৪ নভেম্বর ২০২৫

চসিক নির্বাচন : দলীয় মনোনয়নে ভাগ্য খুলবে কার !

তারেক মাহমুদ »

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে এখানকার রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ততই বাড়ছে। অনেকটাই উল্টো পাল্টা হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীর হিসাব নিকাশ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে অন্যরকম আবহ। ভোটের লড়াইয়ের আগে মনোনয়ন নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। সঙ্গে প্রার্থী নিয়েও।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন থাকছেন নাকি নতুন কাউকে আনা হচ্ছেন তা জানা যাবে ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার। ওইদিন মনোনয়ন বোর্ড এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

তবে গুঞ্জন রয়েছে যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এবার আ জ ম নাছির উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তার জায়গায় বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে আনা হচ্ছে। কিন্তু নওফেল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার আগ্রহ নেই।

তিনি বাংলাধারাকে বলেন, ‘আমার নেত্রী আমার অভিভাবক শেখ হাসিনার প্রতি আমার আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। আমার প্রিয় নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে সেটা ভিন্ন কথা। আমার বাবার অবর্তমানে আমার অভিভাবক প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু চট্টগ্রামের মেয়র হবার আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।

তবে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মেয়র পদে এখন পর্যন্ত ১৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিশাল বিশাল শোডাউন নিয়ে আনন্দ-উৎসবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে। কিন্তু শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল মনোনয়ন নেন নি। যারা ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যে- বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ মো. আবদুচ ছালাম, চট্রগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খুরশিদ আলম সুজন, চট্রগ্রাম মহানগর আওয়ামী সাবেক নেতা ও সাবেক প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার ছেলে মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের আহ্বায়ক মো. ইউনুস, সাবেক প্যানেল মেয়র রেখা আলম, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, সদ্যপ্রয়াত চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মাইনুদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন, মো. ইনসান আলী।

এদের মধ্যে কেউ কেউ কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নজরে আসতে বিভিন্ন তদবির করছেন। দলীয় মনোনয়নপত্র কেনার সময় রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পাবেন তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দা রিপোর্ট, দলীয় রিপোর্টসহ বিভিন্ন রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হবে। স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী সম্পর্কে আলাপ-আলোচনার পর মনোনয়ন দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেছেন, রাজনীতিতে যারা বিতর্কিত তাদের সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। যাদের অপকর্মের কোনো রেকর্ড নেই তারা মনোনয়ন পাবেন। মনোনয়ন দেওয়া হবে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে।

তবে আলোচনায় কে হচ্ছে নৌকার মাঝি। কেউ বলছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আবার কেউ বলছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। তবে দলীয় হাইকমান্ডের মতে, গত নির্বাচনে ইশতেহার অনুযায়ী মেয়র আ জ ম নাছির তার দেয়া অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করতে পারেন নি। তাই এবার বাদ পড়তে পারেন মেয়র নাছির। সে ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজের রেজাউল করিম চৌধুরীর নাম উঠে আসছে বার বার। 

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগের ২৫ বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে উন্নয়ন কাজ হয়েছে দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকার। আমি মেয়র হওয়ার পর গত সাড়ে চার বছরে হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকার কাজ। অনুমোদন হয়েছে আরও আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এছাড়া ছয় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প জমা আছে। মোট কথা, আমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একটি টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছি। সে ভিত্তিতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবারও দলীয় মনোনয়নের পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

মনোনয়ন প্রত্যাশী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মেয়র নির্বাচন করাটা এক রকমের চ্যালেঞ্জ। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি কিন্তু তা নির্ভর করবে প্রধানমন্ত্রী চান কি না। সব কিছু দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। আশা করছি নেত্রী আমার প্রতি আস্থা রাখবেন।

সাবেক সিটি মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা মনজুর আলম এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এ বিষয়ে মেয়র মনজুর আলমের পুত্র সরওয়ার আলম বলেন, নির্বাচন করার জন্য আমরা পারিবারিকভাবে প্রস্তুত আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে দলীয় ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মনজুর আলম তিন দফায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর (কমিশনার) ছিলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালে বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়রেরও দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১০ সালের নির্বাচনে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ ভোট পেয়ে নিজের রাজনৈতিক গুরু এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর।

মনোনয়ন প্রত্যাশী খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে এবং সেখানে দু’জন জনপ্রিয় প্রার্থী ছিল বলে তারা জিতে এসেছেন। অনুরূপভাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনও নিরপেক্ষভাবে হবে এবং এখানেও জিততে হলে জনভিত্তি ও জনপ্রিয়তা আছে এমন প্রার্থী দেওয়া প্রয়োজন। সেই বিবেচনা করা হলে আমি সবার চেয়ে এগিয়ে আছি। কারণ আমার চেয়ে জনসম্পৃক্ততা বেশি চট্টগ্রামে এমন কোনো নেতা নেই। মহিউদ্দিন ভাই যে ১৭ বছর মেয়র ছিলেন, আমি ছিলাম উনার নিবিড় সহচর। এই নগরীর নাড়ি-নক্ষত্র আমার জানা আছে। সার্বিক বিবেচনায় আমি মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি।

২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ জন এবং নারী ভোটার ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন। এবার প্রায় দেড় লাখ ভোটার বাড়তে পারে। এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩ ভোট। ভোটের হার ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ। নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী হাতি প্রতীকের আ জ ম নাছির ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ মনজুর আলম কমলা প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি শপথ নেন ৬ মে। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতায় মেয়র দায়িত্ব নেন ওই বছরের ২৬ জুলাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনে ২০২০ সালের ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ