২৯ অক্টোবর ২০২৫

নিস্তব্ধ নিরবতায় সিআরবি

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

নগরীর সুশীতল ছায়া ও বাতাসঘেরা উন্মুক্ত একটি স্থান সিআরবি’র শিরীষতলা। যেখানে বন্ধের দিনগুলোতে ছোট-বড় নানান বয়সীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে স্থানটি। অথচ আজ শনিবার বন্ধের দিনেও সেখানে নেই মানুষের আনাগোনা। করোনার ভয়াল থাবায় লোকে লোকারণ্য থাকা সিআরবি হয়ে গেল জনশূণ্য, নিস্তব্ধ, নিরব। এমন দৃশ্য দেখা যায়নি বিগত ৫০ বছরেও।

সিআরবি এলাকার বয়োবৃদ্ধ আবুল মনসুর বাংলাধারাকে জানান, এক সময় চট্টগ্রামের সিআরবি সাতরাস্তার মোড়, শিরিষতলা সহ আশেপাশের সড়ক ও বিভিন্ন এলাকা কী অবস্থা ছিলো তা বলার মত নয়। বর্তমানে সিআরবির দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন কীভাবে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখানে পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন  বলি খেলা, বই মেলা, পিঠা উৎসবসহ বিভিন্ন ধরণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সি আর বি কবিতা প্রেমিক, কবি সাহিত্যিক সহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের আড্ডাস্থল। পাহাড়ি পরিবেশে আঁকা বাকা রাস্তা আর অনেক শতবর্ষী বৃক্ষ দেখতে ছিমছাম ছবির মতো, এখানের প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কারো মন ভুলিয়ে দেবে।

তিনি বলেন, একসময় পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র দেখা যেত এখান থেকে। অথচ চীন, ইতালি ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ভয়াল থাবা মেরে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে আমাদের দেশে। একটা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে নগরবাসী জীবন-যাপন করছে। আর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সিআরবি তে হয়ে গিয়েছে জনশূণ্য। সে চিরচেনা সিআরবি দেখে কেমন যেন অচেনা মনে হচ্ছে। যেদিকে তাকিয়ে দেখি কোথাও কেউ নেই।

শুক্রবার সিআরবি থেকে তোলা ছবি ; ছবি : নাজিম উদ্দীন এ্যানেল

সিআরবি এলাকায় অবস্থিত রেস্টুরেন্ট ‘তাসফিয়া গার্ডেন’ এর পরিচালক নাজিম উদ্দীন এ্যানেল বাংলাধারাকে জানান, সিআরবিতে সব সময় লোকে লোকারণ্য থাকে। নানা বয়সী মানুষ এসে এখানে আড্ডা দেয়। তরুণরা গিটার ও ভরাট কণ্ঠে তুলতো সুর। অথচ করোনার কারণে আজ কোন সুর নেই, জনমানব নেই। সকলের মনে একটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে। আমি পাঁচ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। এমন চিত্র আগে কখনো দেখি নি।

চট্টগ্রামের সিআরবি ভবন এবং সাত রাস্তার মোড় সহ শিরীষতলা ঘিরে বর্তমান সময়ে চট্টগ্রাম সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র।

শুক্রবার সিআরবি থেকে তোলা ছবি ; ছবি : নাজিম উদ্দীন এ্যানেল

সি আর বি, সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসনামলে নির্মিত একটি দৃষ্টিনন্দন ভবন। যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭২ ক্রিস্টাব্দে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পুরাতন ভবনগুলোর একটি এটি।

১৭৬৪ সালে ব্রিটিশ শাসকরা চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ নবাব মীর কাসিমের কাছ থেকে নেয়ার পর তাদের প্রশাসনিক কাজগুলি সহজলভ্য করার জন্য বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করেছিলো, সিআরবি ঐ ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সি আর বি’র সামনেই দেখতে পাবেন পুরোনো ব্রিটিশ আমলের ডেমো ট্রেন যা সকলেরই নজর কাড়বে। তার ঠিক পাশেই আছে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতি স্থাপনা। রয়েছে অপুর্ব স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হাতি বাংলো।

চট্টগ্রামের পুরনো ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সিআরবি। নবাব মীর কাশিমের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলের পর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত এই এলাকায় শাসন করেছে ব্রিটিশরা । তখন প্রশাসনিক কাজে যে ভবন গুলো তৈরি করা হয়েছিল,কেন্দ্রীয় রেলওয়ে বিল্ডিং তার একটি । ২০ একর জায়গা নিয়ে সিআরবি ভবন এলাকা । প্রায় চার লাখ বর্গফুট ভবনটির আয়তন ।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন