১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

দিনে অচেনা নগরী, রাতে ভুতুড়ে

ফেরদৌস শিপন »

দিনের আলোতে ছিল জনমানবহীন এক অচেনা নগরী। আর সন্ধ্যার নিয়ন আলোর ছায়ায় এক ভুতুড়ে নগরীতে রূপ নিয়েছে সদা কর্মব্যস্ত বন্দরনগরী। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ১০ দিনের ছুটি। এ ছুটি সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং আদালতের জন্য প্রযোজ্য। সরকারের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিদের্শনা অব্যাহত থাকবে। তবে সংবাদপত্র, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ওষুধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, পচনশীল পণ্য পরিবহন-এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে। আজ থেকে কাউকেই রাস্তায় থাকতে দেওয়া হবে না, থাকলেও পড়তে হবে জেরার মুখে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তৃতির ঝুঁকি বিবেচনায় বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দিনভর সারাদেশে কার্যক্রম চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এরমধ্যে কোথায়ও মাইকিং করে বাইরে অযথা চলাচলরতদের ঘরে ঢুকানো, একজনের বেশি একসঙ্গে চলাচল না করা, রিকশায় একজনের বেশি না ওঠা নিশ্চিত করা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো ছিল। সাধারণ মানুষও এসব কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

রাতের ফাঁকা নগরী। ছবি : মোহাম্মদ আলী মুরাদ।

প্রধান সড়কের অধিকাংশ দোকানগুলো বিকেলের পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় কর্মব্যস্ত মানুষের সাথে সাথে কমে যায় সবধরণের পরিবহনও।

দু-চারটি বাস-গাড়ির সশব্দে ছুটে চলা, রিকশার টুং টাং শব্দ, কিছু লোকের হেঁটে চলা এই ছিল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ এলাকার চিত্র। প্রতিদিন যেসব এলাকা হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল, কালো ধোঁয়া আর যানজট যে স্থানটিকে প্রায়ই স্তব্ধ করে তোলে, যেখানে মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসতটুকু নেই, সেসব এলাকাও সন্ধ্যার পর ভুতুড়ে পরিবেশে রূপ নেয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তররের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদেশ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তির অবস্থান নির্ণয় ও তাদের নিজ নিজ অবস্থানে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাই হবে সশস্ত্র বাহিনীর মূল লক্ষ্য।

শহরের সড়ক, অলি-গলিতে টহল দেওয়া ছাড়াও সচেতনতামূলক মাইকিং এবং সিভিল প্রশাসনের কাজে সহায়তা করছেন তারা।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা পেয়ে সন্ধ্যার পর বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে নগরের অধিকাংশ দোকানপাট। শুধু খোলা রাখা হচ্ছে কয়েকটি ওষুধ এবং মুদির দোকান।

বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ থেকে আজানের আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে জনগণকে সচেতনতার বার্তা দিতে আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। বন্ধ রাখা হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানও।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সড়কে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হলে তাকে বাসায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনাসহ প্রশাসনকে সহায়তা করছেন সেনাবাহিনী।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নেতৃত্বে উপজেলাগুলোতে এবং নগরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছেন।

কোনো জায়গায় অধিক লোক যাতে জড়ো হতে না পারে, ৫-৭ জনের বেশি লোক যাতে জড়ো না হয় এবং জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজন যাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে চলাফেরা করে- সেটা নিশ্চিত করছে সেনাবাহিনী।

এদিকে সড়কে সেনা সদস্যদের এমন টহল দেওয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। কাজিরদেউরির মুদি দোকানি সাব্বির আহমেদ বলেন, সেনা সদস্যরা মাঠে থাকার কারণে লোকজন বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে। কেউ অকারণে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। মানুষ স্বস্তিবোধ করছে। তারা থাকলে ফাঁকা শহরে অপরাধের ঝুঁকিও কমে যাবে।

এদিকে ট্রেন ও বাস সার্ভিস বন্ধ থাকায় নগরজুড়ে বিরাজ করছে নীরবতা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন পরিবহনে জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা।

প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্ত ৪৪ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাতজন। আক্রান্ত বাকিদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনের আছেন। বেশিরভাগই আছেন রাষ্ট্রীয়ভাবে আইসোলেশনে। নতুন আক্রান্ত পাঁচজনের মধ্যে একজন বিদেশ থেকে এসেছেন। তিনজন সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সবাই পুরুষ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৪।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা গেছে। এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯২০ জনের নমুন পরীক্ষা করা হলো।’

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চারজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মোট ১১ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। এছাড়া পাঁচজন মারা গেছেন। আর বাকিরা হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ