বাংলাধারা প্রতিবেদন »
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এক সময় দক্ষিণ এশিয়ায় ‘হেলদি সিটি’ হিসেবে খ্যাত ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সফলতার জন্য প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়কালে চসিককে স্বর্ণপদক দিয়েছিল জাপান। কিন্তু সেই অর্জন ধরে রাখতে পারেনি চসিক। নগরীর যত্র-তত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। সময়মতো ময়লা পরিষ্কার না করা, পানি চলাচলের নালা বন্ধ থাকা, নালায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির বিষয়ে নগরবাসীর অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।
গত দু’বছরে চসিকের কলসেন্টারে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অভিযোগ এসেছে চার হাজার ৪২০টি। আর এ সময়ে মোট অভিযোগ ছিল পাঁচ হাজার ৯৬৭টি। অর্থাৎ অপরিচ্ছন্নতা বিষয়ে অভিযোগ মোট অভিযোগের ৭৪ শতাংশ।

চসিক থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে সিটি করপোরেশনের প্রধান তিনটি কাজ হলো সড়ক মেরামত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আলোকায়ন। আর নিজেদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল হেল্প লাইন বা কলসেন্টার চালু করে চসিক। আর কলসেন্টারে সড়ক, বর্জ্য ও আলোকায়নে অব্যবস্থাপনাসহ চসিকের বিরুদ্ধে নগরবাসী ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৩৬০টি কল আসে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ ছিল পাঁচ হাজার ৯৬৭টি। এর মধ্যে অপরিচ্ছন্নতা, ঝাড়– দেওয়া হয় না বা ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকা নিয়ে অভিযোগ দুই হাজার ৫৩৯টি, নালা ব্লক থাকার অভিযোগ ৮০৭টি, ডাস্টবিন নেই ৩৪৭টি, নালায় প্রতিবন্ধকতা ২২৫টি, অভিযোগ দেওয়ার পরও ময়লা-আবর্জনা সরানো হয়নি বা পরিষ্কার করা হয়নিবিষয়ক ৫০২টি।
এছাড়া কলসেন্টারে চসিকের স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়মের অভিযোগ এসেছে ১৬১টি, ভাঙা রাস্তাঘাটের অভিযোগ ৬৩৫টি, সড়কবাতি না থাকার অভিযোগ ৭৫১টি। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, ট্রেড লাইসেন্স, গৃহকর, ডেথ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস এবং সরাসরি মেয়র বরাবর অভিযোগ এসেছে চার হাজার ১৬৪টি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীতে এক হাজার ৩০০টি অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে ২০টি করে ভ্যান বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রত্যেক বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি ময়লা সংগ্রহ করছেন চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। আর তা রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট আবর্জনাগারে ফেলা হচ্ছে।

তবে এতসব অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী (জিসু)। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ আমার কাছে আসতে হবে। হেল্প লাইনে আসা কোনো অভিযোগ আমি পাইনি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা বেশি কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ থাকে। নালায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে খবর পাওয়া মাত্রই আমরা পরিষ্কার করি। এছাড়া শহরের কোথাও আর কোনো ডাস্টবিন দেওয়া হবে না।’
চসিকের আইটি অফিসার মোহাম্মদ ইকবাল হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হেল্প লাইনে ফোনে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। হ্যালো ওয়ার্ল্ড কমিউনিকেশনের দুজন কর্মকর্তা অভিযোগ গ্রহণ করে ই-মেইলের মাধ্যমে চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানান। চসিকের কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ পৌঁছে দেন।’
বর্জ্যে অব্যবস্থাপনাসহ চসিকের বিরুদ্ধে এতগুলো অভিযোগ আসা প্রসঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘অনেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু কিছু অভিযোগ করেন, যেগুলোর কোনো ভিত্তি থাকে না। এটা হলো বাস্তবতা। আমরা নালাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করি।’ মেয়র আরও বলেন, ‘শহরে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলমান আছে। এখন যেখানে-সেখানে ময়লা পড়ে থাকে না। আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন আছি। নগরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা শতভাগ সফলতা লাভ করেছি এটা বলব না। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কাজ করছি। নগরে মানুষ বাড়ছে, ময়লা-আবর্জনাও বাড়ছে; কিন্তু চসিকের জনবল তো বাড়ছে না। নাগরিকদেরও কিছু দায়িত্ব আছে, তারা যদি যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে আমরা লাভবান হব।’
সূত্র: শেয়ারবিজ
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













