২৮ অক্টোবর ২০২৫

শিক্ষার্থীরা মাঠে নয়, স্ক্রিনেই সময় কাটায় বেশি যা কোনোভাবেই কাম্য নয়: কাদের গনি চৌধুরী

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, “ক্রীড়াই তারুণ্য, ক্রীড়াই শক্তি। জাতির সুস্থতা, আনন্দ ও গৌরব ক্রীড়াতেই নিহিত।” তাই জাতীয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে; সুস্থ দেহ ও মন কাজের প্রতি আগ্রহ এবং গতি বাড়ায়।

সোমবার রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে ‘জুলাই স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্ট’-এর মেগা ফাইনাল খেলার উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। টুর্ণামেন্টের আয়োজন করে জুলাই ঐক্য পরিষদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জুলাই আন্দোলনে প্রথম শহীদ ওয়াসিমের পিতা মো. শফিউল আলম। প্রধান বক্তা ছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নজরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সারোয়ার আলম, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার, এনসিপি নেতা একরামুল হক, ছাত্র অধিকার পরিষদের রবিউল হাসান তানজিম, ক্রীড়া সংগঠক ও যুবদল নেতা এম মোর্শেদ হাজারী, মনসুর চৌধুরী, আজম খান, ওসমান তাহের সম্রাট, বেলাল উদ্দিন মুন্না, রিফাত চৌধুরী ও মো. মুজিবুর রহমান প্রমুখ।

শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার গুরুত্ব

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের প্রয়োজন সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবন। আর এ জন্য খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা।

তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল, যখন মাঠ কিংবা স্কুল-কলেজের খেলার চত্বর ছিল শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। এখন তেমনটি চোখে পড়ে না। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নতুন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”

মাঠহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা

তিনি আরও বলেন, “স্কুল থাকবে, মাঠ থাকবে না— শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারবে না, এটা কি ভাবা যায়? মাঠের অভাবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার চর্চা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, কিন্তু তাদের কার্যক্রম কেবল পাঠদানে সীমাবদ্ধ। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠের অভাব প্রকট। তিনি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

শারীরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি

তিনি প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার প্রতিটি স্তরে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, “তা না হলে বছরে দুই-চারটি টুর্ণামেন্ট আয়োজন রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শারীরিক শিক্ষার প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকলেও বিষয়টি অবহেলিত, বিশেষ করে কলেজ পর্যায়ে। তাই কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি চালু করা এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রভাষক পদে উন্নীত করা উচিত।”

মোবাইল আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ

বর্তমান প্রজন্মের মোবাইল ফোন আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এখন মাঠে যেতে চায় না। তারা স্ক্রিনেই সময় কাটায় বেশি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর ফলে ভবিষ্যতে একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ জাতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইন্টারনেটের এই যুগে আমরা স্মার্টফোনের গেম খেলতে খেলতে সত্যিকারের খেলা প্রায় ভুলে গেছি। কিন্তু খেলাধুলা শরীরের জন্য যেমন দরকারি, তেমনি মনের সুস্থতার জন্যও উপকারী। খেলাধুলা শুধু ছোটদের জন্য নয়, বড়দের জন্যও সমান প্রয়োজনীয়।”

আরও পড়ুন