৩১ অক্টোবর ২০২৫

বাফুফের গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ অনৈতিক ; জোটবদ্ধ প্রতিহতের ডাক

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনী মাঠ গরম হয়েছে আগেই। এবার ভোটের মাত্র সাড়ে তিন মাস আগে গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগকে ঘিরে নতুন দিকে মোড় নিয়েছে পরিস্থিতি। বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন বিরোধীরা জোটবদ্ধ হয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন ঠেকিয়ে দেবেন বলে প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন।

ধারণ করা হচ্ছে, বাফুফে নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটেই হচ্ছে। ২০০৮ ও ২০১৬ সালে সর্বশেষ যে দুটি নির্বাচন হয়েছিল বাফুফেতে, সেখানে যে কেউ চাইলেই ভোটে দাঁড়াতে পেরেছিলেন।

দেখা গেছে, ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই এমন মানুষও বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে যাওয়ার জন্য নেমেছিলেন ভোটের লড়াইয়ে। এবার সে পথটা রোহিত করে দিতে চাইছে বাফুফের নির্বাহী কমিটি। তাই তারা আগামী নির্বাচনের আগে বর্তমান গঠনতন্ত্রে বড় দুটি পরিবর্তন আনতে চায়। কি সেই পরিবর্তন?

সর্বশেষ দুটি নির্বাচনে বাফুফের নির্বাহী কমিটির কেউ ভোটার ছিলেন না। অর্থাৎ তাদের কোনো সদস্য সংস্থা থেকে কাউন্সিলর হওয়ার দরকার পড়েনি। তাই নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকারও ছিল না। ভোটার ও ভোটারবিহীন- দুই রকম মানুষই ছিলো সর্বশেষ নির্বাচনে। এবার ভোটে দাঁড়াতে হলে ভোটার (কাউন্সিলর) হতেই হবে- পুরোনো সেই নিয়মই ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাফুফে।

গত ১৪ ডিসেম্বর বাফুফের নির্বাহী কমিটি জরুরি সভা করে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই ইজিএমে উপস্থাপন করা হবে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব। কিন্তু কোনোভাবেই গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন আগামী নির্বাচনে বাফুফে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেয়া তরফদার মো. রুহুল আমিন। যিনি চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান, সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ ফুটবল ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

বাফুফের গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘এভাবে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা যায় না। তারা গঠনতন্ত্র সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সমর্থন করে না বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ফুটবল ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন। আমরা কিছুতেই এই সংশোধন মানবো না। করতেও দেবো না। ইজিএমএ আমরা চরম বিরোধিতা করে সংশোধনী পাস প্রতিহত করবো।’

‘বাফুফের গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগকে কেন বিরোধিতা করছেন? গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বাফুফের বর্তমান কমিটির কর্মকর্তারা কি সুবিধা নিতে চান বলে আপনাদের আশংকা?

‘আসলে এটা উদ্দেশ্যমূলক। তারা নিজেদের মতো কাউন্সিলর বানিয়ে আনার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এই প্রক্রিয়ায় যেতে চায়। তা নাহলে ভোটের মাত্র তিন/সাড়ে তিন মাস আগে কেন এ উদ্যোগ নেয়া হলো? এটা তো আগেও করতে পারতো।’

‘সর্বশেষ যে ভোট হয়েছে তার কিছুদিন পরই তো করতে পারতেন তারা। বাফুফেতে যে কেউ চাইলেই নির্বাচন করতে পারবেন। আগের দুবার তাই হয়েছে। এবারও সেটা হতে হবে। তড়িঘড়ি করে গঠনতন্ত্র সংশোধন করলে সেটা মানযোগ্য হবে না। করতেও দেয়া হবে না’ বলেছেন রুহুল আমিন তরফদার।

বাফুফের জরুরি সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য ইজিএম করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই তরফদার মো. রুহুল আমিন এবং তার অনুসারীরা এটা নিয়ে জোটবদ্ধ হয়েছেন।

তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘সবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ইজিএমে কোনোভাবেই এ সংশোধনী পাস করতে দেয়া হবে না।’

বাফুফের বর্তমান সহ-সভাপতি বাদল রায় নির্বাচন সামনে রেখে গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগকে অনৈতিক হিসেবে উল্লেখ করেন।

সাবেক এ তারকা ফুটবলার বলেন, ‘এ ধরনের সংশোধনী আনলে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কারণ, বোঝাই যায়। পদে থাকার কূটকৌশল এটা কিন্তু টানা ১২ বছর ফুটবলে ভালো কাজ করলে এ পথে হাঁটতে হতো না। সবাই চান, বাফুফের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসুক। কিন্তু উনি (কাজী সালাউদ্দিন) ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান।’

অনেকে প্রশ্ন করেন আপনি বাফুফের বিরোধিতা করেন; কিন্তু সহ-সভাপতি হিসেবেও আছেন। বিষয়টা সাংঘর্ষিক না? ‘অনেকে এ প্রশ্ন করেন। আসলে আমি বাফুফে থেকে সরে আসি না, ভেতরে থেকে প্রতিবাদ করার জন্য। আমি প্রতিবাদ করেই যাবো। আমি ওখানে কোনো কাজের সুযোগ পাই না। তাই থাকা উচিত নয়। থাকতে ভালোও লাগে না। কিন্তু চলে এলে তো আর প্রতিবাদের সুযোগ থাকবে না’ -বলেছেন বাদল রায়।

ইজিএমে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রচেষ্টা প্রতিহত করবেন কীভাবে? বাদল রায়ের জবাব, ‘যারা উপস্থিত থাকবেন তাদের দায়িত্ব হবে প্রতিরোধ করা। আমি প্রতিবাদ করবোই। এই যে দেখেন আমি বাফুফের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেছিলাম; কিন্তু গত এজিএমে সবাই তা পাস করে দিলো। এবারও যদি সবাই গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দেয় তাহলে আমার কিছুই করার থাকবে না। আমি একা হলেও প্রতিবাদ করবোই।’

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন