৩১ অক্টোবর ২০২৫

শীতে কাঁপছে পাহাড়, খাগড়াছড়িতে গরম কাপড় বেচাকেনার ধুম

জসিম উদ্দিন জয়নাল, খাগড়াছড়ি »

কনকনে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে খাগড়াছড়িতে গরম কাপড়ের চাহিদা। শহরের ফুটপাতের দোকান গুলোতে জমজমাট হয়ে উঠেছে বেচাকেনা। কনকনে শীতে শিশু ও বয়স্কদের গরম কাপড়-চোপড় কেনার চাহিদা বেড়েছে।

হঠাৎ শীতের তীব্রতা বাড়ায় ফুটপাতের দোকানগুলি থেকে পাহাড়ে বসবাসরত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন এসব কাপড় ক্রয় করছে। নতুন কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরনো কাপড় দোকানের দিকে ছুটছে ক্রেতারা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে তাদের বেচাকেনা।

এ বছর আগেভাগেই ক্রেতার ভিড় বাড়ায় বিক্রেতাদের চেহেরা খুবই উৎফুল্ল। পাহাড়ে গত কয়েকদিন যাবত শীতের তীব্রতা বেড়েগেছে। শীত নিবারণে প্রয়োজন গরম কাপড়-চোপড়। প্রতি বছর খাগড়াছড়ি জেলা ও উপজেলাগুলো শীতের তীব্রতা একটু বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হয় পাহাড়ি গরিব পরিবারের।

শীতে গরম পোশাক প্রয়োজন। তাই বেশি দামে নয়, কম দামেই গরম পোশাক কেনার দিকে মানুষ ঝুঁকছেন। শীত উপলক্ষে জেলার ৯টি উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে শীতের পোশাক আমদানি ও বেচাকেনা শুরু হয়েছে। সবকিছুর দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে পোশাকের দামও।

যে সকল মানুষ পেট পুরে দু’মুঠো ভাত খেতে পায় না, এ শীতে তাদের বাঁচা দায় হয়ে পড়েছে। তারপরও কাপড়-চোপড়ের অত্যধিক দাম। ফলে কোন রকমে শীত নিবারণের জন্য তারা স্বল্প দামে কাপড় কেনার জন্য বাজারের পুরোনো কাপড়ের দোকানে ছুটছেন।

আগাম শীতেরভাব দেখেই খাগড়াছড়ির বিভিন্ন ছোট-খাটো ব্যবসায়ীরা শীতের কাপড় ওঠাতে শুরু করেছে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। বেচাকেনায় জমে উঠেছে পুরাতন কাপড়ের হাটে।

শনিবার ২১ডিসেম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার স্বনিরর্ভর, মধুপুর, পানখাইয়া পাড়া, শহীদ কাদের সড়কে রাস্তার দুপাশে, বিভিন্ন স্থানে বসেছে পুরানো কাপড় বেচার এসব জাকজমক ভ্রাম্যমাণ দোকান। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে এসব দোকানে। এসব কাপড় ব্যবসায়ীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে আমদানী করে বিক্রি করছে। যেখানে রীতিমত ভিড় করছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। দোকানীদের সাজিয়ে রাখা কাপড়ের স্তূপ থেকে চলছে পছন্দের হিড়িক। কাপড় পছন্দ হলে অথবা ঠিকটাক মতো গায়ে লাগলে শুরু হয় দোকানী ও ক্রেতাদের মধ্যে দামদর । দামদরে হলে নতুন ও পুরনো জ্যাকেট এবং সুয়েটার রকম গরম কাপড় কিনছেন ক্রেতারা।

স্থানীয় কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, আমরা সাধারণত সোয়েটার, ট্র্যাকশুট, বিভিন্ন ধরণের গরম জামা, মোজা, টুপি, বাচ্চাদের কাপড়, প্যান্ট-কোট, চাঁদর, কম্বল, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরণের শীতের কাপড় বিক্রি করে থাকি। আমরা চিটাগাং এর আমিন মার্কেট থেকে বেল হিসেবে এইসব শীতের কাপড় নিয়ে আসি। বিভিন্ন ধরণের বেল বিভিন্ন রকমের দাম। সোয়েটারের ছোট বেল ৮ হাজার টাকা, ট্র্যাকশুট ২০হাজার টাকা, ব্যাগ ২১ হাজার টাকা, বড় সোয়েটার ১৭ হাজার। বেল ভাঙার পর কাপড়গুলোর একটা গড় মূল্য নির্ধারণ করার পর আমরা বিক্রি শুরু করি। খরচ বাদে যা থাকে তাতে মোটামুটি ভালই লাভবান হই।

বিক্রেতারা আরো জানান, এ বছর বেল্টের দাম বাড়ার কারণে বেচাকেনা কমে গেছে। সাধারণ গ্রাহকদের ধারণা ব্যবসায়ীরা মনগড়া দাম চাইছে। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত একটি বেল্ট আনা ও যাতায়াতসহ প্রতি বেল্টে এক থেকে দুই হাজার টাকা খরচ বেশি হওয়ায় মালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

গরম কাপড়ের দোকানে আসা ক্রেতা সনিয়া আক্তার, ও খুরশিদা বেগম, চন্দনা বড়ুয়া বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম কাপড় কিনতে এসেছি। কারণ পুরাতন এসব শীতের দোকান গুলোতে সাধ্যের ভিতর অনেক ভালো ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়। নতুন কাপড়ের দোকানে গরম কাপড়ের দাম একটু বেশি। কিন্তু পুরাতন কাপড়ের দোকানে কম মূল্যে তা পাওয়া যায়। দামও হাতের নাগালে। তবে এবার দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। আর এইসব গরম কাপড়ে মাঝে মধ্যে ছেড়া থাকে তাই অনেকক্ষণ বেছে, দেখে শুনে এইসব কাপড় নিতে হয়। মাঝে মধ্যে ভাগ্যের জোরে নতুন কাপড়ের মতো গরম কাপড় পাওয়া যায়। তাই আমরা যারা নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষ আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়।

খাগড়াছড়িতে অস্থায়ী এ ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, পাহাড়ে শীতের আগমনের আগে আমরা ঢাকা ওচট্রগ্রাম থেকে পুরান কাপড়ের বেল্ট ক্রয় করে নিয়ে আসি। ক্রেতারা স্বল্প মূল্যে গরম কাপড় ক্রয়করে যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনী ব্যবসায়ীরা ভালভাবে চলছে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন