আবছায়া আন্দামান!!
কোন মানুষ চায়না বিরহ হোক
হিয়ার দোসর, বেদনা হোক,
আত্মার আত্মীয়।
তবুও পাওয়া হয়ে যায় হৃদয় ভাঙার শোক।
বিরহী গান।
হৃদয় জুড়ে নামে শ্রাবণের অঝোর অভিমান!
হৃদয় ভাঙার অপরাধে অপরাধী আমি,
পেয়েছি কালাপানির সাজা!
বিপ্লবী, খুনী আর আর ভয়ানক দস্যুদের সাথে।
এখন আমার ঠিকানা! আন্দামানের সাউথ পয়েন্ট জেল।
তুমি কি ছিলে প্রিয় সেলুলর জেলে?
জানা হয়নি আমার।
একই অপরাধে তুমিও তো অপরাধী ছিলে?
এই নির্জন পোর্ট ব্লেয়ার… সাউথ পয়েন্ট জেলে
ঠিক কত বছর হিসেব গেছি ভুলে।
পঁচিশ, ত্রিশ বা তারও বেশিতো হবেই।
জেলের কুঠুরিতে বসে,
গরাদের ফাঁক দিয়ে দেখেছি ছোট বড় দ্বীপ, পাহাড়, জংগল……!
ঝাঁকে ঝাঁকে সী গালের উড়াউড়ি
আর সেসোট্রেস উপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মাতামাতি।
সামনে সাগর আর পিছের বনে নিষ্ঠুর জানোয়ারদের বাস।
পালাবার পথ ছিল নাতো।
তবুও রাধার নূপুরের মতো শিকলে বাধা পা।
কেবল কানা বাঁশিই বাজায় না।
সেন্ট্রিদের তীব্র হুইসেল কানকে করেছে বধির।
যদি এইখানে, এই সেলুলর জেলে থাকতো যদি সে,
তবে অবলীলায় শাদিপুরে ঠাঁই হতো আমাদের।
জাত, ধর্ম, বর্ন, দেশ, সংস্কার
সব কিছুর ছাপিয়ে নিরবিচ্ছিন জীবন পেতাম।
আজ এই মুক্তির আনন্দটা পানসে হতো না।
এতোটা বছর টেনেছি ঘানি…
আর মুগুর দিয়ে পিটিয়ে
নারকোল ছোবড়ার তার বের করে ক্ষত বিক্ষত করেছি
শরীর,মন ও কি হয়নি রক্তাক্ত?
তবুও মুক্তির স্বাদ আজ বিস্বাদ লাগে।
এই শান্ত রস আইল্যান্ডে বসে ভাবি বিগত দিন।
কেন যে বুঝিনি নিজেকে আগে,
কিংবা বোঝায়নি তাকে কতটা ছিল ভালোবাসার ঋণ!
জেলের গরাদ, সিগাল, লোনাজল
ত্রিশ কিংবা পয়ত্রিশ বছর প্রতিটি ক্ষণ,
প্রতিটি দিন! কেটে আমার!
তবে এই শরতের শেষ বিকেলে
সাগরের তীর ছুঁয়ে ছুটে বেড়াতাম একসাথে।
হাতে রেখে হাত,
দেখতাম সীগালের হুটোপুটি।
দূর পাহাড়ের মাথায় ঘন গাছের আড়ালে
টুপ করে ডুবে যাওয়া সূর্যটার রক্তিম আভায় রাঙা হোত মন।
সেলুলর জেল নেই, গুড়িয়ে গেছে সাউথ পয়েন্ট জেলও,
তবুও শরীর মনে বন্দীত্বের আভরণ… মুছলো না আর।
যেন আমিই যুগে যুগে বয়ে চলেছি এই বিরহ ভার!
গেয়ে যাই হৃদয় ভাঙার গান।
মুক্তিতেও মেলেনা আর বন্দীত্বের কোন অবসান…!
পড়ন্ত বিকেলে আজ আবছায়া দিগন্তের নিষ্ঠুর আন্দামান!!
				












