বাংলাধারা প্রতিবেদন »
চট্টগ্রামের ভাগ্য বিধাতা তথা জনমানুষের নন্দিত নেতা আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র। ২০১৭ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী না ফেরার দেশে চলে যান।
ইতিহাসের অনেক কিংবদন্তী বীরের জন্ম এই চট্টগ্রামে। যাঁদের বীরত্বগাঁথা অমর কৃতিত্ব ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই হয়েছে। তেমনি একটি জীবন একটি ইতিহাস ও সেই ইতিহাসের স্তম্ভের নাম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পেয়েছেন চট্টলবীরের খেতাব।
এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামের প্রগতিশীল রাজনীতিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম। একাত্তরের মাউন্টেন ডিভিশনের অধিনায়ক এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ধ্যান-জ্ঞান ছিল প্রিয় চট্টগ্রাম নিয়েই। পরপর তিন মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে নিয়ে যান অন্যরকম এক উচ্চতায়।

পাকিস্তান আমলে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত থাকায়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দেশ শত্রুমুক্ত করার আন্দোলন করায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দলের অস্তিত্ব ধরে রাখায় বারবার শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকালে মরহুমের কবর প্রাঙ্গণে খতমে কোরআন, কালোব্যাজ ধারণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও মরহুমের কবরে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে পরোপকারী ও জনদরদি এই রাজনীতিবিদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বাংলাধারা ডটকম’ ‘স্মরণে : চট্টলবীর’ বিশেষ প্রকাশনা বের করেছে।

‘চট্টলবীর’ উপাধি পাওয়া এ রাজনীতিবিদ ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরা গ্রামের বঙ আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হোসেন আহমদ চৌধুরী আর মা বেদুরা বেগম। আট ভাইবোনের মাঝে মহিউদ্দিন ছিলেন মেজ।
তাঁর বাবা চাকরি করতেন আসাম বেঙ্গল রেলওয়েতে। বাবার চাকরির সুবাদে মহিউদ্দিন পড়াশুনা করেছেন মাইজদি জেলা স্কুল, নগরীর কাজেম আলী ইংলিশ হাইস্কুল ও প্রবর্তক সংঘে। স্কুলজীবনেই তিনি জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া মহিউদ্দিন ১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরে আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ করেননি। জড়িয়ে পড়েন ছাত্র আন্দোলনে। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই মহিউদ্দিন চৌধুরী জহুর আহমদ চৌধুরীর সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৬৮ ও ’৬৯ সালে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী।
পচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধ নিতে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করেন তিনি। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের শাসনামলে স্বয়ং এরশাদকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে ছিনিয়ে আনেন জনগণের ভোটের অধিকার।

যিনি তাঁর জীবনের ৭৪ বছরের সংগ্রাম মুখর পথচলায় ছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর নগর পিতা ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতির দায়িত্বে। এ রাজনৈতিক নেতার জীবন ছিল নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতায় ভরপুর। সব বাধাকে জয় করে নগ্ন পাহাড় ঘেরা ঝোপঝাড়ের একটি জঞ্জালের শহরকে পরিচ্ছন্ন করে রূপ দিয়েছিলেন আধুনিক শহরে। এক অদম্য রাজনীতিবিদ।
এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে জনদরদী, জননেতা, কিংবদন্তী রাজনীতিক, চট্টগ্রামের মুকুটহীন সম্রাট, চট্টগ্রামের অভিভাবক বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত সফল মেয়র বলে অভিহিত করেন। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে ২০০৯ পর্যন্ত তিন মেয়াদে টানা ১৭ বছর সিটি মেয়র থাকাকালীন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সিটি গভর্নমেন্টের আদলে গড়ে তুলেছিলেন।

রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেছিলেন চাটগাঁ’র গণমানুষের নয়নমণি।চট্টগ্রামের গনমানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়নে চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তিনি শুধু চট্টগ্রামের নেতাই ছিলেন না, এই চট্টগ্রামকে তিনি প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলেন।
রাজনীতিতে বহুল প্রচারিত- ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ কথাটি সত্যিকারভাবেই যেন পূর্ণতা পেয়েছিল তাঁর কর্মে।
মহিউদ্দিন চৌধুরী জড়িয়ে আছেন এবং থাকবেন চাটগাঁর গণমানুষের হৃদয়জুড়ে। নতুন প্রজন্ম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো এমন জনদরদী নেতাদের যতই চিনবে ততই উজ্জ্বল ও আলোকিত হবে আমাদের আগামীর পথচলা। আজ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ পরোপকারী ও জনদরদি এই রাজনীতিবিদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। অভিভাবকহীন চট্টলার মানুষের চট্টলবীরের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা!
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













