বাংলাধারা ডেস্ক »
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় দিয়ে শনিবার (৩১ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের গাড়িবহর যাওয়ার সময় ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ বক্সের সামনে হওয়া এই হামলায় মন্ত্রীর গাড়ি বহরের এক পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আহত হন।
ঘটনার পর পুলিশই হামলার টার্গেট ছিল বলে মন্তব্য করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এর আগে, ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তান ও ২৬ মে মালিবাগেও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে পুলিশের ওপর তিনবার হামলার ঘটনা ঘটলো।
শনিবারের হামলায় আহতরা হলেন এএসআই শাহাবুদ্দিন (৩৫) ও কনস্টেবল আমিনুল (৪০)। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হামলার পর ঘটনাস্থল সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ঘুরে দেখা গেছে, ফুটওভার ব্রিজের পাশেই পুলিশ বক্স। দুটোর মাঝামাঝি স্থানে মূল রাস্তার ওপর পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেলটি নিক্ষেপ করা হয়েছে। রাস্তার ওপর আহত পুলিশ সদস্যদের রক্তের দাগ রয়েছে। স্থানটি কর্ডন করে রেখেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সোয়া ৯টার দিকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় মাঝারি ধরনের যানজট ছিল। বাটা সিগনাল পার হয়ে সায়েন্সল্যাবের কাছাকাছি আসার পর যানজটে আটকা পড়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের গাড়িবহর। এ সময় বহরে থাকা পুলিশের এএসআই শাহাবুদ্দিন গাড়ি থেকে নেমে ফুটওভার ব্রিজের নিচে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা সদস্যকে লাইনটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। তিনি রাস্তা পার হয়ে পুলিশ বক্স ও ফুটওভারব্রিজের মাঝামাঝি স্থানে আসার পরই ককটেলটি নিক্ষেপ করা হয়। ককটেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা অন্ধকারে ছেয়ে যায়। পাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা ছুটে এসে দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

ঘটনার সময় পাশেই থাকা আনসার সদস্য সোহেল জানান, আমি রোড ডিভাইডারের ওপারে পুলিশ বক্সের কাছে ছিলাম। দেখলাম একজন পুলিশ সদস্য ফুটওভার ব্রিজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। মুহূর্তের মধ্যে বিকট শব্দ হল, এরপর চারপাশ ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। আমরা দৌঁড়ে গিয়ে দেখি দু’জন আঘাত পেয়েছেন। একজনের আঘাত ছিল বেশি। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তবে ককটেলটি কোন পাশ থেকে ছোড়া হয়, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি ঘটনাস্থলে থাকা সিটিটিসি ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা। সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করবো। এছাড়া ঘটনার সময় আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। ধারণা করছি, ফুটওভারব্রিজের ওপর থেকেই ককটেলটি নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সহকারী একান্ত সচিব মো. জাহিদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রী গাড়িতে ছিলেন। তাকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের গাড়িটি সামনে ছিল। একজন পুলিশ সদস্য প্রোটেকশনের গাড়ি থেকে নেমে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যানজট নিরসনে কাজ করছিলেন। তখনই বিস্ফোরণ হয়। এতে প্রোটেকশনে থাকা পুলিশের এএসআই শাহাবুদ্দিন আহত হন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ওই এলাকা থেকে চলে যান। তার গাড়িতে কিছু হয়নি। তিনি সুস্থ আছেন।’
এদিকে হামলায় মন্ত্রীর প্রটোকলে থাকা পুলিশ সদস্য আহত হলেও পাশেই থাকা পুলিশ বক্সের সদস্যরা মূল টার্গেট ছিল বলে ধারণা করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, ধারণা করছি পুলিশ বক্সে থাকা আমাদের পুলিশ সদস্যরাই মূল টার্গেট ছিল। যেখানে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে তার ১০ গজ পেছনে পুলিশ বক্স। ভাগ্যক্রমে রোড ডিভাইডারের কাছাকাছি ককটেলটি বিস্ফোরিত হওয়ায় স্প্লিন্টার দূরে গিয়ে আঘাত করতে পারেনি। যে কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে।
পুলিশ কেন টার্গেট এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, হলি আর্টিজানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদকে রুখে দিয়েছে সে কারণেই পুলিশ টার্গেট হতে পারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, হাতে তৈরি বোমা বা আইইডি বিস্ফোরণে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। এরআগে রাজধানীর মালিবাগ ও গুলিস্তানের পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার সঙ্গে এবারের ঘটনার সামঞ্জস্যতা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এরআগে গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে একটি ট্রাফিক বক্সের পাশে হাতে তৈরি বোমা বা আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্য ও একজন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার ঠিক ২৮ দিন পর গত ২৬ মে রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর মালিবাগের পলওয়েল ফিলিং স্টেশনের বিপরীতে ফ্লাইওভারের নিচে রাখা পুলিশের বিশেষ শাখার একটি পিক-আপভ্যানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতেও ট্রাফিক পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদা আক্তার, লাল মিয়া নামে একজন রিকশাচালক ও শাহনাজ শারমিন নামে এক পথচারী আহত হন। এছাড়া ২৩ জুলাই রাতে রাজধানীর পল্টন ও খামাড়বাড়ি পুলিশ বক্সের কাছে ফেলে রাখা বোমা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনার পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/এএ













