সাইফুল ইসলাম, সন্দ্বীপ »
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক আলোচনা হয়ে আসছিল যে সরকার সন্দ্বীপে গড়ে তুলছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের সেই আলোচনা বাস্তবতার মুখ দেখতে শুরু করেছে।সন্দ্বীপে প্রায় ১৪ হাজার একর জমির উপর এই অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয় হতে এই সংক্রান্ত কাগজপত্র বেজা’র কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানাযায় সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন সুত্রে।
সুত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপ-সচিব ও বেজা’র ব্যবস্থাপক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) আবু হেনা মো. মোস্তাফা কালাম এক চিঠিতে অবগত করেছেন, সন্দ্বীপের ৬টি মৌজায় ১৩ হাজার ৯১৩ একর খাস জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বেজা। এই মর্মে সরকার খাস জমি বিনা সেলামি বা প্রতীকী মূল্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ পত্রও প্রেরণ করেছেন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন, সন্দ্বীপ উপজেলা এবং ভূমি প্রশাসন থেকে সার্ভে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা ভূমি অফিস ও বেজা সূত্র জানায়, সন্দ্বীপের বাথানচর, চিরিঙ্গা, কাঁকরার চর, বোয়ালিয়া, বগারচর ও চর কাউনিয়া মৌজায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মামুন এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করেছেন যাতে দেখা যায়, সন্দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিমের মেঘনা ও বামনী নদীর মোহনায় অবস্থিত জাহাজ্জার চর নামে চরভূমিতে ১নং খাস খতিয়ান মোতাবেক ৬ মৌজা এলাকায় ১৩,৯৫৭.৪৮৯৪ একর জায়গা রয়েছে। এরমধ্যে নদী-খাল শ্রেণি ৯৫৭ দশমিক ৬৩ একর। অবশিষ্ট ১৩ হাজার ৪২৬৪ একর হচ্ছে চরভূমি।
নদী-খাল শ্রেণি ছাড়া ১৩ হাজার ৯১৩ একর জমি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ৬ মৌজায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সরকারি খাস জমি রয়েছে বাথান বাড়িতে ২৩১৯ একর, চিরিঙ্গায় ২৩১৮ একর, কাঁকরার চরে ২৩১৮ একর, বোয়ালিয়ায় ২৩২০ একর, বাগারচরে ২৩১৯ একর, চর কাউনিয়ায় ২৩১৯ একর।
বেজা ও সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপ উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বেজা। সন্দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিমের মেঘনা ও বামনী নদীর মোহনায় অবস্থিত জাহাজ্জার চর নামে চরভূমিতে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ওই চরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিকাধীন ক্যাম্প, গবাদিপশু পালন ও চাষাবাদের জন্য সীমিত সংখ্যক মানুষের বসবাস রয়েছে।
সন্দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বিষয়ে গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। সেখানে সন্দ্বীপে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তি দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মৌজাগুলোর জমির মালিকানা, স্কেচম্যাপ, দাগ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণের জন্য বেজা’র কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। জরিপ অধিদপ্তর ৬টি মৌজার দিয়ারা জরিপ সম্পন্ন করলেও মালিকানা, স্কেচম্যাপ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা ভূমি অফিসে হস্তান্তর করেনি। বন্দোবস্তযোগ্য ১৩হাজার দশমিক ৪২৬৪ একর খাসজমি বেজা’র অনুকূলে বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা বাংলাধারা’কে বলেন, সন্দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এটি দেশব্যাপী সরকারের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনারই অংশ যেখানে সকল নাগরিক তাঁর সরকার কতৃক বিকাশের সুযোগ সমভাবে প্রপ্ত এবং প্রগতির সম অংশীদার থাকবে সেটা একজন নাগরিক শহর বা গ্রাম যেখানেই বাস করুন না কেন।
‘সরকারের ঘোষিত উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ’র (বেজা) মাধ্যমে গড়ে তুলছেন একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল। এবং এ বিষয়ে বেজা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন ও সন্দ্বীপ উপজেলা ভূমি দপ্তর একত্রে যাচাই-বাছাই জরিপ প্রতিবেদন সহ পরিকল্পনার প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন যা শেষ করতে ২০২০ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এবং এরপরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা এ বিষয়ে বাংলাধারা’কে আরও জানান, এখানে কেমন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে সেটিও তখন জানাযাবে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএ/এএ













