৫ নভেম্বর ২০২৫

জনগণকে জিম্মি করে প্রসাশনকে ব্ল্যাকমেইল করতেই পরিবহন ধর্মঘট

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

ঈদের আগে ঘরমুখো জনগণকে জিম্মি করে প্রসাশনকে বল্যাকমেইল করতেই চট্টগ্রমে দুরপাল্লার বাসের মালিকরা ধর্মঘট ডেকেছিল বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), চট্টগ্রামের মেজিট্রেট এস এম মনজুরুল হক।

সোমবার বিকেলে মেজিট্রেটস অব বিআরটিএ, চট্টগ্রামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ‘পরিবহন মালিক ও জনগণের উদ্দেশ্যে’ শির্ষক এক খোলা চিঠিতে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।

তিনি পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারসহ যাত্রীদের সাথে নানা প্রতারনারও অভিযোগ তোলেন এ চিঠিতে। মনজুরুল হক তাঁর অভিযোগের পক্ষে তথ্য-প্রমান উপস্থাপন করে জনগণের কাছে বিচার ও চেয়েছেন।

নিচে তার চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

পরিবহন মালিক ও জনগণের উদ্দেশ্যেঃ

মালিকদের বলছি, গতকাল আপনারা ধর্মঘটের নামে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করে প্রশাসনকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছিলেন। আপনাদের অভিযোগ, আপনারা সরকার-নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছিলেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আপনাদেরকে জরিমানা করেছেন! এ কাজটা আপনারা গত ঈদের সময়ও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সফল হননি। বাড়তি ভাড়া নেয়া ও যাত্রী হয়রানি রোধে গত ঈদে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম। মূলত তখন থেকেই আপনারা প্ল্যান করে রেখেছিলেন, এবারের ঈদে জনগণের পকেট কাটতে আর আমাদেরকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেবেন না।

প্রতি ঈদেই আপনারা জনগণকে জিম্মি করে তাদের পকেট কাটেন। এতো বছর নির্বিঘ্নে কেটে আসতে পারলেও গত ঈদে এই প্রথম আমি আপনাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াই। এটা আপনাদের পছন্দ হয়নি। যা করেছি জনস্বার্থে করেছি। জনগণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই করেছি। এখনো যা করছি তাও জনস্বার্থেই করছি। কারণ আমি জনগণের সেবক। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমার বেতন হয়। কোন পরিবহন সিন্ডিকেটের অন্যায্য স্বার্থ দেখার জন্য আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত নই।

গতবার আপনারা যাত্রীদের কাছ থেকে কোন কোন গন্তব্যে সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করেছিলেন। এবারও আপনারা তা করে আসছিলেন। অথচ আপনারা মিথ্যাচার করছেন আপনারা নাকি সরকার-নির্ধারিত ভাড়াই রাখছেন। আসুন তাহলে দেখা যাক, আপনারা জনগণের সাথে কতটা প্রতারণা করছেন।

আমি গতকাল যে তিন পরিবহনকে জরিমানা করেছি দেখি তারা বাড়তি ভাড়া নিয়েছে নাকি সরকার-নির্ধারিত ভাড়াই নিয়েছে। তিন পরিবহনের মধ্যে হানিফ পরিবহন দিনাজপুরের টিকেটের দাম রেখেছে ১৪০০ টাকা। অথচ চট্টগ্রাম টু দিনাজপুরের সরকার-নির্ধারিত ভাড়া হচ্ছে ১০৭২ টাকা। এখানে সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩২৮ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। হানিফ পরিবহন বাড়তি ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি আরেকটি অপকর্ম করেছে। সেটা হলো, তারা যাত্রীর কাছ থেকে নিয়েছে ১৪০০ টাকা কিন্তু টিকেটে উল্লেখ করেছে ১৩০০ টাকা। গত ঈদেও অনেক পরিবহন এ অপকর্মটি করেছিলো।

অন্যদিকে ই-টেক্স (সিডিএম) পরিবহন চট্টগ্রাম টু নাটোরের টিকেটের দাম রেখেছে ১৫০০ টাকা যেখানে নাটোরের সরকার-নির্ধারিত ভাড়া হলো ৮৬৫ টাকা। এখানে অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে ৬৩৫ টাকা। নাভিলা স্পেশাল নামের আরেকটি পরিবহন চট্টগ্রাম টু রংপুরের টিকেটের দাম রেখেছে ১৪০০ টাকা যেখানে সরকার-নির্ধারিত সর্বোচ্চ ভাড়া হলো ১০১৫ টাকা। এ পরিবহনটি যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি নিয়েছে ৩৮৫ টাকা। আমি প্রমাণ ছাড়া কাজ করি না। জরিমানা করার পাশাপাশি বাড়তি দাম নেয়া প্রতিটা টিকেট জব্দ করে নিয়ে এসেছি। বাড়তি ভাড়ার প্রমাণ হিসেবে টিকেটগুলোর ছবি নিচে দিয়ে দিলাম।

জনগণকে বলছি, এবার আপনারাই বিচার করুন ওরা কত বড় মিথ্যাচার করছে এবং কীভাবে আপনাদের পকেট কাটছে। কালকের ধর্মঘট নাটকের পিছনে একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো, প্রশাসনকে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং জনগণের স্বার্থে আমাদের যে অভিযান সেটা বন্ধ করে দেয়া। এটা অনেকদিন ধরেই তারা চাচ্ছিলো। এবার তারা কিছুটা সফলও হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

গতকালের অভিযানে আমরা দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট মিলে ৫টি পরিবহনকে মোট ৫৮০০০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলাম। অথচ তাদের যে অপরাধ তাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে আরও অনেক বেশি জরিমানা করা যায়। গতবার সতর্ক করে দেয়ার পরেও তারা এবারও বাড়তি ভাড়া নেয়া তো বন্ধ করেইনি উল্টা বাড়তি ভাড়া নেয়ার অপরাধে জরিমানা করায় তারা জনগণকে জিম্মি করে তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার পথ বেছে নিয়েছে।

কিন্তু এরপরও আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ ঈদকে কেন্দ্র করে জনগণকে হয়রানি করবেন না। সাধারণ জনগণের পকেট কাটবেন না। ভালো মানুষেরা কখনোই এ ধরনের কাজ করে না। আপনারা আমার শত্রু নন। যা করি জনস্বার্থেই করি। সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে আবারও ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবো না। জনগণের উদ্দেশে বলছি, বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটে আন্তঃজেলা রুটসমূহের সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দেয়া আছে। আপনারা দয়া করে সেখান থেকে সেটি সংগ্রহ করে নেবেন। সকলের সুমতি হোক। ঈদযাত্রা শুভ হোক।

বিঃ দ্রঃ – ওরা যে মিথ্যা অভিযোগে ধর্মঘটের নাটক করে লাখ লাখ জনগণকে জিম্মি করার চেষ্টা করলো তার বিচার কে করবে? সিদ্ধান্তের ভার জনগণের উপর রইলো।

এস, এম, মনজুরুল হক
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
বিআরটিএ, চট্টগ্রাম।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ