আনোয়ারায় চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) শ্রমিক-কর্মচারীরা ঐক্যজোট “এক করপোরেশন এক পে স্কেল” বাস্তবায়ন ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কর্ণফুলী থানাধীন রাঙ্গাদিয়া সার কারখানার প্রধান ফটকের সামনে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। একই দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মাধ্যমে শিল্প উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এতে সিইউএফএল সার কারখানার কর্মকর্তা শ্যামল কান্তি নাথের সঞ্চালনায় সৈয়দ আসলাম আলীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিইউএফএল কারখানার এমও জালাল আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি আনোয়ারুল আজীম সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলম মজুমদার, সিনিয়র সহ-সভাপতি হারুন উর রশিদ, এমও রবিউল ইসলাম খান, সিইউএফএল এমপ্লয়িজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম চৌধুরী, সিবিএ আইন বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান, এইচএসটি মাহমুদুল হাসান ডালিম, কারখানার এইচএসও ইউসুফ আলম খান, সিবিএ সহ-সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির, কারখানার এসও নওশাদ আরমান সাকিব প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, সরকারি স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সবার জন্য এক পে-স্কেল কিংবা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল থাকলেও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসির প্রতিষ্ঠানসমূহে একই সাথে দুটি ভিন্ন বেতন স্কেল বিদ্যমান। কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন স্কেল থাকলেও কারখানার মূল চালিকাশক্তি সুদক্ষ অপারেটর এবং টেকনিশিয়ানদের আজও বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে বৈষম্যপূর্ণ মজুরি স্কেলে।
এ বৈষম্যের কারণে অপারেটর-টেকনিশিয়ানরা বরাবরই সরকারি ঘোষিত নানা প্রণোদনা-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনকে অতিসত্বর জাতীয় পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করে চলমান এ বৈষম্যের দ্রুত সমাধান চাই।
তাঁদের সঙ্গে এমন বৈষম্য আর সহ্য করা হবে না জানিয়ে বক্তারা বলেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার পে-স্কেলভুক্ত সকলকে ৫% প্রণোদনা দিলেও বঞ্চিত করেছে মজুরি স্কেলভুক্ত সাধারণ শ্রমিকদের, যাদের জন্য এ প্রণোদনা ছিল সবচেয়ে বেশি জরুরি।
বর্তমান সরকার সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৫% বিশেষ সুবিধা কার্যকর করলেও দুঃখজনকভাবে মজুরি স্কেলভুক্ত শ্রমিকদের এই বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ফলে জুলাইয়ের পর আমরা যে বৈষম্যহীন ন্যায্য মজুরি এবং সাশ্রয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম তা অন্ধকারে গেছে।
তাই সাধারণ শ্রমিকদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি পূর্বের ঘোষিত ৫% প্রণোদনার এরিয়ার বকেয়া এবং বর্তমান সরকার ঘোষিত ১৫% বিশেষ সুবিধা বাস্তবায়নের পাশাপাশি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে ইউরিয়া উৎপাদন পুনরায় চালুর দাবি জানান শ্রমিক-কর্মচারীরা।
সিইউএফএল কারখানা সূত্র জানায়, পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর এ কারখানায় দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাস সংকট ও যান্ত্রিক নানা সমস্যা থাকায় গত অর্থবছর কারখানাটিতে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়।
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন, তার মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। অবশিষ্ট ১৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।
গত দুই বছরে কখনো যান্ত্রিক ত্রুটিতে, কখনো গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল সিইউএফএল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুধু পাঁচ দিন চালু ছিল এ কারখানা। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ার পর ১৩ অক্টোবর সিইউএফএল চালু হয়।
এ বছরের ৩ জানুয়ারি আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দীর্ঘ সময় লাগে কারখানাটি চালু করতে। সর্বশেষ যাবতীয় স্টার্টআপ (কারখানা চালু প্রক্রিয়া) শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার সময় কারখানা চালু হয়।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কারখানা চালু হওয়ার সময় দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। পাশাপাশি বার্ষিক ৩ লাখ ১০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল।