আলমগীর মানিক, রাঙামাটি »
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর হতেই সারাদেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুর হয়েছিলো অশান্ত পরিবেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনবার পার্বত্য চট্টগ্রাম এসেছিলো সেসময় পাহাড়ে চমৎকার পরিবেশ বিরাজমান ছিলো। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রক্তপাত ও আত্মঘাতি সংঘাত দেখা দেয়।
মায়ের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন এবং এই অঞ্চলটি সম্পর্কে যথেষ্ট জানা ছিলো মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘুরতে গেলে বিকেল তিনটার মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসতে হতো। বিষয়টি উপলব্ধি করে আমরা ক্ষমতায় এসে তিন সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটি গঠন করে সেই কমিটির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সমস্যার কারনগুলো চিহ্নিত করি এবং আমরা বুঝতে পেরে ঘোষণা দিয়েছিলাম যে পাহাড়ের সমস্যাগুলো রাজনৈতিক এবং আলোচনার মাধ্যমেই সেগুলোর সমাধান বের করে আনতে হবে, মিলিটারি দিয়ে পাহাড়ের সমস্যার সমাধান করা যাবেনা।
তারই ধারাবাহিকতায় আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করে চেষ্ঠা চালিয়ে আমার ব্যক্তিগত আলোচনার ফলশ্রুতিতে অবশেষে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর ৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আমরা শান্তিচুক্তি করতে সফল হই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ১০ই ফেব্রুয়ারী খাগড়াছড়িতে প্রায় ১৮শ অস্ত্র সমর্পনকারিকে পুর্নবাসন করা হয়। সেসময় ভারতে অবস্থান নেওয়া ৬৪ হাজার রিফিউজিকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুর্নবাসন করি। এরপরই আমরা পার্বত্যাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করি। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম বিধায় অনেক কিছুই করার ইচ্ছে থাকলেও করতে পারিনি।
পরবর্তীকালে আটবছর পর ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিএনপি সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ করা মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্ক চালু করার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যথেষ্ট দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় পাহাড়ে আমরা সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করার প্রকল্প হাতে নিই। তারই ধারাবাহিকতায় দূর্গম পাহাড়ের কোথাও একটি ঘরও যাতে অন্ধকারে না থাকে সেই লক্ষ্যে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকহারে সোলার প্যানেল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

পাহাড়ের আত্মসামাজিক উন্নয়নে হাট-বাজার থেকে শুরু করে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ব্রীজ তৈরিকরাসহ ব্যাপকভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পাহাড়ে বসবাসরত অতিদরিদ্র মানুষদের আত্মসামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেই কর্মসূচীর আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে আমরা আলো জ্বালাবো এটাই আমাদের লক্ষ্য। কোনো ঘর যেন অন্ধকারে না থাকে সেলক্ষ্য নিয়েই পাহাড়ের সর্বত্র আমরা বিদুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে আমরা সোলার প্যানেল উপহার দিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই প্রকল্পের আওতায় আমরা আজকে সোলার প্যানেল বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেছি। পাহাড়ের ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজারঘাট কোথাও অন্ধকারে থাকবে না বলেও ওয়াদা দিয়েছেন জাতির পিতার তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
টানা ৭ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নিজের বক্তব্য, অনুভূতি প্রকাশ, স্মৃতিচারণ ও দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার প্যানেলের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্প, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে গবেষণা প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে রাঙামাটিতে পৃথক পৃথকভাবে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেয় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যগণ, পুলিশ সুপার, সাবেক সংসদ সদস্যগণ, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন পেশাজীবি নেতৃবৃন্দ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে সংযোাজিত হওয়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন, উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা-এনডিসি।
এসময় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য, চাকমা সার্কেল চীফ, ডিজিএফআই রাঙামাটির পরিচালক, বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ ও প্রান্ত থেকে আসা উপকারভোগীগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













