২৩ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানে হেলিকপ্টার থেকে গুলি, সাবেক আইজিপির চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি

"স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় রাতের বৈঠকে আন্দোলন দমনের প্ল্যান, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত!"

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান দমনে রাষ্ট্রযন্ত্র কীভাবে কাজ করেছিল, তার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আদালতীয় জবানবন্দিতে।

গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া তাঁর এই জবানবন্দিতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি, ব্লক রেইড এবং গোপন বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি মামুন জানান, আন্দোলন দমনের জন্য একপর্যায়ে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির গোপন পরিকল্পনা করা হয়। তিনি দাবি করেন, র‍্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই অপারেশন পরিচালিত হয়। তবে এতে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তিনি জানান।প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুনের জবানবন্দি অনুযায়ী, ততকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই নির্দেশনা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়।

জবানবন্দিতে আরও উঠে এসেছে, আন্দোলন দমনের জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিদিন রাতে কোর কমিটির গোপন বৈঠক হতো। এসব বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, বাহিনীপ্রধান ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকতেন। বৈঠকে আন্দোলন দমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতো।

৪ আগস্ট রাতে গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক জরুরি বৈঠকের কথাও জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়। এই বৈঠকে শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, মন্ত্রী, তিন বাহিনীপ্রধান ও আইজিপি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ৫ আগস্টের জমায়েত দমন নিয়ে আলোচনা হয় এবং ঢাকা শহরে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জবানবন্দিতে আরও দাবি করা হয়, আন্দোলন সমন্বয়কারীদের আটক, মানসিক নির্যাতন ও টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ঘটনায় ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সরাসরি ভূমিকা ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান হারুন অর রশীদকে “জিন” নামে ডাকতেন এবং সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাঁকে অত্যন্ত কার্যকর মনে করতেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি জানান, পুলিশ সঠিক ভূমিকা পালন করেনি। তাঁর মতে, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে পুলিশ কাজ করেছে এবং ওবায়দুল কাদের ও “নানক সাহেব” এর মতো নেতারা ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় তিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন। তাঁর এই জবানবন্দি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

 

বাংলাধারা/এফইএমএফ

 

আরও পড়ুন