২৩ অক্টোবর ২০২৫

কোন রাজনীতিবিদ যদি ইলিগ্যাল কাজে জড়িয়ে যায় তাহলে সাংবাদিকরা তা তুলে ধরবে’-হুম্মাম কাদের চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি মাসের পরে নির্বাচন করার চেষ্টা করা হলে কিংবা নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমাম কাদের চৌধুরী।

সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কাদের নগর নিজস্ব বাস ভবনে রাঙ্গুনিয়ায় কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে রাজনীতিবিদরা ঠিক রাস্তায় ফেরত আসবে। অন্ততপক্ষে রাজনীতিবিদদের মনের মধ্যে যেনো সেই ভয়টা থাকে, কোন রাজনীতিবিদ যদি ইলিগ্যাল কাজে জড়িয়ে যায় তাহলে তা সাংবাদিকরা তুলে ধরবে। রাজনীতিবিদরা যেনো আপনাদের কাজের মাধ্যমে ঠিক রাস্তায় থাকেন সেই প্রত্যাশা করি

তিনি বলেন, ‘ইন্টেরিয়াম গর্ভমেন্টের দুর্বলতা যেখানে যেখানে ধরতে পেরেছি, সেগুলো নির্বাচন বাদে ঠিক করা সম্ভব হবে না। আমাদের দেশের পক্ষ থেকে বাইরের রাষ্ট্রগুলোর সাথে নেগোসিয়েট করার মেন্ডেট কিন্তু বর্তমান সরকারের নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়েও দ্বন্ধে রয়েছে। কারণ এই সরকারের কোন মেন্ডেট নেই। তাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোপুরি নির্ভর হয়ে গেছে সেনাবাহিনীর ওপর। কিন্তু উনাদের তো ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে এবং যে দায়িত্বটা পুলিশের করার কথা, সেটা পুলিশ করবে। এভাবে বাংলাদেশকে যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয়, সেটা নির্বাচন ছাড়া কোন উপায় নেই।আর এটার জন্য যদি আবার রাজপথে নামতে হয়, তবে আমরা নামবো।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপি নেতা সৈয়দ ফজলুল করিম মিনা, শওকত আলী নূর, হাজী ইলিয়াছ সিকদার, হেলাল উদ্দিন শাহ, নুরুল ইসলাম, ভিপি আনছুর উদ্দিন, মাকসুদুল চৌধুরী মাসুদ,সৈয়দ ছাবের,আবুল হোসেন চৌধুরী, মহসিন তালুকদার, ফারুকুল ইসলাম,রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আবু বক্কর সদস্য সচিব হেলাল আহমদ,জাহাঙ্গীর, সাইদুল ইসলাম ইফাক, ইয়াকুব মাস্টার, শহিদুল ইসলাম,লোকমান, এমরান,রাব্বি,সারেক, তারেক,প্রমুখ।

হুমাম কাদের বলেন, ” রাজনীতিবিদরা যখন ক্রিটিসিজমের বাইরে চলে যায়, তখন তারা যা ইচ্ছে, তাই করে ফেলে। নিজেদের রাজত্ব মনে করে সবকিছু। রাজনীতিবিদরা কোথায় ভুল করছে, বাড়াবাড়ি করছে এগুলো ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব সাংবাদিকদের। মিডিয়ার কাজ হচ্ছে চেক এন্ড ব্যালেন্স করা। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলো চলে গিয়েছিলো। গত ১৭ বছর সাংবাদিকরা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে, আপনারা যে লিখবেন, কিছু তুলে ধরবেন সেটা আপনাদের সঠিকভাবে করতে দেয়া হয়নি। স্বৈরশাসন যখন শুরু হয়েছিলো, তার প্রথম ধাক্কাটা সাংবাদিকদের ওপর পড়েছিলো। আশাকরি এই নোংরা রাজনীতি থেকে দেশ বের হয়ে আসবে।”

হুমাম কাদের বলেন ‘ রাঙ্গুনিয়ায় এনজিও ব্যবসা ছাড়া হাছান মাহমুদ আর কিছু করেনি। ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প থেকে যে ফান্ডগুলো আনা হয়েছে তার এক টাকাও রাঙ্গুনিয়ার মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। হাছান মাহমুদের নামে সম্ভবত ২২টা এনজিও রেজিস্ট্রার্ড আছে। ইনভায়রনমেন্ট মিনিস্টার থাকা অবস্থায় যত লুট হয়েছে, যে টাকা পাচার উনি করেছেন, তা দিয়ে মিনিমাম ২০ বছর রাঙ্গুনিয়া চালানো যেতো। এগুলো তদন্ত করতে হবে। রাঙ্গুনিয়ার যে রাস্তা দিয়ে যায়, মুরব্বিরা বলেন এই রাস্তা আপনার বাবা করেছেন। তাহলে হাছান মাহমুদ করলোটা কী? রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নের জন্য কাপ্তাই সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক প্রশস্ত, বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। ”

রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির একাধিক গ্রুপে বিভক্তি ভোটে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে হুমাম কাদের বলেন, ” গত দুটি অবৈধ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি একটা প্লানিং নিয়ে এগিয়েছিলো। আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের ডিসকোয়ালিফাই করার চেষ্টা করবে৷ তাই প্রতিটি আসনে তিনজন করে প্রার্থী রেডি করেছিল। যাতে একজনকে বাদ দিলে বিকল্প প্রার্থী পাওয়া যায়। এটার কারণে আমাদের কিছুটা গ্রুপিং সৃষ্টি হয়ে গেছে। যেটা এখন আমাদের ফেস করতে হচ্ছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচনে যখন একজন প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে যাবে, তখন প্রতীক দেখে এবং দলকে ভালবেসে সবাই একটি প্লাটফর্মে চলে আসবে। ‘

হুমাম কাদের বলেন, ” জিয়া পরিবার যেভাবে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। আমাদের নেত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হল, উনাকে কারাগারে পাঠানো, তারেক রহমানকে নিয়ে ১/১১ থেকে শুরু হয়েছে, নানা নির্যাতন, এরপর উনি দেশছাড়া হয়েছেন। এরকম শত নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে মনে করছেন উনি দেশে ফিরে এলে এর বদলা নিবেন। কিন্তু আমি যতবার তারেক রহমানকে বলেছি, ভাইয়া ক্ষমতায় আসলে কিন্তু সব কটাকে দেখে নেবো। কিন্তু উনি আমাকে বলেছেন, হুমাম মাথা ঠান্ডা রাখো। যে জুলুম নির্যাতন আমাদের ওপর হয়েছে, তা আল্লাহ মাফ করবে না। উনি আসলেই ধৈয্যের প্রমাণ দিয়েছেন। ফেরেস্তা নিজে এসে আন্দোলন সফল করেছেন। শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে আমরা চেষ্টা করেছি মাত্র, হুকুম আল্লাহর ছিলো বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। ‘

নিজের পিতার মৃত্যুর বিচার প্রসঙ্গে হুমাম কাদের বলেন, ” আপনারা আমার বাবার নামের আগে শহীদ বলেন। কিন্তু উনাকে যেভাবে জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে, সেটা আদালতেই প্রমাণ হোক। আমাদের চাওয়া, উনাকে প্রহসনের বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে খুন করা হয়েছে, সেই প্রমাণ যেনো আদালতের মাধ্যমে হয়।”

 

 

বাংলাধারা/এফইএমএফ

আরও পড়ুন