তারেক মাহমুদ »
আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব সকলের মাঝে আনন্দ বয়ে আসে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ নির্বাচন। প্রার্থীরা সকলেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচিত হলে কি ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড করবেন এ নিয়ে ইশতেহারে নানা ধরনের কথার ফুলঝুরি ছুড়ছেন। তবে জনসংযোগ করতে গিয়ে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে আলিঙ্গন ও করমর্দন করা থেকে বিরত থাকছেন প্রার্থীরা।
প্রার্থীরা ছাড়াও প্রার্থীদের নিকট আত্মীয়রাও প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। হাট বাজার থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার প্রতিটি বাসায় বাসায় ভোটারদের দোরগোড়ায় গিয়ে নিজেদের জন্য ভোট খুঁজছেন প্রার্থীরা। এছাড়া প্রার্থীদের প্রতীক সংবলিত নানা ধরনের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে শহরের অলি গলি ছেয়ে গেছে। চলছে নানা মুখরোচক স্লোগান সংবলিত মাইকিং। প্রচারণাকারীরা সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানা ধরনের রসালো স্লোগানও দিচ্ছেন। এছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতেও চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। ফোন ম্যাসেজ, ফেসবুকসহ আরো বিভিন্ন মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে।
প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছেন। কোন মৃত ব্যক্তির জানাযার খবর পেলেই সেখানে ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। উপস্থিত হয়ে শোক জানানোর পাশাপাশি নিজেরে জন্য ভোট চাইতেও ভুল করছেন না।
নগরবাসীর মাঝেও শুরু হয়েছে নির্বাচনি গুঞ্জন। পাড়া-মহল্লায় ঝড় উঠেছে চায়ের কাপে। নির্বাচনী নানা দিক নিয়ে চলছে যুক্তি তর্ক। বিশেষ করে কে কে জয়লাভ করবে, কে জয়লাভ করলে ভাল হবে মূলত এসব বিষয় নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা জল্পনা-কল্পনা।
এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে উকি-ঝুকি মারছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। এ নিয়ে বাংলাদেশসহ অস্থিরতায় সময় কাটাচ্ছে সারাবিশ্ব। সব প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে আলিঙ্গন বা করমর্দন করা থেকে নিজেদের বিরত রাখছেন প্রার্থীরা। গতকাল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদার সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মেয়র প্রার্থীরা যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার আহবান জানান।
ভোটাররা বলছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসন হবে। নির্বাচন কমিশনও একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে অতীতের নির্বাচনের গ্লানি মুচবে। নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। আসন্ন সিটি নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার সকল ব্যবস্থাই সরকার ও নির্বাচন কমিশন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে কাম্য যে তারাও একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে।
ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বাংলাধারাকে জানান, সিটি কর্পোরেশন এককভাবে নগরীর উন্নয়নের কাজ করতে পারে না। মেয়রের আসনটি কোন ব্যক্তি বা দলের একক বিষয় নয়। জনগন তাদের ভোট দিয়ে যাকে এ চেয়ারে আসীন করবে, তিনি কেবল মাত্র ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করবেন নগরবাসীকে সেবা প্রদানের জন্য। সুতরাং স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র একজন যোগ্য ব্যক্তি হবেন এটাই প্রত্যাশা করি। সে হোক যে দলেরই। তবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে যে বা যারাই জয়ী হোন না কেন পরিস্কার পরিছন্নতা, মশা নিধনসহ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিয়ে নগরবাসীকে সেবা দিবেন এটাই আশা করি।
শিক্ষক আবদুর রশিদ জানান, চসিক নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীদের মুখ্য কাজ হবে জনগনকে ভোট দানে উৎসাহিত করা। তা না হলে ঢাকার মতো চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচন হবে অনেকটাই ভোটারবিহীন।
স্থানীয় সবজি বিক্রেতা নুরুল গাজী বলেন, করোনা আতঙ্কে কোথাও জনসমাগম দেখলে সেখানে এখন যেতেই ভয় লাগে। সেক্ষেত্রে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে জনসমাগম হবে এটাই স্বাভাবিক। ভোট দিতে যাবো কিন্তু করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে আছি।
চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে নানা সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। রাস্তাঘাটের ভাঙন, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ করে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি। নদী নালা দূষণ, ভরাট, দখল, মাদকের অগ্রাসন, যানযট, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংকটসহ আরো নানা সমস্যা চট্টগ্রামবাসীর গলার ফাঁস হয়ে আছে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় শহরের প্রায় এলাকা। এবারের নির্বাচনে নতুন প্রার্থীদের এ নিয়ে রয়েছে বিশেষ প্রতিশ্রুতি।
এদিকে, সরব হয়ে উঠেছে পুরো নির্বাচনী পরিবেশ। সিটি প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকার এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত। জনসমর্থন আদায়ে দিচ্ছেন এলাকার উন্নয়ন ও এলাকাবাসীর সেবার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। প্রার্থীরা জনসমর্থন আদায়ে নিজেকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরছেন এবং ভোট কামনা করছেন।
সাধারণ জনগণ চায় শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী একটি নগরী। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের এ চাওয়া গুরুত্ব সহকারে নেবে। এ সিটি নির্বাচনের পরেও এ পরিবেশ বজায় থাকবে এবং সমঝোতা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক সংকট সমাধান করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন নগরবাসী।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













