বাংলাধারা প্রতিবেদন »
সম্প্রতি নগরীতে টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলজটে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এ নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় নগরবাসীদের মধ্যে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ‘র বাস্তবায়নাধীন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সিডিএ‘র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামবাসীর সমীপে’ শিরোনামে একটি বিবৃতি পোস্ট করেন। নিচে তাঁর বিবৃতিটি তুলে ধরা হল।
জলাবদ্ধতা সমস্যা একটি দীর্ঘদিনের জটিল সমস্যা যা বহু বৎসর যাবৎ চট্টগ্রামবাসীকে কষ্ট দিচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন ছিল সুদূরপ্রসারী মহা পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নে সরকারি অনুমোদন। কিন্তু অতীতে দেখা গিয়েছে অত্যন্ত সীমিত আকারে কিছু নিত্য নৈমিত্তিক কাজের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছিল যুগের পর যুগ। প্রথমে উচিত ছিল জলাবদ্ধতার কারণ সমূহ চিহ্নিত করা এবং প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের অনুমোদন নিয়ে তার সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই কাজটি করার জন্য অতীতে কেউ সাহস করে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
জলাবদ্ধতা সমস্যা ভয়াবহ রুপ ধারণ করে যখন চট্টগ্রামের অভিশাপ হিসেবে দেখা দিল তখন মমতাময়ী মা জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসলেন এবং সিডিএ কে নির্দেশ দিলেন এই সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য। তাঁরই নির্দেশে সিডিএ জলাবদ্ধতার কারণ সমূহ চিহ্নিত করে প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিলেন। সিডিএ’র বিবেচনায় জলাবদ্ধতার কারণ সমূহের মধ্যেঃ-
১)
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগর এবং নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া এবং কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং নিয়মিত না করার কারনে
নদী ভরাট হয়ে যাওয়া যার ফলে অতি বৃষ্টিপাতের সময়ে জোয়ারের পানি শহরে ঢুকে যাওয়া।
২) পাহাড়ের বালিতে খাল, নালা সমূহ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং খাল ও নালার জায়গা
অবৈধভাবে দখল করে নেয়া।
৩) খাল ও নালার মধ্যে
পলিথিন সহ বিভিন্ন রকমের
ময়লা আবর্জনা ফেলা।
৪) খাল পারাপারের জন্য নির্মিত ব্রীজ ও কালভার্ট সমূহ
নিচু হওয়া এবং ব্রীজের নিচে স্থাপিত বিভিন্ন পাইপ লাইনের কারনে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং খালের পাড়ে যাতায়াতের জন্য কোন রাস্তা না থাকায় নিয়মিত
খাল পরিস্কারে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়া।
৫) নগরায়নের কারনে জলাধার গুলি বিলীন হয়ে যাওয়া। ইত্যাদি
এই সমস্ত কারণ সমূহের উপর ভিত্তি করে সিডিএ অতি জোয়ারে জোয়ারের পানি যাতে শহরে ঢুকতে না পারে এবং অতি বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি পাম্প আউট করা যায় তার জন্য প্রথম প্রকল্প হিসাবে চাক্তাই খালের মূখ থেকে কালুরঘাট ব্রীজ পর্যন্ত ১২ টি খালের মূখে সুইচগেট সহ রাস্তা কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে যা পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় অনুমোদন প্রদান করেন যার কাজ ইতিমধ্যে সিডিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এই প্রকল্প ৩ বৎসর মেয়াদের।
খাল খনন, খাল পরিস্কার, খালের ২ পাশে দেয়াল নির্মাণ, নিচু ব্রীজ উঁচু করন, নিচের পাইপ লাইন সমূহ প্রতিস্থাপনকরন, খালের এক পাশে রাস্তা নির্মাণ, জলাধার নির্মাণ ও খালের ভিতর সীলট্রেপ নির্মাণ ও ৫টি খালের মুখে সুইচগেইট নির্মাণ সহ বহুমুখী কাজের জন্য “খাল খনন ও খাল সংস্কার” নামে সিডিএ ২য় প্রকল্প গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে একনেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয় যার সুষ্ঠ বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পুরোপুরি তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এই দুইটি প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৮০০০ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি সমস্যা সমাধানে ৮০০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়ার মত দুঃসাহসিক উদ্যোগ কোন সরকার, কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তি গ্রহণ করেছে বলে অতীতের কোন নজির নাই। এখানে উল্লেখ্য যে চলমান প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত জনগণ তার সুফল পায়না বরঞ্চ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় জনগনের দুর্ভোগ কোন কোন ক্ষেত্রে আর ও বেড়ে যায় এবং এটাই স্বাভাবিক। তাই প্রকল্প সমূহের কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পতেঙ্গা থেকে সদরঘাট এবং কালুরঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ২৩ টি সুইচগেট সহ কর্ণফুলী এবং হালদা নদীর পাড়ে ফ্লাডওয়াল নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা ইতিমধ্যে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে এবং অতি শিগ্রই উক্ত প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নিশ্চিত করেছেন।
শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৬ বৎসর পূর্বে নতুন খাল খননের যে প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন তা পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে ইতিমধ্যে চূড়ান্তভাবে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে যার কার্যক্রম শিগ্রই শুরু হবে।
অপরদিকে ভরাট হয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং এর কাজ ও ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী কর্তৃক শুরু করা হয়েছে।
অর্থাৎ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে যা যা করনীয় তা বর্তমান সরকার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা শুরু করেছে। উপরোল্লিখিত এই সমস্ত প্রকল্প গুলোর কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান আশা করা ঠিক হবেনা। সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল প্রকল্পের অনুমোদন যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের প্রতি সীমাহীন আন্তরিকতা ও ভালবাসার কারনে সম্ভব হয়েছে।
এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এই সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল নালা কিংবা খালে পলিথিন সহ যাবতীয় ময়লা আবর্জনা ফেলার অভ্যাস পরিবর্তন করা এবং অবৈধভাবে দখলকৃত খাল ও নালার জায়গা ছেড়ে দেয়া। তাতে যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে সরকারের দেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সুদূরপ্রসারী সুফল পাওয়া যাবেনা।
এই ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সকলের সক্রিয় ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে চট্টগ্রামের অভিশাপ হিসাবে খ্যাত জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম
 
				












