৮ নভেম্বর ২০২৫

সংস্কৃতি মানুষকে সভ্য করে: কাদের গনি চৌধুরী

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সংস্কৃতি হচ্ছে সুন্দরের সাধনা। সংস্কৃতি মানুষকে সভ্য করে, জীবনের সৌন্দর্যকে বিকশিত করে। সংস্কৃতি চর্চার ভেতর দিয়ে মানুষের মন সুন্দর হয়, হিংসা-বিদ্বেষ নাশ হয়, জীবনকে মহিমান্বিত করে। অপসংস্কৃতি যা আমাদের চেতনাকে দীপ্ত করে না, ঐতিহ্যকে মহিমা দেয় না, আচরণে শালীনতা আনে না তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিআরএ) প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিআরএর সভাপতি অভি চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশ নেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন, বিশ্ববরেণ্য যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, তাশিক আহমেদ, জিয়াউল কবির সুমন, এরফানুল হক নাহিদ, রাজু আলীম, কামরুল হাসান দর্পণ ও রিমন মাহফুজ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দুলাল খান ও পান্থ আফজাল।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি জীবনকে সুন্দরের পথে পরিচালিত করে, আর অপসংস্কৃতি মানুষকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধকে গলাটিপে হত্যা করে, মানুষকে তার মা-মাটি-দেশপ্রেম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, তরুণ সমাজ অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে কারণ এতে উত্তেজনা ও ক্ষণিক আনন্দের মোহ আছে। কিন্তু তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ তাই অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবলে তাদের বিপথগামী হতে দেওয়া যাবে না।

পশ্চিমা চটকদার সংস্কৃতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিশ্বায়নের এ যুগে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আসবেই। তবে চোখ বুজে থাকা নয় আমাদের লোকজ সংস্কৃতির বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হলে গ্রামকে হৃষ্টপুষ্ট করতে হবে ঐতিহ্যের রূপরসে। নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে গ্রামে, তবে গ্রামবাসীকে শহুরে ড্রয়িংরুমের অন্তর্জালে বন্দি করা যাবে না। ফিরিয়ে আনতে হবে খোলা প্রান্তর, খেলার মাঠ, নদী, খাল-বিল।”

তিনি আরও বলেন, “লোকনৃত্য, জারি-সারি, আউল-বাউল, ভাটিয়ালি, পল্লীগীতি, লালনগীতি, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রগীতি এসব আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। এগুলো হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।”

কাদের গনি চৌধুরী শিক্ষার গুরুত্বের প্রসঙ্গেও বলেন, “শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। যে শিক্ষা দেশপ্রেম শেখায় না, মানুষকে মানবিক করে না সেটি অপশিক্ষা। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চাই আলোকিত মানুষ গড়তে পারে।”

তিনি বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে। ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষায় বাঙালিয়ানা অনুপস্থিত। আমরা মুখে বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলি, কিন্তু কাজে উল্টো। এভাবে আমরা আমাদের শেকড় হারাচ্ছি।”

মিডিয়া ও বিনোদন শিল্পের বাণিজ্যিকীকরণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সংস্কৃতি এখন আর মানুষের হাতে নেই, চলে গেছে বেনিয়াদের হাতে। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মিডিয়া পুরোপুরি বাণিজ্যিক চিন্তায় পরিচালিত হচ্ছে। ভালো নাটক বা সিনেমার অভাব দেখা দিয়েছে। ভাষা বিকৃত হচ্ছে, অশালীনতা বাড়ছে, আর সবকিছু নির্দিষ্ট কিছু বিনিয়োগকারীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।”

তবে তিনি আশার কথাও বলেন, “থিয়েটার অঙ্গন এখনো শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চায় টিকে আছে। সেখানে ভালো স্ক্রিপ্টে কাজ হচ্ছে।”

শেষে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ। মুখে এক আর কাজে অন্য এভাবে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের শেকড়ে ফিরে যেতে হবে, লোকজ ঐতিহ্যকে ভালোবাসতে হবে। তাহলেই নতুন প্রজন্ম গেয়ে উঠবে ‘ফসলের মাঠে, মেঘনার তীরে, ধুধু বালু চরে, পাখিদের নীড়ে,
তুমি আমি লিখি প্রাণের বর্ণমালা।’”

আরও পড়ুন