারের গাফিলতির পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডির তদারকির অভাবেই এই উন্নয়ন প্রকল্প এখন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। তারা দ্রুত বিকল্প সড়ক নির্মাণ ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষের জোর দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাধারা/এফইএমএফ