বাংলাধারা প্রতিবেদন »
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও শিল্পকারখানাতে কর্মরত আছেন ১৫ হাজারের বেশি চীনা নাগরিক। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) ও কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে বিভিন্ন কারখানায় এক হাজারেরও বেশি বিদেশি নাগরিক কাজ করেন, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ চীন, তাইওয়ান ও হংকংয়ের নাগরিক। কর্ণফুলী নদীতে নির্মাণাধীন টানেল প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় ৮০০ শ্রমিক, যাদের মধ্যে প্রায় ৩৫০ জন চীনের নাগরিক। আনোয়ারা উপজেলায় চীনা ইকোনমিক জোন, মীরসরাই উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর এবং কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছেন হাজারো চীনা নাগরিক।
১৯ জানুয়ারি থেকে চীনা নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। নিউ ইয়ারকে সামনে রেখে গত ১০ জানুয়ারি থেকে অধিকাংশ চীনা নাগরিক দেশে বেড়াতে গেছেন। আগামী ৩১ তারিখের পর ফিরতে শুরু করবেন তারা। ফলে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে বন্দর নগরীতে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্ব স্ব সংস্থাকে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের আপাতত নিজ দেশে যাবার বিষয়টি নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া তাদের মধ্যে কেউ নিকটতম সময়ের মধ্যে চীনে গেছেন কিনা, দেশে ফেরার পর তাদের মধ্যে জ্বর কিংবা অন্যান্য কোনো উপসর্গ দেখা দিয়েছে কিনা সেই বিষয়ে তথ্য নিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি মেডিকেল টিম রাখা হচ্ছে। তারা চীন বা আশপাশের দেশ থেকে আসা যাত্রীদের যদি সর্দি হাঁচি বা কোনো অন্য লক্ষণ থাকে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। তবে গত ২০ জানুয়ারি থেকেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে আছে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জামান বলেন, বিমানবন্দরে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থায় আছেন তারা। যদিও চট্টগ্রামের সঙ্গে চীনের কোনো সরাসরি ফ্লাইট নেই, তবুও চীন থেকে অন্য কোনো দেশ হয়েও কেউ আসার তথ্য পেলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এদিকে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চট্টগ্রামের তিনটি হাসপাতালে পৃথক বিশেষায়িত কক্ষ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে পৃথক তিনটি বিশেষায়িত কক্ষ চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি। প্রতিটি কক্ষে পাঁচটি করে শয্যা থাকবে। উপজেলার হাসপাতালগুলোকেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পৃথক কক্ষ চালুর কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।
তিনি বলেন, আপাতত চট্টগ্রামে বসবাসরত চীনের নাগরিকদের তাদের দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করার জন্য বলা হয়েছে। আপাতত কেউ যেন চীনে না যান। যদি চীন থেকে কেউ আসেন তাদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে যাওয়া-আসা করেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া গত দুই সপ্তাহের মধ্যে কেউ চীন থেকে এসেছে কি-না বা চীনে গেছেন কি-না সেই তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, নৌবন্দর, স্থলবন্দরসহ যেসব প্রবেশপথ আছে তার সবগুলোতেই স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। দূর থেকে কিংবা সরাসরি শরীর থেকে তাপমাত্রা নেয়া, সর্দি-কাশি, হাঁচিসহ অন্যান্য কোনো উপসর্গ আছে কি না সেটা দেখা হবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় গত মঙ্গলবার থেকে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এরআগে সোমবার করপোরেশন এবং বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
সূত্র: বিএনএ
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













