আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। তিনি বিএনপির ত্যাগী নেতাদের একজন। দুঃসময়ে রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলনে ছিলেন এবং মাঠের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতা। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তিনি অত্যন্ত সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বিএনপির এই নতুন মুখের আগমন ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে ‘বাংলাধারা’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জনাব কাদের গনি চৌধুরী তুলে ধরেছেন আদ্যোপান্ত। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলাধারার বিশেষ প্রতিবেদক ফাহাদ ইফরানুল।
বাংলাধারা: আপনি আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কতটা প্রস্তুত, এবং স্থানীয় পর্যায়ে আপনার সাংগঠনিক অবস্থান বর্তমানে কেমন?
কাদের গনি চৌধুরী: আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে মাঠপর্যায়ে যুক্ত। বলা যায়, শৈশবকাল থেকেই। দল একটাই, আর সেটার নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ১৯৮৬ সালে আমি যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, তখন মাইজভান্ডার আঞ্চলিক শাখা ছাত্রদলের সেক্রেটারি নির্বাচিত হই। এরপর কলেজে পড়াকালীন কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে কিছুদিন সক্রিয় ছিলাম। এরপর আমি সাংবাদিকতায় যোগ দিই।
রাজনীতিতে আঁকড়ে থাকার জন্য আমি ছাত্রদল থেকে সরে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস)-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। ওই বছরই আমি জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হই। পরবর্তী কমিটিতে আমাকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়।
আমার সক্রিয় কর্মকাণ্ডের জন্য ২০১৬ সালে আমাকে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সাল থেকে ফটিকছড়িতে বিএনপির কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছিল। দলের সে দুর্দিনে আমি ফটিকছড়ির তরুণদের নিয়ে এলাকায় দলকে সুসংগঠিত করি। আমার ও স্থানীয় অন্যান্য নেতাদের পরিশ্রমের কারণে চট্টগ্রাম-২ আসনে দলের প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে।
আন্দোলনের দিনগুলোতে আমি নিজে মাঠে ছিলাম, নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। এখন নির্বাচনের জন্যও আমি সর্বাত্মক প্রস্তুত রাজনৈতিকভাবে, সাংগঠনিকভাবে ও মানসিকভাবে। স্থানীয়ভাবে আমার একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান তৈরি হয়েছে, যা আমি জনগণের ভালোবাসা ও আস্থার প্রতিফলন হিসেবেই দেখি।
বাংলাধারা: দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ‘ত্যাগী নেতা’ বনাম ‘নতুন মুখ’ এই বিতর্ককে আপনি কীভাবে দেখছেন? আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখেন?
কাদের গনি চৌধুরী: আমি মনে করি, বিএনপি সবসময় ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে এসেছে। নতুন মুখ আসবে, সেটি দলের প্রাণবন্ততার অংশ; তবে ত্যাগী নেতাদের অবদান উপেক্ষা করা যায় না। আমি নিজেকে ত্যাগী কর্মী হিসেবেই দেখি যিনি দুঃসময়ে রাজপথে থেকেছেন, কারাবরণ করেছেন, সাংবাদিক সমাজ ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দলের আদর্শ তুলে ধরেছেন।
দলের নেতৃত্ব নিশ্চয়ই এই ত্যাগ, অভিজ্ঞতা ও জনগণের সংযোগকে গুরুত্ব দেবে। এছাড়াও দল শিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের গুরুত্ব দেবে। শুধু ‘ইয়েস’ আর ‘নো’ বলতে জানাদের সংসদে নিয়ে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় করবে না।
বাংলাধারা: শোনা যাচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন আপনি কি তাঁর কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা বা উৎসাহ পেয়েছেন?
কাদের গনি চৌধুরী: তারেক রহমান সাহেব সবসময়ই মাঠের কর্মীদের খোঁজ রাখেন। আমাদের মতো যারা সংগঠনের ভিতরে কাজ করি, তাঁদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আমি তাঁর কাছ থেকে রাজনৈতিক নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তিনি যে ত্যাগী, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব চান আমি সেই মানদণ্ডেই নিজেকে প্রস্তুত করছি।
বাংলাধারা: দীর্ঘ সময় ধরে দলের আন্দোলন, মামলা ও কারাবন্দিত্বের পর এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
কাদের গনি চৌধুরী: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিএনপির নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে, কিন্তু জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল অটুট। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো সংগঠনকে একতাবদ্ধ রাখা এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রমুখী করা। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের জাগরণই এই চ্যালেঞ্জকে জয় করবে।
বাংলাধারা: ফটিকছড়িতে দলে দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃকোন্দল চলছে, বিশেষ করে সেখানে বিএনপি দুটি গ্রুপে বিভক্ত তাতে নির্বাচন কতটা প্রভাবিত হতে পারে বলে মনে করেন?
কাদের গনি চৌধুরী: বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল। এখানে মতপার্থক্য থাকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি ঐক্যবদ্ধ। আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমি এও মনে করি, আমরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আলোয় আলোকিত। দল সমর্থন না করলে আমরা কেউ কিছুই না। তাই ভাইয়ের নয়, দলের রাজনীতি আমাদের করতে হবে।
আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহযোদ্ধা এবং সহযাত্রী হিসেবে দেখি। আমার কাজ হচ্ছে দলের পতাকা উঁচু রাখা এবং জনগণের পাশে থেকে তাদের আস্থা অর্জন করা।
বাংলাধারা: দলের ভিতরে কি এখনো আস্থা সংকট বা গোষ্ঠী রাজনীতি আছে? থাকলে তা কীভাবে সমাধান করা উচিত বলে মনে করেন?
কাদের গনি চৌধুরী: যেকোনো বড় রাজনৈতিক দলে মতের পার্থক্য থাকে, কিন্তু আমি এটাকে ‘গোষ্ঠী রাজনীতি’ বলব না। আমাদের মধ্যে মাঝে মাঝে কৌশলগত ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে লক্ষ্য একটাই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। দলের নেতৃত্ব যদি ত্যাগী ও মাঠের নেতাদের মূল্যায়ন করে, তাহলে আস্থা আরও দৃঢ় হবে। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ।

বাংলাধারা: যদি মনোনয়ন না পান, তাহলে দলের হয়ে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন করার বিষয়ে আপনার অবস্থান কী হবে?
কাদের গনি চৌধুরী: আমি বিএনপির রাজনীতি করি কোনো ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, আদর্শের জন্য। মনোনয়ন পাওয়া বা না পাওয়া বড় বিষয় নয় বড় বিষয় হচ্ছে দলকে শক্তিশালী রাখা। যদি দল অন্য কাউকে প্রার্থী করে, আমি তাঁর পক্ষে কাজ করব, কারণ বিজয় মানে হবে গণতন্ত্রের বিজয়, বিএনপির বিজয়।
বাংলাধারা: আপনার নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে বিএনপির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে আপনি কী পরিকল্পনা নিয়েছেন বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে?
কাদের গনি চৌধুরী: তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তন চায়, আর বিএনপি সেই পরিবর্তনের রাজনীতি করে। আমি তরুণদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি ডিজিটাল, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক প্রচারণা চালাতে চাই। ফটিকছড়ির শিক্ষিত ও প্রবাসী তরুণদের সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও গণতন্ত্র এই তিন বিষয়কে কেন্দ্র করে আমরা তরুণদের আস্থা ফিরিয়ে আনব।
সংক্ষেপে কাদের গনি চৌধুরী:
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সাংবাদিক হিসেবে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে কাদের গনি চৌধুরী আমার দেশ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক দিনকাল-এ সিনিয়র রিপোর্টার ও বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্বে থাকা কাদের গনি চৌধুরী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কাদের গনি চৌধুরী খ্যাতিমান সাংবাদিক হিসেবে দেশের নানা মহলে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। ক্ষুরধার, মেধাবী সাংবাদিক হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
ওয়ান-ইলেভেন ও হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমলে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন সবাই আত্মগোপনে, তখনও তিনি লেখনি ও রাজপথে সোচ্চার ছিলেন। সে সময় ভয়ে যখন বেশির ভাগ নেতা-কর্মী মুখে কুলুপ আটকে রাখেন, তখন কাদের গনি চৌধুরী দিনকাল-এ নিয়মিত তারেক রহমানের বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের উপর নিজ নামে ধারাবাহিক স্টোরি ছাপেন।
ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের আমলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে ১১’শ সাংবাদিকের দেওয়া বিবৃতি তিনি সমন্বয় করেন। এই দাবিতে সাংবাদিকরা অন্তত ২০টি সমাবেশ করেন; এগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন কাদের গনি চৌধুরী।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলেও রাজপথে তাঁর সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকার কারণে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ফ্যাসিস্ট আমলে কখনো দলের ব্যানারে, কখনো পেশাজীবীদের ব্যানারে, আবার কখনো সাংবাদিকদের ব্যানারে প্রায় প্রতিদিনই রাজপথে সোচ্চার ছিলেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ও ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান শুরু হলে তিনি এর প্রতিবাদে সাংবাদিকদের ও পেশাজীবীদের ব্যানারে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সেই ঘোর দুর্দিনে প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিদিনই তাঁকে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক দুর্নীতির ডকুমেন্টারি তিনি তৈরি করেন। তাঁর প্রণীত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শ্বেতপত্রটি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান উপস্থাপন করেন।
২০১৪ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক গঠিত গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে তিনি এলাকায় গিয়ে এ-সংক্রান্ত তিন খণ্ডের প্রতিবেদন খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেন। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০২৩ সালে বিএনপির সমাবেশে তাণ্ডব চালানোর দিন তাঁকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তাঁর নিকেতনের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই সময় অন্তত ছয় দফা তাঁর বাসায় পুলিশ হানা দেয়। দীর্ঘদিন তিনি ঘর ছেড়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়ান। কিন্তু দমে যাননি। সে সময় প্রতিদিনই তাঁকে কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে।
আপোসহীন ও সংগ্রামী ভূমিকার কারণে তিনি সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
কাদের গনি চৌধুরী শুধু রাজনীতিকই নন, তিনি সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের শীর্ষ নেতা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব।
কাদের গনি চৌধুরী বিভিন্ন সময় জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগ আমলে শত নিপীড়নের মাঝেও তিনি প্রতিদিন প্রেস ক্লাবে যেতেন এবং জাতীয়তাবাদী ঘরানার সাংবাদিকদের সংগঠিত করতেন। যার কারণে সাংবাদিকদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
পেশাজীবী নেতা হিসেবে কাদের গনি চৌধুরী হাসিনার পতন আন্দোলনে ব্যাপক অবদান রাখেন। পেশাজীবীদের কর্মসূচির পাশাপাশি বিএনপির প্রতিটি সমাবেশে তিনি পেশাজীবীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।
২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কমিটি গঠন করা হয় এবং কাদের গনি চৌধুরীকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আড়াই বছরে তাঁর নেতৃত্বে ১০৩টি সভা, সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা, গোলটেবিল বৈঠক, মানববন্ধন ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা প্রেস ক্লাবের সামনে একটানা ২৩ দিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। ৩ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণহত্যা বন্ধ ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সাংবাদিকরা ঢাকা রাজপথে মিছিল বের করেন। কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক এ মিছিলে অংশ নেন।
মিছিল শেষে সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। প্রেস ক্লাবের কর্মচারীদের সহযোগিতায় তিনি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। ওই রাতেই পুলিশ হানা দেয় তাঁর বাসায়।
আরও এক মাস আগে থেকেই তিনি বাসা-বাড়ি ছেড়ে ফেরারি জীবনযাপন করছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৪ আগস্ট প্রেস ক্লাবের সামনে তাঁর নেতৃত্বে পেশাজীবীরা শেখ হাসিনার পতনের একদফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে প্রায় ২ হাজার পেশাজীবী জড়ো হন প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে।
বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রথমে পুলিশ টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে সমাবেশ পণ্ড করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর পেশাজীবীরা আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে সমাবেশ শুরু করলে হাইকোর্টের দিক থেকে পুলিশ এবং পল্টনের দিক থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়।
সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী ও কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে পেশাজীবীরা প্রতিরোধ ব্যূহ তৈরি করেন। সে দিন পেশাজীবীরা জীবন-মরণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পেশাজীবীদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ মানুষ। বিক্ষুব্ধ পেশাজীবী-জনতা প্রেস ক্লাবের সামনের পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। পুলিশের আরও দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দিলে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়।
পরের দিন ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পেশাজীবী সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে থেকে পেশাজীবী ও জনতার যোগ দেওয়ার কথা ছিল এই সমাবেশে। সকাল ৭টায় কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান ও প্রফেসর ড. লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে পেশাজীবীরা শহীদ মিনারে জড়ো হতে চাইলে পুলিশ টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরে পেশাজীবীরা সাংবাদিকদের ব্যানারে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর এলে প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক মিছিল বের করেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ও কাদের গনি চৌধুরী।
একান্ত সাক্ষাৎকারে কাদের গনি চৌধুরী
‘ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নই বিএনপিকে শক্তিশালী করবে’
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। তিনি বিএনপির ত্যাগী নেতাদের একজন। দুঃসময়ে রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলনে ছিলেন এবং মাঠের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতা। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তিনি অত্যন্ত সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বিএনপির এই নতুন মুখের আগমন ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে ‘বাংলাধারা’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জনাব কাদের গনি চৌধুরী তুলে ধরেছেন আদ্যোপান্ত। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলাধারার বিশেষ প্রতিবেদক ফাহাদ ইফরানুল।
বাংলাধারা: আপনি আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কতটা প্রস্তুত, এবং স্থানীয় পর্যায়ে আপনার সাংগঠনিক অবস্থান বর্তমানে কেমন?
কাদের গনি চৌধুরী: আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে মাঠপর্যায়ে যুক্ত। বলা যায়, শৈশবকাল থেকেই। দল একটাই, আর সেটার নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ১৯৮৬ সালে আমি যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, তখন মাইজভান্ডার আঞ্চলিক শাখা ছাত্রদলের সেক্রেটারি নির্বাচিত হই। এরপর কলেজে পড়াকালীন কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে কিছুদিন সক্রিয় ছিলাম। এরপর আমি সাংবাদিকতায় যোগ দিই।
রাজনীতিতে আঁকড়ে থাকার জন্য আমি ছাত্রদল থেকে সরে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস)-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। ওই বছরই আমি জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হই। পরবর্তী কমিটিতে আমাকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়।
আমার সক্রিয় কর্মকাণ্ডের জন্য ২০১৬ সালে আমাকে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সাল থেকে ফটিকছড়িতে বিএনপির কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছিল। দলের সে দুর্দিনে আমি ফটিকছড়ির তরুণদের নিয়ে এলাকায় দলকে সুসংগঠিত করি। আমার ও স্থানীয় অন্যান্য নেতাদের পরিশ্রমের কারণে চট্টগ্রাম-২ আসনে দলের প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে।
আন্দোলনের দিনগুলোতে আমি নিজে মাঠে ছিলাম, নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। এখন নির্বাচনের জন্যও আমি সর্বাত্মক প্রস্তুত রাজনৈতিকভাবে, সাংগঠনিকভাবে ও মানসিকভাবে। স্থানীয়ভাবে আমার একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান তৈরি হয়েছে, যা আমি জনগণের ভালোবাসা ও আস্থার প্রতিফলন হিসেবেই দেখি।
বাংলাধারা: দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ‘ত্যাগী নেতা’ বনাম ‘নতুন মুখ’ এই বিতর্ককে আপনি কীভাবে দেখছেন? আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখেন?
কাদের গনি চৌধুরী: আমি মনে করি, বিএনপি সবসময় ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে এসেছে। নতুন মুখ আসবে, সেটি দলের প্রাণবন্ততার অংশ; তবে ত্যাগী নেতাদের অবদান উপেক্ষা করা যায় না। আমি নিজেকে ত্যাগী কর্মী হিসেবেই দেখি যিনি দুঃসময়ে রাজপথে থেকেছেন, কারাবরণ করেছেন, সাংবাদিক সমাজ ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দলের আদর্শ তুলে ধরেছেন।
দলের নেতৃত্ব নিশ্চয়ই এই ত্যাগ, অভিজ্ঞতা ও জনগণের সংযোগকে গুরুত্ব দেবে। এছাড়াও দল শিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের গুরুত্ব দেবে। শুধু ‘ইয়েস’ আর ‘নো’ বলতে জানাদের সংসদে নিয়ে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় করবে না।
বাংলাধারা: শোনা যাচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন আপনি কি তাঁর কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা বা উৎসাহ পেয়েছেন?
কাদের গনি চৌধুরী: তারেক রহমান সাহেব সবসময়ই মাঠের কর্মীদের খোঁজ রাখেন। আমাদের মতো যারা সংগঠনের ভিতরে কাজ করি, তাঁদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আমি তাঁর কাছ থেকে রাজনৈতিক নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তিনি যে ত্যাগী, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব চান আমি সেই মানদণ্ডেই নিজেকে প্রস্তুত করছি।
বাংলাধারা: দীর্ঘ সময় ধরে দলের আন্দোলন, মামলা ও কারাবন্দিত্বের পর এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
কাদের গনি চৌধুরী: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিএনপির নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে, কিন্তু জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল অটুট। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো সংগঠনকে একতাবদ্ধ রাখা এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রমুখী করা। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের জাগরণই এই চ্যালেঞ্জকে জয় করবে।
বাংলাধারা: ফটিকছড়িতে দলে দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃকোন্দল চলছে, বিশেষ করে সেখানে বিএনপি দুটি গ্রুপে বিভক্ত তাতে নির্বাচন কতটা প্রভাবিত হতে পারে বলে মনে করেন?
কাদের গনি চৌধুরী: বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল। এখানে মতপার্থক্য থাকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি ঐক্যবদ্ধ। আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমি এও মনে করি, আমরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আলোয় আলোকিত। দল সমর্থন না করলে আমরা কেউ কিছুই না। তাই ভাইয়ের নয়, দলের রাজনীতি আমাদের করতে হবে।
আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহযোদ্ধা এবং সহযাত্রী হিসেবে দেখি। আমার কাজ হচ্ছে দলের পতাকা উঁচু রাখা এবং জনগণের পাশে থেকে তাদের আস্থা অর্জন করা।
বাংলাধারা: দলের ভিতরে কি এখনো আস্থা সংকট বা গোষ্ঠী রাজনীতি আছে? থাকলে তা কীভাবে সমাধান করা উচিত বলে মনে করেন?
কাদের গনি চৌধুরী: যেকোনো বড় রাজনৈতিক দলে মতের পার্থক্য থাকে, কিন্তু আমি এটাকে ‘গোষ্ঠী রাজনীতি’ বলব না। আমাদের মধ্যে মাঝে মাঝে কৌশলগত ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে লক্ষ্য একটাই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। দলের নেতৃত্ব যদি ত্যাগী ও মাঠের নেতাদের মূল্যায়ন করে, তাহলে আস্থা আরও দৃঢ় হবে। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ।
বাংলাধারা: যদি মনোনয়ন না পান, তাহলে দলের হয়ে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন করার বিষয়ে আপনার অবস্থান কী হবে?
কাদের গনি চৌধুরী: আমি বিএনপির রাজনীতি করি কোনো ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, আদর্শের জন্য। মনোনয়ন পাওয়া বা না পাওয়া বড় বিষয় নয় বড় বিষয় হচ্ছে দলকে শক্তিশালী রাখা। যদি দল অন্য কাউকে প্রার্থী করে, আমি তাঁর পক্ষে কাজ করব, কারণ বিজয় মানে হবে গণতন্ত্রের বিজয়, বিএনপির বিজয়।
বাংলাধারা: আপনার নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে বিএনপির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে আপনি কী পরিকল্পনা নিয়েছেন বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে?
কাদের গনি চৌধুরী: তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তন চায়, আর বিএনপি সেই পরিবর্তনের রাজনীতি করে। আমি তরুণদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি ডিজিটাল, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক প্রচারণা চালাতে চাই। ফটিকছড়ির শিক্ষিত ও প্রবাসী তরুণদের সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও গণতন্ত্র এই তিন বিষয়কে কেন্দ্র করে আমরা তরুণদের আস্থা ফিরিয়ে আনব।
সংক্ষেপে কাদের গনি চৌধুরী:
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সাংবাদিক হিসেবে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে কাদের গনি চৌধুরী আমার দেশ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক দিনকাল-এ সিনিয়র রিপোর্টার ও বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্বে থাকা কাদের গনি চৌধুরী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কাদের গনি চৌধুরী খ্যাতিমান সাংবাদিক হিসেবে দেশের নানা মহলে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। ক্ষুরধার, মেধাবী সাংবাদিক হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
ওয়ান-ইলেভেন ও হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমলে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন সবাই আত্মগোপনে, তখনও তিনি লেখনি ও রাজপথে সোচ্চার ছিলেন। সে সময় ভয়ে যখন বেশির ভাগ নেতা-কর্মী মুখে কুলুপ আটকে রাখেন, তখন কাদের গনি চৌধুরী দিনকাল-এ নিয়মিত তারেক রহমানের বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের উপর নিজ নামে ধারাবাহিক স্টোরি ছাপেন।
ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের আমলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে ১১’শ সাংবাদিকের দেওয়া বিবৃতি তিনি সমন্বয় করেন। এই দাবিতে সাংবাদিকরা অন্তত ২০টি সমাবেশ করেন; এগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন কাদের গনি চৌধুরী।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলেও রাজপথে তাঁর সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকার কারণে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ফ্যাসিস্ট আমলে কখনো দলের ব্যানারে, কখনো পেশাজীবীদের ব্যানারে, আবার কখনো সাংবাদিকদের ব্যানারে প্রায় প্রতিদিনই রাজপথে সোচ্চার ছিলেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ও ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান শুরু হলে তিনি এর প্রতিবাদে সাংবাদিকদের ও পেশাজীবীদের ব্যানারে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সেই ঘোর দুর্দিনে প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিদিনই তাঁকে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক দুর্নীতির ডকুমেন্টারি তিনি তৈরি করেন। তাঁর প্রণীত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শ্বেতপত্রটি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান উপস্থাপন করেন।
২০১৪ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক গঠিত গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে তিনি এলাকায় গিয়ে এ-সংক্রান্ত তিন খণ্ডের প্রতিবেদন খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেন। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০২৩ সালে বিএনপির সমাবেশে তাণ্ডব চালানোর দিন তাঁকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তাঁর নিকেতনের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই সময় অন্তত ছয় দফা তাঁর বাসায় পুলিশ হানা দেয়। দীর্ঘদিন তিনি ঘর ছেড়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়ান। কিন্তু দমে যাননি। সে সময় প্রতিদিনই তাঁকে কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে।
আপোসহীন ও সংগ্রামী ভূমিকার কারণে তিনি সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
কাদের গনি চৌধুরী শুধু রাজনীতিকই নন, তিনি সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের শীর্ষ নেতা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব।
কাদের গনি চৌধুরী বিভিন্ন সময় জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগ আমলে শত নিপীড়নের মাঝেও তিনি প্রতিদিন প্রেস ক্লাবে যেতেন এবং জাতীয়তাবাদী ঘরানার সাংবাদিকদের সংগঠিত করতেন। যার কারণে সাংবাদিকদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
পেশাজীবী নেতা হিসেবে কাদের গনি চৌধুরী হাসিনার পতন আন্দোলনে ব্যাপক অবদান রাখেন। পেশাজীবীদের কর্মসূচির পাশাপাশি বিএনপির প্রতিটি সমাবেশে তিনি পেশাজীবীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।
২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কমিটি গঠন করা হয় এবং কাদের গনি চৌধুরীকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আড়াই বছরে তাঁর নেতৃত্বে ১০৩টি সভা, সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা, গোলটেবিল বৈঠক, মানববন্ধন ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা প্রেস ক্লাবের সামনে একটানা ২৩ দিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। ৩ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণহত্যা বন্ধ ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সাংবাদিকরা ঢাকা রাজপথে মিছিল বের করেন। কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক এ মিছিলে অংশ নেন।
মিছিল শেষে সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। প্রেস ক্লাবের কর্মচারীদের সহযোগিতায় তিনি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। ওই রাতেই পুলিশ হানা দেয় তাঁর বাসায়।
আরও এক মাস আগে থেকেই তিনি বাসা-বাড়ি ছেড়ে ফেরারি জীবনযাপন করছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৪ আগস্ট প্রেস ক্লাবের সামনে তাঁর নেতৃত্বে পেশাজীবীরা শেখ হাসিনার পতনের একদফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে প্রায় ২ হাজার পেশাজীবী জড়ো হন প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে।
বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রথমে পুলিশ টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে সমাবেশ পণ্ড করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর পেশাজীবীরা আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে সমাবেশ শুরু করলে হাইকোর্টের দিক থেকে পুলিশ এবং পল্টনের দিক থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়।
সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী ও কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে পেশাজীবীরা প্রতিরোধ ব্যূহ তৈরি করেন। সে দিন পেশাজীবীরা জীবন-মরণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পেশাজীবীদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ মানুষ। বিক্ষুব্ধ পেশাজীবী-জনতা প্রেস ক্লাবের সামনের পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। পুলিশের আরও দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দিলে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়।
পরের দিন ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পেশাজীবী সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে থেকে পেশাজীবী ও জনতার যোগ দেওয়ার কথা ছিল এই সমাবেশে। সকাল ৭টায় কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান ও প্রফেসর ড. লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে পেশাজীবীরা শহীদ মিনারে জড়ো হতে চাইলে পুলিশ টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরে পেশাজীবীরা সাংবাদিকদের ব্যানারে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর এলে প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক মিছিল বের করেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ও কাদের গনি চৌধুরী।
আরও পড়ুন
খুলনায় নৌবাহিনীর অভিযান, ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক
মোংলায় জমি বিরোধে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ
মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে চুরি হওয়া মালামালসহ গ্রেপ্তার ৪
সাংবাদিক হামিদ উল্লাহর পিতার মৃত্যুতে সিইউজের শোক
এ সম্পর্কিত আরও
টেকনাফে সাগর থেকে নিখোঁজ জেলের মরদেহ উদ্ধার
লায়ন মোহাম্মদ উল্লাহকে প্রধান করে আনোয়ারা উপজেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটির অনুমোদন
আত্মার রঙ
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামে বিনামূল্যে ব্রেস্ট হেলথ চেকআপ ক্যাম্পেইন শুরু
সর্বশেষ
খুলনায় নৌবাহিনীর অভিযান, ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক
মোংলায় জমি বিরোধে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ
মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে চুরি হওয়া মালামালসহ গ্রেপ্তার ৪
‘ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নই বিএনপিকে শক্তিশালী করবে’
সাংবাদিক হামিদ উল্লাহর পিতার মৃত্যুতে সিইউজের শোক