৩০ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামে ত্রাণ বিতরণে চলছে স্বজনপ্রীতি ও ফটোসেশন!

তারেক মাহমুদ » 

করোনাভাইরাসের প্রকোপের পর থেকে স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। এর সঙ্গে অসহায় হয়ে পড়েছে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। গচ্ছিত তহবিল শেষ হতেই পরিবারে শুরু হয়েছে আর্থিক অনটন।

ইতিমধ্যে দরিদ্র শ্রেণির মানুষগুলো তিন বেলার পরিবতর্তে দুই বা একবেলা আহার করতে শুরু করেছেন। নিম্ন মধ্যবিত্তরা অন্যের কাছে হাত পাততে না পেরে পড়েছেন উভয় সংকটে। আপদকালীন সংকট সামাল দিতে সরকার ও শাসক দলের ত্রাণ বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও মাঠে নেই অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, যতটুকু দান-ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তার সবই মুখ দেখে। আবার যেখানে যেখানে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা নিয়েও চলছে ধুমসে ফটোসেশন। যা ইতোমধ্যে সোস্যাল মিডিয়া প্রতিনিয়ত ফুটে উঠছে।

জানা গেছে, করোনার ভয়ে চট্টগ্রামের গত ২৬ মার্চ থেকে প্রায় সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। জনমানব শূন্য হয়ে পড়েছে নগরী। রিকশা ও কয়েকটি ব্যাক্তিগত গাড়ি চলাচলও একেবারে সীমিত। বন্ধ রয়েছে চাসহ অন্য দোকানপাট।

চট্টগ্রামে একজন মেয়র, ৪১ জন কাউন্সিলর, ১৬ জন সংসদ সদস্য, একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ১৫ জন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এসব এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানরা রয়েছেন। তারা সবাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হলেও হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া তাদের অনেকেই করোনা সংকটের সময় মাঠে নেই। দেশব্যাপী ভাইরাস আতঙ্কের পর থেকে অনেকের হদিসও পাওয়া যাচ্ছে না। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ দেখা গেছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, ৩১ মার্চ নগরীর ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে তাহের নাহার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের মাঝে দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার বিতরন করেন কোতোয়ালি আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

একই দিন দুপুরে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নগরীর আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। এ সময় উপমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জরুরিভিত্তিতে কিছু সংকট মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। ন্যূনতম সুযোগের মধ্যে করোনা আক্রান্তদের যতটুকু সম্ভব সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ারও নির্দেশ দেন উপমন্ত্রী।

তবে এখানকার সংসদ সদস্যের অনেকেই নিজে বা তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রানসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

এদিকে মিডিয়ায় ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়ে গত মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) ঘর থেকে ত্রাণ কর্মসূচীতে বেরিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা। তাও হাতেগোনা কয়েকজন।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে। পাশাপাশি নৌ-বাহিনী ও র‌্যাব-৭ কর্মসূচি আকারে খাদ্য বিরতণ করেছে। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজ ও ব্যক্তি উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে। কিন্তু এ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে মুখ চিনে চিনে। যারা ওই জনপ্রতিনিধির কাছের লোক, তারাই নামের তালিকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রতিনিধির কাছের লোক না হলে তাদের ভাগ্যে সিটি করপোরেশনের ত্রাণ জুটছে না।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বাংলাধারাকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত হলো কোনো অসহায় মানুষ না খেয়ে থাকবে না। মুখ চিনে কাউকে ত্রাণ সামগ্রী দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেকেই এ ধরনের কাজ করছে বলে আমরা শুনেছি। তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে।’

২৪ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদের কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক বাংলাধারাকে বলেন, আমরা এলাকার জনগণের পাশে দাড়িয়েছি। এর মধ্যেই করপোরেশন থেকে বিতরণের জন্য খাদ্যসামগ্রী পাবো। করপোরেশন থেকে যা পাবো সব জনসাধারণের মাঝে সমভাবে বন্টন করে দেব। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও মানুষকে সাধ্যমত সহযোগিতা করে যাচ্ছি। জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাধারাকে জানান, আমরা সম্প্রতি একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছি। এই সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত নানা দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরাও সে মোতাবেক কাজ করছি। জনসচেতনতা বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অসহায় মানুষদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের নেত্রী গতকাল ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ যদি এই দু:সময়ে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি করে তিনি কাউকে ছাড় দিবেন না। তাই সকলে সততার সাথে এই খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে সে আশা করছি।

চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে মঙ্গলবার খানখানাবাদ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধূরী ও সাধারন সম্পাদক জসীম হায়দার করোনা ভাইরাসের আতংকে থাকা হতদরিদ্র অসচ্ছল পরিবারকে মানবিক তহবিল থেকে তাদের নিজ নিজ বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল, আলু, তেল, সাবান ইত্যাদি বিতরন করেন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন